তিন মাস বিরতির পর ১৮ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখ রাতে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন ইয়েমেনে আঘাত করে, যে ঘটনায় পাঁচজন সন্দেহভাজন আলকায়দা সদস্যকে নিহত হয়। টিবিআইজি [1] (দি বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন জার্নালিজম) –এর প্রদান করা সংবাদ অনুসারে ইয়েমেনে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ড্রোন হামলা সংঘঠিত হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে, যে ঘটনায় অন্তত সন্দেহভাজন সাতজন জঙ্গি নিহত হয়। এর ঠিক দুদিন আগে পুনরায় নির্বাচিত ২১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে [2], রাষ্ট্রপতি ওবামার শপথ নেওয়ার দিনে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ড্রোন ইয়েমেনে আঘাত হানে। উক্ত ঘটনায় সন্দেহভাজন চারজন আলকায়েদা সদস্য নিহত হয়।
গতরাতে ইয়েমেনের দাহমার [3] প্রদেশের ওয়েসসাব গ্রাম থেকে দেশটির একটিভিস্ট এবং সাংবাদিক ফারেস আল মুসলিমি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার এই সংবাদ ছড়িয়ে দেন, তিনি টুইট করেন:
@আলমুসলিমি [4]: এক ঘণ্টা আগে যখন আমি আমার কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সাথে [যাদের কয়েকজন দেশটির সরকারি কর্মকর্তা] রাতের খাবার খাচ্ছিলাম, এমন সময় সে দেশের ড্রোন আমার গ্রামে আঘাত হানে …
@আলমুসলিমি [5]: গত তিন মাস জুড়ে আমি এই কারনে এত আনন্দিত ছিলাম যে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা বন্ধ হয়েছে #ইয়েমেন। আমি জানতাম না তারা আমার গ্রাম থেকে আবার আক্রমণ শুরু করবে!
সাবা প্রদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার প্রদান করা সংবাদ বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার লক্ষ্য বস্তু ছিল আল রাদমি নামে পরিচিত হামিদ রাদমান আল মানয়ে ও তার চার দেহরক্ষী। সে সময় তারা তাদের ঘরে ফিরে আসছিল। সে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সালেহ-এর জ্যৈষ্ঠ সন্তান-এর সৃষ্টি অভিজাত রিপাবলিকান গার্ড বাহিনীর একজন সদস্য এবং পাশপাশি সন্দেহ করা হত যে সে আল কায়দার সাথে যুক্ত।
আল-মুসলিমি এর সাথে যোগ করেন:
@আল-মুসলিমি [6]: বিগত কয়েক বছর ধরে আল রাদমি ওয়েসসাব-এর বাইরে অবস্থান করছিল। গত বছর সে তার গ্রামে ফিরে আসে এবং জনগণের সামাজিক সমস্যা সমাধানের কারণে সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত লাভ করে। #ড্রোন
@আলমুসলিমি [7]: আল রাদমি সবসময় সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন এবং আজ রাতে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে মাগরেবের নামাজ পড়েন। ১/২ #ড্রোন
@আলমুসলিমি [8]: যখন তারা এলাকার এক সমস্যার সমাধান করে আসছিল, তখন স্থানীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের গাড়িটি আল রাদমির গাড়ির ঠিক পিছনেই ছিল।#ড্রোন
ইয়েমেনের অনেক নাগরিক বিস্মিত এই কারণে যে, কেন সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হতে হয় যেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তির বাসস্থান জানা। সেক্ষেত্রে তারা মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, কেন তাদেরকে ইয়েমেনের সেনারা ধরে না, জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যদি তারা দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে কেন তাদের শাস্তি দেওয়া হয় না। ওবামার কাছে কেন হত্যার বদলে, গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের তালিকা নেই। বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের পেছনে উদ্দেশ্য কি? আসলেই কি এই সব তথাকথিত সন্দেহভাজন ব্যাক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, অথবা ইয়েমেন কিংবা সৌদি আরবে তাদের শত্রু রয়েছে, যারা তাদের মৃত অবস্থায় দেখতে চায়?
আল মুসলিমি তার করা নীচের এই টুইটগুলো উল্লেখ করেছে:
@আলমুসলিমি [9]:যদি আল রাদমিকে গ্রেফতারের চেয়ে সহজ আর কিছু ছিল না। যখন তার উপর ড্রোন হামলা চালানো হয়, তখন সে মূলত সরকারি কর্মকর্তার সাথে ছিল!
@আলমুসলিমি [10]: ৩- আল রাদমি স্থানীয় পরিষদের নেতাদের সাথে সব সময় মিটিং ও জনগণের সমস্যার সমাধান করত এবং তাদের চাওয়া তুলে ধরত
@আলমুসলিমি [11]:৫- কেউ জানতো না, এমন কি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা, গর্ভনর, অথবা অন্য কেউ, যে হত্যার তালিকায় তার নাম আছে। নিরাপত্তা বিভাগের একজন এইমাত্র ফোনে আমাকে এই তথ্য জানালো।:১/২
@আলমুসলিমি [12]: ” যদি এক সপ্তাহের মধ্যে তার সাথে আমার সাক্ষাত হত, তাহলে আমি হয়ত তাকে গ্রেফতার করতাম, অথবা এমনকি এই কাজটি করার জন্য আমার সবচেয়ে দূর্বল সেনাদের পাঠাতাম।” ২/২ #ইয়েমেন #ড্রোনস
অন্য অনেক ইয়েমেনির মত আল মুসলিমি হচ্ছে সেই সমস্ত নাগরিকদের মধ্য একজন যারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার শিক্ষা লাভ করেছে। এবার তাঁর নিজে গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের এক ড্রোন হামলার সংবাদে বিপর্যস্ত। তিনি টুইট করেছেন:
@আলমুসলিমি [13]
ওয়েসেবা আমার গ্রাম, কোন সন্দেহ নেই ইয়েমেনের সবেচেয়ে শান্তিপূর্ন জনতা এবং সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা। অভিনন্দন, আপনারা তাদের সহিংস করে তুললেন
@আলমুসলিমি [14]: #যুক্তরাষ্ট্র একদিন আমাকে ইংরেজি শিখিয়েছে এবং এর ঠিক পরেই এক দারুন দিনে আমার কাছ থেকে আমার প্রাণ ছিনিয়ে নিয়েছে। আমার এ রকম কোন দ্বিধাবিভক্ত অনুভূতি আর কখনো হয়নি
@আলমুসলিমি [15]: এই মূহুর্তে আমি ভাবতে পারছি না যে সানায় আমি কোন ঘনিষ্ঠ মার্কিন বন্ধুর সাথে পানীয়ের গ্লাস হাতে উল্লাস করছি, আর তার সরকার আমার গ্রামে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে !

যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এক বিক্ষোভ, যেখানে এক পোস্টারে ঘাতক ড্রোন ব্যবহার সহ রাষ্ট্রপতি ওবামার নীতির নিন্দা জানানো হচ্ছে। .
যুক্তরাষ্ট্রের এই ত্রুটিপূর্ণ সন্ত্রাস দমন নীতি [16], যেটিতে সর্বত্র ড্রোন ব্যবহার করা হয়, তা সর্বত্র সমালোচিত, আর যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক গনবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে [17]। গত সপ্তাহে ইয়েমেনে এই সব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ব্যাপক ঘৃণা প্রদর্শন করা হয়। এমন কি আল মুসলিমির মত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষিত তরুণেরাও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ, যে কিনা এই বিষয়ে এক শক্তিশালী লেখা [18] লিখেছে। .
বারাক ওবামা অনুসৃত এই নীতির বিষয়ে অভিযোগ হচ্ছে যে এর ফলে শত শত নিষ্পাপ ইয়েমেনী নাগরিক নিহত হয়েছে এবং রেডিও সংবাদ যানা গেছে যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ড্রোন সাধারণ নাগরিক, জঙ্গি ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য করতে পারে না।
যখন থেকে এই নীতি কার্যকর, তখন থেকে আলকায়েদা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে সফল একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এই ধরনের ড্রোন হামলায় যাদের আত্মীয় মারা যায় তাদের সম্পূর্ণ নতুন এক প্রজন্ম আল কায়দায় যোগ দিয়েছে। “যুক্তরাষ্ট্র কারো বন্ধু হতে পারে অথবা, সে কারো শত্রু নয়”, ড্রোন এই ধারণাকে জটিল, লজ্জাজনক এবং এমনকি বিপজ্জনক করে তুলেছে।
ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আব্দে রাবু মানসুর হাদি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের সময় ড্রোন হামলার অনুমোদন প্রদান করেন।