টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় উঠতে পারেন ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী

ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গত ৫ দিন ধরে তেল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে অনশন করছেন। আর এই অনশনের মধ্যে টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৩ সালের বিশ্বের সবচেয়ে ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়মনোনীত হয়েছেন। টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবছরই এ তালিকা প্রকাশ করে থাকে। কেজরিওয়ালের এই মনোনয়ন সমর্থকদের মাঝে উল্লাস-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।

দিল্লিতে পানি এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেজরিওয়াল এর আগে মার্চ ২৩ থেকে এপ্রিল ৬, ২০১৩ তারিখে এই ১৫ দিন অনশন ধর্মঘট করেছিলেন। কেজরিওয়াল দিল্লির কাছে সুন্দর নাগারিতে অনশন করছেন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই গরীব। যতটা বিদ্যুত ব্যবহার করেন তারচেয়ে বিল বেশি আসায় তারা হতাশ হয়েছেন।

২০১২ সালের শেষদিকে কেজরিওয়াল দুর্নীতিবিরোধী রাজনৈতিক দল আম জনতা পার্টি (সাধারণের জন্য দল) গঠন করেন। তার অনশন চলাকালে দলটির সমর্থকরা বেশি বিল না দেয়ার জন্য সবার কাছ থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। তার অনশন শেষ হওয়ার সময়ে আম জনতা পার্টির পিটিশনে দশ লক্ষের বেশি স্বাক্ষর জমা পড়ে। আগামী ২৮ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো ঐক্যমতের চিঠি দেয়া হবে।

দিল্লির সুন্দ নাগারিতে অনশনের ১৫তম দিনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: আম জনতা পার্টির সদস্য মনিশ সিসোদিয়ার। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

দিল্লির সুন্দ নাগারিতে অনশনের ১৫তম দিনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: আম জনতা পার্টির সদস্য মনিশ সিসোদিয়ার। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

কর্মী থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই আন্দোলকে ‘নাগরিক অমান্যতা‘ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি তার অনশনের মধ্য দিয়ে দিল্লির জনগণের মন থেকে ভীতি দূর করতে চান। ভারতের বেশিরভাগ জনগণই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান। কেজরিওয়ালের মতে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল আসার কারণ হচ্ছে করপোরেট এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যকার দুর্নীতি।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাম্প্রতিক অনশন এবং টাইম ম্যাগাজিনের মনোনয়ন ভারতের রাজনীতিতে তার প্রভাব অনেকটাই বৃদ্ধি করবে। তাছাড়া যারা তাকে আগে থেকে চিনেন, তারা তাকে রাতারাতি হিরো বনে যাওয়া মনে করেন না। কেননা, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। ভারতের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কর্মী হিসেবে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দিল্লির সংসদে ২০০১ সালে এবং ভারতের জাতীয় সংসদে ২০০৫ সালে এই আইনটি পাস হয়। এই আইনের বদৌলতেই আজ ভারতের অনেকেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতিরোধে কাজ করতে পারছেন।

দিল্লির ব্লগার আদিত্য প্রানভ ১২ এপ্রিল তার ব্লগে কেজরিওয়ালের অতীতের কর্মকাণ্ড নিয়ে লিখেন:

কিছু লোকের ধারণা কেজরিওয়াল রাতারাতি হিরো হয়ে গেছেন। তাদের এই ভিডিও অবশ্যই দেখা উচিত। তাহলে তারা উপলদ্ধি করতে পারবে বিগত দিনে তার অংশগ্রহণ। নাগরিক উন্নয়নের নামে করদাতাদের পকেট কাটা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আপনি চাইলে দেখতে পাবেন তারা কীভাবে স্থানীয় জনতা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, মেয়র এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করেছিল।

টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৩ সালের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির ওপর জরিপ শুরু হয় ২৮ এপ্রিল তারিখ থেকে। আর শেষ হয় ১২ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে। জরিপের ভোট চলাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেজরিওয়ালের সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যায়। জরিপে ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৯১.৫১% ইতিবাচক ভোট পেয়েছেন। আর প্রাপ্ত ফলাফলে তার মোট ভোট সংখ্যা ১২৪,৭৬৯টি। মাত্র ৮.৪৯ % ভোটার মনে করেন, তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তি নন।

তরুণরা অনলাইনে তাদের মতামত প্রকাশে ভীত নন। তারা যে কাউকে যথাযথ মুল্যায়ন করতে জানে। কেজরিওয়াল এবং আম জনতা পার্টির একজন স্বঘোষিত সমর্থক ঈশ্বর কান্ডপাল (@ঈশ্বরকান্ডপাল)[হিন্দি] এপ্রিলের ১২ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিস বরাবর টুইট করেন:

@ঈশ্বরকাণ্ডপাল: আমি খুব গর্বিত অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

সমু কুমার (@আদিবাসী) নামে আম জনতা পার্টির আরেকজন সমর্থক ২৮ মার্চ তারিখে অভিমত দেন যে, কেজরিওয়ালকে ভোট দেয়ার মানে হলো ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকেই ভোট দেয়া:

@আদিবাসী: টাইমের ২০১৩ সালে ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ভোট দেয়া হলো ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলকে ভোট দেয়া। তাই দয়া করে ভোট দিন।

ভারতের সংবাদমাধ্যমও সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পায়নি: ভারত বিল্ডার (@ভারত_বিল্ডার) নামে একজন আম জনতা পার্টির সমর্থক লিখেন যে,অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাজকে মূল্যায়ন না করায় ভারতের সংবাদমাধ্যম তিরস্কৃত হবে। তিনি ১২ এপ্রিল টুইট করেন:

@ভারত বিল্ডার: শুনুন ভারতীয় মিডিয়া, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তার বিকেন্দ্রীকরণ ধারণা আলোয় আসবেই। @টাইম তা জানে, কিন্তু আপনারা তা জানেন না!

আম জনতা পার্টির আরেক সমর্থক জয়তী শংকর ঝা (@জয়তীশংকরঝা) ব্যঙ্গার্থে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য টুইটারে ভোট প্রার্থনা করেন। ১১ এপ্রিল তিনি লিখেন:

@জয়তীশংকরঝা: দয়া করে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ভোট দিবেন না। তিনি ঘুষ নেননি, দাঙ্গায় অংশগ্রহণ করেননি, মানুষকে সহিংসতায় উস্কানি দেননি।

দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নির্বাচনী রাজনীতিতে নিমগ্ন। তিনি দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একটি রাজনৈতিক দল উপহার দেয়ার। ছবি: রোহিত গৌতম। স্বত্ব: ডেমোটিক্স।

দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নির্বাচনী রাজনীতিতে নিমগ্ন। তিনি দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একটি রাজনৈতিক দল উপহার দেয়ার। ছবি: রোহিত গৌতম। স্বত্ব: ডেমোটিক্স।

যদিও অনেকেই মনে করেন, ভারতের জনসংখ্যার মাপকাঠিতে টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে অরবিন্দ কেজরিওয়াল আরো ভোট পেতে পারতেন। কেজরিওয়ালের আরেক সমর্থক হেমান্ত ভার্মা (@হেমান্তভার্মা০০৭) মত দেন:

@হেমান্তভার্মা০০৭: ১২৫০০০০০০০ জন ভারতীয়। আমরা ১২৫০০০০ ভোট অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দিতে পারি না।

অন্য একজন ব্লগার মনে করেন, টাইমের ১০০ ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্তির মানে হচ্ছে একজন ব্যক্তির প্রভাব কতটুকু তার পরিমাপ করা। ফ্রিক-ও-লিটিক্স নামের এই রাজনৈতিক ব্লগার ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষণমূলক পোস্ট লেখেন। ৯ এপ্রিল তিনি লিখেন:

একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার যে খুব সাধারণ একটি কারণে তাকে প্রতিযোগী হিসেবে পছন্দ করা হয়েছে। আর তা হলো তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিত্ব। তবে সবসময় যে ইতিবাচকভাবেই মনোনীত করা হয়, তা কিন্তু নয়। টাইম পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে: তালিকায় সবাই হয় ভালো উপায়ে অথবা খারাপ উপায়ে বিশ্বের পরিবর্তন বয়ে আনছেন।

মজার ব্যাপার হলো, এর আগেও ভারতের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। এরমধ্যে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একজন। যদিও তিনি ইতিবাচক ভোটের চেয়ে নেতিবাচক ভোট বেশি পেয়েছিলেন।

২০১৩ সালের টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি তালিকার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত ফলাফল আগামী ২৮ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে প্রকাশ পাবে।

মলি অ্যালিসন – বেকার পোস্টটির ইংরেজি সংস্করণের প্রুফরিডিং করেছেন।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .