পোস্টটি লেখকের মূল ব্লগ আজাডুলতে [1] দেখা যাবে।
২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে তুরস্কের টুইটার জগতে #ayagakalk (আয়াগাকাল্ক) হ্যাশট্যাগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর মানে হলো “রুখে দাঁড়াও”। এই আহবান এসেছিল একটি ছোট্ট আন্দোলনকারী দল থেকে। তারা তাসকিম স্কোয়ারের গেজি পার্ক বাঁচানোর জন্য এই আহবান জানিয়েছিল। সেখানে পার্ক তুলে দিয়ে শপিং মল বানানোর কাজ চলছিল। তখন পর্যন্ত কেউ-ই আশা করেনি, এই ছোট্ট ঘটনাই তুরস্কের ইতিহাসে এই বৃহৎ প্রতিবাদের জন্ম দিবে। ১০ এপ্রিলের ঘটনার প্রতিবাদ করতেই রাজপথে নেমেছেন টুইটার ব্যবহারকারী এজগি মেদ্রান [2]। তিনি ১৩ এপ্রিল পার্ক বাঁচানোর জন্য সবার স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নামেন:
@egedenizz [2] Taksim Gezi Parkı'nı kurtarmak için, imzalarınızı bekliyoruz! http://taksimicinayagakalk.com/ [3]#ayagakalk [4]@ayagakalktaksim [5] aracılığıyla
তাকসিম গেজি পার্ক বাঁচাতে আপনার স্বাক্ষর প্রয়োজন!
১৩ এপ্রিলে প্রতিবাদ কর্মসূচী শুরু হয় অনেকটা উত্সবের আমেজে। পরিবেশ আন্দোলনকর্মী বরিস জেন্সার বায়কান [6] লিখেন:
@yesilgundem [6] Taksim Gezi Parkı'na binlerce kişi sahip çıkıyor #ayagakalk [4]@ayagakalktaksim [5]pic.twitter.com/X6dek5HvnG [7]
তাসকিম গেজি পার্কে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন।
এই সময়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো ধরনের সংঘর্ষ হয়নি। মে মাসের ২৭ তারিখে একই কারণে অন্য একটি বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। এদিন কিছু বিক্ষোভকারী নির্মাণকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে গেজি পার্ক দখল করে নেয়। সোশ্যাল মিডিয়া টিম 140journs [9] টুইটারে আন্দোলনের একটি ছবি শেয়ার করে। সেখানে বলা হয়েছে:
@140journs [9] Taksim Gezi Parkında dün gece başlatılan yıkım çalışmalarına karşın geceden itibaren nöbet tutuluyor.
#ayagakalk [4]pic.twitter.com/1ZVUpkgxkX [10]
তাসকিম গেজি পার্ক ভাঙ্গার কাজ সত্ত্বেও গত রাতে আন্দোলনকারীরা সেখানে পাহারা দিয়েছে।
দুটো ঘটনা ঘটার পরে আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ঘটনাটি হলো, অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর ওপর পুলিশের কাঁদানো গ্যাস হামলা। [12] ছবিটি তোলেন রয়টার্সের ফটোগ্রাফার ওসমান ওরসাল। পরেরটি ছিল পুলিশের আন্দোলনকারীদের তাঁবু পুড়িয়ে দেয়া। ইউটিউবে [13] তাঁবু পুড়িয়ে দেয়ার ভিডিওটি রয়েছে।
এই দুই ঘটনার পরেই টুইটারে জনপ্রিয় #direngeziparki হ্যাশট্যাগ চালু হয়। এর অর্থ হলো গেজি পার্ক প্রতিহত করো। আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচী সমর্থন জানিয়ে এই হ্যাশট্যাগ অনুসরণ করেন। আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি জানাতে এগিয়ে এসেছেন তুরস্কের তারকা অভিনেতা মামেত আলী অ্যালাবোরা। সেলিব্রেটি হিসেবে তিনিই প্রথম অভিনেতা, যিনি আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মা জানান। তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে [14] বলেন:
@memetalialabora [14] Mesele sadece Gezi Parkı değil arkadaş, sen hâlâ anlamadın mı? Hadi gel. #direngeziparkı [15]
বন্ধুরা, এটা শুধুমাত্র গেজি পার্কের বিষয় নয়। আপনারা এখনও কেন জেগে উঠছেন না? এখানে চলে আসুন।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানো গ্যাস এবং জল কামান নিক্ষেপ করে। পুলিশ ব্যাপকভাবে কাঁদানো গ্যাস ছোঁড়ে। আন্দোলনকারীদের শরীর লক্ষ্য করে কাঁদানো গ্যাস ছোঁড়া হয়। টুইটার ব্যবহারকারী অ্যালপের ওরাককি তাসকিম স্কোয়ারের সবচেয়ে বড়ো রাস্তা ইশতিক্লাল ক্যাডেসি-তে পড়ে থাকা অসংখ্য কাঁদানো গ্যাসের ক্যাপসুলের ছবি শেয়ার করেন:
@alperorakci [16] Gaz bombasi kapsulleri!!! pic.twitter.com/pEmVk9ZBcY [17]
কাঁদানো গ্যাসের ক্যাপসুল!
রয়টার্সের ফটো সাংবাদিক ওসমান ওরসাল কাঁদানো গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উল্লেখ্য, ওসমান লাল জামা পরিহিত নারী বিক্ষোভকারীর আইকনিক ছবিটি তুলেছিলেন। তুরস্কে ব্লুমবার্গের ব্যুরো প্রধান বেনজামিন হার্ভে লিখেছেন:
@BenjaminHarvey [19] ওসমান ওরসাল, ফটো সাংবাদিক। গতকাল ইস্তাম্বুলে তিনি এই ছবিটি তুলেছেন: http://bit.ly/11GaGa1 [20] আজকে তার অবস্থা এই: pic.twitter.com/8aU1vRZGjX [21]
আন্দোলনকারীরা ফেসবুক এবং টুইটারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়েছেন। মূলধারার পত্র-পত্রিকা পুরোপুরিই নিশ্চুপ ছিল। আন্দোলনকে তারা অগ্রাহ্য করেছেন। তাই মূলধারার পত্র-পত্রিকার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যাপক। টুইটার ব্যবহারকারী ফারুক এরমান [22] একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে তুরস্কের মূলধারার পত্র-পত্রিকার নীরবতার বিষয়টির উল্লেখ ছিল:
@farukerman [22] şu anda tv kanalları pic.twitter.com/DsfhVnz0CZ [23]
দেখুন, এখন টিভি চ্যানেলগুলো কী প্রচার করছে।
সংঘর্ষ চলাকালে সিএনএন-তুর্ক চ্যানেলে পেঙ্গুইনের ওপর তথ্যচিত্র প্রচার করায় অতিশয় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন:
@BenjaminHarvey [24] সত্যিই, সিএনএন-তুর্ক পেঙ্গুইনের ওপর শো প্রচার করছে।
তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টির সমর্থকরা সংঘর্ষের জন্য আন্দোলনকারীদের দায়ী করেছেন। টুইটারে তারা #oyunagelmeturkiyem হ্যাশট্যাগের অধীনে মন্তব্য করেছেন। এর মানে হলো, তুরস্ক, ফাঁদে পা দিয়ো না। টুইটার ব্যবহারকারী ক্যানান কুমাস [25] লিখেছেন:
@Canan_Hasret [25] তায়েপ এরদোগান কিছুই করেননি। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন তারা একটি পার্কের জন্য তার অপসারণ চায়। #oyunagelmetuerkiyem [26]
অনেকে তুরস্কের আন্দোলনকে আরব বসন্তের সাথে তুলনা করেছেন। তবে এর বিরোধীতা করে বনিআমিন হাকিমুলু বলেছেন:
@Benj_Kobsch [27] আন্দোলনকে তুরস্ক বসন্ত ভাববেন না। সরকার ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়েছেন। এই পার্থক্য সম্পর্কে সতর্ক থাকুন! #OyunaGelmeTürkiyem [28]
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যেও নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে। যেমন, দলের সিনেটর এবং সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী এলতুগরুল গুনাই [29] আন্দোলনকালীদের ওপর জোর-জুলুমের রাজনীতি করায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন:
@ErtugrulGunay [29]Fethin yıldönümünde Istanbul'da AVM yapmak için 75yıllık ağaçları kesmeye kalkanlar, ne Fatih Sultan'ı anlamışlar, ne de Yaradan'ın emrini!
ইস্তাম্বুলের বিজয় বার্ষিকীর সময়ে একটি শপিং মল নির্মাণের জন্য যারা ৭৫ বছর বয়সী গাছ কাটে, তারা হয় সুলতানাত, নয় ঈশ্বরের আদেশ বুঝতে পারে না!
দেশজুড়ে প্রতিবাদ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী তায়েপ এরদোগান শপিং মল নির্মাণ থেকে পিছু হটছেন না। তিনি তার টুইটারে [30]বলেছেন:
@RT_Erdogan [30]Muhalefetin 100 bin kişi topladığı yerde biz 1 milyon kişi toplarız ama bizim böyle bir derdimiz yok.
আমরা চাইলে এক মিলিয়ন মানুষ জমায়েত করতে পারি। সেখানে বিরোধী দল কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত করেছে। কিন্তু আমরা এই ধরনের কাজ করবো না।