ভারতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ১৬০ বছরের পুরোনো টেলিগ্রাম সার্ভিস। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) এই সেবা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
যদিও এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার টেলিগ্রাম পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারকে এই খাতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসান কমাতে গতবছরই টেলিগ্রাম চার্জ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছিল। তবে তা যথেষ্ট ছিল না।
ভারতের টেলিগ্রাম সার্ভিস ছিল বিশ্বের সর্বশেষ সবচেয়ে বৃহত্তম টেলিগ্রাম সার্ভিস। আগামী ১৫ জুলাই ২০১৩ তারিখে এটি বন্ধ হয়ে যাবে।
ভারতে টেলিগ্রাম সার্ভিসের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৮৫০ সালে এই সার্ভিস চালু হয়েছিল। আর প্রথম টেলিগ্রাম পাঠানো হয় কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবারে। দুটি জায়গার মধ্যে দূরত্ব ছিল ৫০ কিলোমিটার।
সরকারি এই সেবার পতনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন ব্লগার এবং সাংবাদিক শিভাম ভিজে:
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি যখন সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছে, সেই বছরে তারা ভারতের ৪৫ হাজার অফিসের মাধ্যমে ৬০ মিলিয়ন টেলিগ্রাম আদান-প্রদান করেছিল। আজ তাদের সর্বসাকুল্যে অফিস সংখ্যা ৭৫টি। সেগুলোর অবস্থান আবার ভারতের ৬৭১টি শহরজুড়ে। একদা এই শিল্পে যেখানে ১২ হাজার ৫০০ কর্মী নিয়োজিত ছিলেন, এখন সেখানে কাজ করছেন ৯৯৮ জন কর্মী।
ভবিষ্যতে এই শিল্প নিষ্প্রভ হয়ে যাবে, তা পাঁচ বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ব্লগার ও সাংবাদিক সিডিন ভাডুকুট। নতুন প্রযুক্তি এসে টেলিগ্রামকে বাহুল্য করে দিবে এবং সার্ভিসটি ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই টেলিগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেছেন।
আশা পেরিনচেরি, তার ব্লগের সেই সোনালি ইতিহাসের কথা স্মরণ করে লিখেছেন:
এমনকি ১৯৮৩ সালে আমার যখন বিয়ে হয়, স্পষ্ট মনে আছে খুব কাছের একজনের কাছ থেকে একমাত্র টেলিগ্রামটি পেয়েছিলাম। সে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসতে না পারার কথা জানিয়েছিল।
মিশেল নামের একজন মোবাইল মার্কেটিং ওয়াচে দাবি করেছেন, এসএমএস এবং মোবাইল ফোন আনুষ্ঠানিকভাবে টেলিগ্রামের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। ৯০০,০০০ জনের বেশি ভারতীয়ের নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে। এবং ১২০ মিলিয়ন ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
মিডিয়া কোম্পানি এমএক্সএম ইন্ডিয়া লিখেছেন:
প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আমরা বিভিন্ন টিএস-এর মৃত্যু দেখেছি। প্রথমটা ছিল ট্র্যাঙ্ক কল। এরপরে টেলেক্স এবং টেলিপ্রিন্টার। আর এখন দেখলাম টেলিগ্রাফ।
টেলিগ্রাম বন্ধ হওয়ায় ঘোষণায় টুইটারে অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। টুইটার ব্যবহারকারী টিকে (@TeeKay_Inc) লিখেছেন:
@TeeKay_Inc: একটা যুগোর সমাপ্তি। থামো। ভারত টেলিগ্রামকে ছেঁটে ফেললো। বন্ধ করো।
হিন্দুস্তান টাইমসের সাংবাদিক মাধবন নারায়ণ (@madversity) স্মার্টফোন এবং টেলিগ্রামের খরচের মধ্যেকার বিপরীত চিত্র তুলে ধরে লিখেছেন:
@madversity:১৯৬০/৭০ সালে উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতে দু'শব্দের টেলিগ্রাম পাঠাতে খরচ হতো ১০ রূপী। আর এখন আমরা ভিডিও কল করি প্রায় বিনাপয়সায়।
প্রযুক্তিবিদ মানসআরএম (@ManasRM) এই সার্ভিসের প্রশংসা করে লিখেছেন:
@ManasRM: শান্তিতে থাকো ভারতীয় পোস্ট টেলিগ্রাম সার্ভিস- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার দিনগুলোতে তুমি আমার কাছে কতইনা ভালো-মন্দ খবর পৌছে দিতে।
সারাবিশ্বের টেলিগ্রাম সার্ভিসের বর্তমান কী অবস্থা, তা এখানে দেখুন।
1 টি মন্তব্য
চমৎকার ।