- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভবন ধসে শতাধিক পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু, সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, ব্যবসা ও অর্থনীতি, শ্রম

২৪ এপ্রিল বুধবার বাংলাদেশের একটি নয়তলা ভবন ধসে মারা গেছে ১০০ এর বেশি পোশাকশ্রমিক [1]। আহতের সংখ্যা আট শতাধিক। এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। আটতলা ওই ভবনে কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা ছিল। দুর্ঘটনার দিন ভবনে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কর্মী কাজ করছিলেন। রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারে এই ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারী দেশ [2]। তবে দেশটিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অপ্রতুল অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা নিয়মিত ভাবে ঘটে চলছে। মাত্র কয়েক মাস আগে তাজরীন গার্মেন্টসে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময়ে ১১২ জন পোশাকশ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যান (গ্লোবাল ভয়েসেস এর রিপোর্ট [3] দেখুন)।

সাভারে নয়তলা ভবন ধ্বসের চিত্র। বিপুল পরিমাণ মানুষ উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত। ছবি ফিরোজ আহমেদের। কপিরাইট ডেমোটিক্স (২৪/৪/২০১৩) [4]

সাভারে নয়তলা ভবন ধ্বসের চিত্র। বিপুল পরিমাণ মানুষ উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত। ছবি ফিরোজ আহমেদের। কপিরাইট ডেমোটিক্স (২৪/৪/২০১৩)

গার্মেন্টস শিল্পে বারবার দুর্ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকে হতাশা, ক্ষোভ লুকিয়ে রাখতে পারেননি। বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কর্মরতদের বেশিরভাগই নারী। তাদের উদ্দেশ্য করে ব্লগার ভাস্কর আবেদিন [5] ফেসবুকে লিখেছেন:

আহা বোন!
সুঁচ-সুতো দিয়ে কেবল নিজেদের মৃত্যু বুনে যাচ্ছো…

জয়দীপ দে শাপলু [6] ক্ষোভ লুকিয়ে না রাখতে পেরে লিখেছেন:

এতো লাশের ভিড়ে কেউ জীবিত থাকতে পারে না। আমি আপনি সব শালা লাশ… নইলে এতো লাশ পড়তো না এ দেশে…

আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছিল। সে সময়ই কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয় [7]। পরদিন শ্রমিকদের জোর করে কারখানায় [8] ঢোকানো হয়। মালিকপক্ষের এই দায়িত্বহীনতা সুমিমা ইয়াসমীন সুমী [9] কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না:

এতোগুলো মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হলো! এরকম দায়িত্বহীনতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম অ্যাক্টিভিস্ট লাকী আক্তার [10] সামহোয়্যারইন ব্লগে “শোক নয় প্রতিবাদ চাই” শিরোনামে লিখেছেন:

দাসপ্রথা নাকি বিলোপ হয়েছে বহু আগে কিন্তু আমরা তো দেখি দাস প্রথা নতুন ভাবে ফিরে এসেছে খুব ভয়ালভাবে, তা না হলে মৃত্যু নিশ্চিত-জেনেও শ্রমিকদেরকে পিটিয়ে পিটিয়ে কেন মৃত্যুকূপে পাঠানো হল? কেন মিথ্যা বেতনের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদেরকে কারখানায় আনা হল?

উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ। ছবি ফিরোজ আহমেদের। সর্বস্বত্ব  ডেমোটিক্স এর (২৪/৪/২০১৩) [11]

উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ। ছবি ফিরোজ আহমেদের। সর্বস্বত্ব ডেমোটিক্স এর (২৪/৪/২০১৩)

বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে পোশাক শিল্প থেকে। এটার উল্লেখ করে ইউকেএম তামান্না সুলতানা [12] ফেসবুকে লিখেছেন:

আমি লজ্জিত! একটা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যারা, তারা শয়ে শয়ে মরে গেলেও তেমন কিছু যায় আসে না। এই ঘটনা বার বার ঘটতে থাকে। বড় বড় ব্যক্তিগুলো সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারলেই হলো…

গার্মেন্টস শিল্পে অনেক দুর্ঘটনা ঘটলেও মালিক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো শাস্তি হয় না। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অপূর্ব সোহাগ [13] ফেসবুকে লিখেছেন:

এই দেশে মৃত্যু কোনো ব্যাপার না। এই দেশে সবচে’ সস্তা জিনিস হলো মানুষের প্রাণ! শুধু আজকে সাভারেই নয়, এর আগেও যখন গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অসংখ্য প্রাণ শেষ হয়েছে বা ভবন ধসে মানুষ মরেছে আমরা তখন শুধুই শুনে গেছি মালিকদের শাস্তি হবে। শাস্তি হয় কি না সেটা আর জানা হয় না। তবে একের পর এক সাভারের মতো ঘটনা ঘটছেই। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয় লাশের লাইন।

ধ্বংসস্কুপের ভেতরে চাপা পড়ে আছে এখনও অনেকে। ছবি ফিরোজ আহমেদের। সর্বস্বত্ব ডেমোটিক্স (২৪/৪/২০১৩) [14]

ধ্বংসস্কুপের ভেতরে চাপা পড়ে আছে এখনও অনেকে। ছবি ফিরোজ আহমেদের। সর্বস্বত্ব ডেমোটিক্স (২৪/৪/২০১৩)

ওয়ালমার্ট, এইচঅ্যান্ডএম, সিয়ার্স, গ্যাপ, টমি হিলফিগারসহ বিশ্বের নামকরা আরো অনেক ব্র্যান্ডের পোশাক বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় তৈরি হয়। যেগুলোতে লেখা থাকে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’, যা যেকোনো বাংলাদেশীর কাছে গর্ব। এ রকম ঘটনা ঘটতে থাকলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন জার্মানির ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম [15]:

পোশাক কারখানায় আগুন লেগে পুড়ে মরে শ্রমিক, পোশাক কারখানার ভবন ধসে চাপা পড়ে মরে শ্রমিক… লাশের মিছিল এভাবেই বেড়ে চলে। আগে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ দেখলে আগ্রহ ভরে কিনতাম। এখন কেমন যেন সেই লেখার মধ্যে রক্তের দাগ দেখতে পাই, মৃত্যুর আর্তনাদ শুনি।

ভবন ধসের ঘটনায় জাতীয় শোক [16] ঘোষণা করেছে সরকার। এদিকে ফেসবুকে আহতদের চিকিত্সায় রক্ত দেয়ার অনেককে আহবান জানাতে দেখা গেছে। এ আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকে রক্ত দিতে সাভারে ও অন্যত্র ছুটে গেছেন।

শাহবাগে রক্তদান কর্মসূচী। [17]

শাহবাগে রক্তদান কর্মসূচী। ছবি শাহবাগ মুভমেন্ট ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

টুইটারে বিভিন্ন খবর পাওয়া গেছে:

@শাহবাগইনফো [18]: শাহবাগে এ পর্যন্ত ৭০০ ব্যাগ রক্ত যোগাড় হয়েছে যার মধ্যে ৫০০ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এখন দরকার শুধু নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত।

ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন ফেসবুকের মাধ্যমে [19] স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করেছে উদ্ধারকার্যে সহায়তা করার জন্যে। ব্লগার বিষক্ষয়ের পোস্টে [20] দুর্ঘটনার ছবি দেখতে পাবেন।