সৌদি আরবে হত্যা এবং ডাকাতির অভিযোগে পাঁচ ইয়েমেনি নাগরিকের শিরচ্ছেদ করা হয়েছে। শিরচ্ছেদের পর তাদের মৃতদেহ জনসম্মুখে ঝুলিয়ে রাখা হয়। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর জিযানে এ ঘটনাটি ঘটে।
জনশ্রুতি রয়েছে, শিরশ্ছেদ হওয়া এই মানুষগুলো একটি ডাকাত দলের সদস্য। এই নিয়ে এ বছরে সৌদি আরবে শিরচ্ছেদ করা লোকের সংখ্যা ৪৭-এ দাঁড়ালো। মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী সৌদি আরবে হত্যা, ডাকাতি, মাদক পাচার, ধর্ষণ এবং ধর্ম ত্যাগ সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মধ্যে দিয়ে তারা মৃত্যুদণ্ড দানকারী দেশের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছে। সৌদি আরবের অবস্থান চতুর্থ। চীন, ইরান এবং ইরাকের পরেই তাদের স্থান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে।
২০১৩ সালের ২১ মে পাঁচজনের মৃতদেহ ক্রেনের সাহায্যে খোলা আকাশে ঝুলিয়ে রাখার ছবি ফেসবুকে, টুইটারে ছড়িয়ে পড়লে সবাই এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এদের মধ্যে অনেক ইয়েমেনিও রয়েছেন। নিজ দেশের মানুষের শিরচ্ছেদ হওয়া ছবি এভাবে ঝুলিয়ে রাখায় তারা যেমন পীড়িত হয়েছেন, তেমনি ক্ষুব্ধও হয়েছেন।
এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সৌদি অধ্যাপক এবং সম্পাদক বায়ান (@BintBattuta87)। তিনি তার হতাশার কথা টুইটারে লিখেছেন:
@BintBattuta87: ছবি: আজকে যে পাঁচজনের শিরচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের ছবি। তাদের মৃতদেহ এখন সৌদি'র রাস্তায় ঝুলছে। মাদারচোদ একটা দেশ, হায় আল্লাহ! pic.twitter.com/LwztwvfpAB
তিনি আরো লিখেন:
@BintBattuta87:
ছবি: #KSA: লোকজনের মৃতদেহগুলোর চারপাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। কেউ এ ঘটনার নিন্দা করছে না। এটাই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে মারছে: pic.twitter.com/za72LMdNDQ
ইয়েমেনের একজন আইনজীবী হাইকাল বাফানা (@Bafana3) রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখা মৃতদেহের ছবি টুইট করে মন্তব্য করেন:
@Bafana3: সৌদি আরব ডাকাতদের কীভাবে শিরচ্ছেদ করে এটা হলো তার ছবি। গতকাল #ইয়েমেনের পাঁচ নাগরিকের শিরচ্ছেদ করা হয়েছে। T#KSA https://www.facebook.com/haykal.bafana/posts/469019226511426 … pic.twitter.com/0NcWDxYBHc
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইয়েমেনি সাংবাদিক সানা২ আল-ইয়েমেন (@Sanasiino)কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন:
@Sanasiino: সৌদি আরব জিযানে পাঁচ ইয়েমেনি নাগরিকের শিরচ্ছেদ করেছে। তারপর তাদের ঝুলিয়ে রেখে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে। এরা আমাদের পুণ্যভূমির মানুষের শাসক। Spic.twitter.com/JP6QpnzXsE
সাংবাদিক এবং গার্ডিয়ান পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক সম্পাদক ব্রিয়ান হুইটেকার (@Brian_Whit) তার সাম্প্রতিক পোস্টের লিংক টুইট করেছেন:
@Brian_Whit: সৌদি আরবে শিরচ্ছেদের সংখ্যা বাড়লো। মুণ্ডুহীন দেহ রাস্তায় প্রদর্শিত হলো। http://bit.ly/YYULRz (http://al-bab.com)
এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে সারাবিশ্বে সৌদি আরবের ইমেজ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন:
সবার সামনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার একটা পরিষ্কার উদ্দেশ্য হলো, আর সবাইকে অপরাধ করতে নিরুত্সাহিত করা। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে শুধু সৌদি জনগণই নয়, সারাবিশ্বের মানুষজন দেখছে। আর এর মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি রাজাদের বর্বরতা নিয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হচ্ছে।
তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি মন্তব্য এতে যোগ করেছেন:
. অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে:
“সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিকমানের ন্যায়বিচার এবং বিবাদীদের সুরক্ষার বিষয়টি অবজ্ঞা করে। তাছাড়া তারা আসামীদের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টিও অস্বীকার করে। মামলার কী অবস্থা এবং আইনী প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতটুকু হলো সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য দেয় না।”
“শুধু নির্যাতন বা নানা ধরনের অত্যাচারের মাধ্যমে ‘স্বীকারোক্তি’ আদায় করে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।”
সুইডেনে বসবাসকারী ইয়েমেনি ব্লগার আফ্রেহ নাসের (@Afrahnasser) এই শিরচ্ছেদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনবাসীদের চ্যালেঞ্জ করার আহবান জানিয়েছেন:
@Afrahnasser: জনাব হাদী অথবা #ইয়েমেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেকোনো একজনকে আমি সাহস করে সৌদি আরব কর্তৃক পাঁচ ইয়েমেনি নাগরিকের শিরচ্ছেদের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব ইস্যু করার আহবান জানাই! http://afrahnasser.blogspot.com/2013/05/saudi-excutes-five-yemeni-men.html?