- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইরানঃ আচরণ পুরুষের মত, পোষাক পরে মহিলাদের মত!

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরান, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী, সরকার

গত সোমবার ১৫ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে ইরানের কুরদিস্থান প্রদেশের ম্যারিভান [1] রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনী মাথায় ঘোমটা এবং লাল জামা পরিহিত এক ব্যক্তিকে প্রদর্শন করেছে। ঘরোয়া বিরোধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় একটি স্থানীয় আদালত তিন জন পুরুষকে জন্য এই শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । প্রকৃত ঘটনা যদিও অপরিষ্কার, কিন্ত এরূপ শাস্তির বিধান অনেককেই ভীষণ বিরক্ত করেছে।

ম্যারিভানের নারীরা মঙ্গলবার এই ধরণের শাস্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাঁরা বলছে, এভাবে দোষী সাব্যস্ত করা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি অপমানকর। একজন মানবধিকার কর্মীর মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা শারীরিকভাবে প্রতিবাদকারীদের আক্রমণ করে [2] [ফার্সি]। একটি ভিডিও রাস্তায় মহিলাদের অবস্থান দেখাচ্ছে।

Men in Dress source: https://www.facebook.com/KurdMenForEquality [3]

‘সমতার জন্য কুর্দ পুরুষ’ ফেইসবুক পাতায় শেয়ার করা হয়েছে

অনেক ইরানি পুরুষ অনলাইনে ফেসবুকে প্রচারাভিযানের জন্য নারীদের মতো পোশাক পরে ছবি তুলেছেন এবং বলেছেন [4], “কাউকে শাস্তি দেওয়া বা অপমান করার জন্য নারী হওয়া কোন উপকরণ নয়।” সমতার জন্য কুর্দ পুরুষ [4] ফেইসবুক পাতায় ছবি গুলো দেখা যাচ্ছে।

ন্যামো কুর্দিস্তান লিখেছে:  [5]

“স্ত্রীজাতি”র প্রতি আমার সংহতি এবং সমর্থন দেখানোর জন্য এবং ইতিহাসে তাঁদের ভোগান্তি ও যন্ত্রণার জন্য “পুরুষের” কৃতকর্ম ই দায়ী। যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে একজনকে শাস্তি দেবার নামে তাঁকে মেয়েলি পোশাক পড়ানোর মতো একটি মূঢ় বিচারকের নির্দেশ আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে, তাই সেই রকম একটি সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি যখন আমাদের একে অপরের কাছাকাছি থাকা দরকার। পাশাপাশি এই নির্বুদ্ধিতা, নৃশংসতা এবং নারীত্বের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার প্রতি নিন্দা জানানো উচিত। আমি তাঁদের জন্য অন্ততঃ যেটি করতে পারি তাই করছি। আর সেটা হল, আমি নারীত্ব সমর্থন করছি।

উইমেন এ্যাসোসিয়েশন অফ ম্যারিভান’এর  ফেসবুক পাতাও এই আইনের নিন্দা জানিয়ে লিখেছেঃ [6][ফার্সি]

নিরাপত্তা বাহিনী শহরে একজন দোষী সাব্যস্ত ম্যারভানি মানুষকে টানাহেঁচড়া করেছে। তাঁর পোশাক ছিল নারীদের মতো। আইনের দ্বারা এটি করা হয়েছে তাঁকে অপমানিত করতে। উইমেন এ্যাসোসিয়েশন অফ ম্যারিভান এই কাজের নিন্দা জানিয়েছে। তাঁরা এটিকে নারীদের অপমান করার সামিল বলেই গ্রাহ্য করছে। কুর্দিশ নারীরা ঘটনার একদিন পরে এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মোহাম্মদ মোস্তাফাই নামের একজন ইরানী আইনজীবী ও মানবাধিকার রক্ষা কর্মী বলেছেনঃ  [7]

ইরানের বিচার বিভাগের মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে যায় এমন শাস্তি দেবার কোন অধিকার নাই। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আইনে দণ্ডিতদের মহিলাদের মত পোশাক পড়ানোর মতো কিছু আপনি খুঁজে পাবেন না।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

তিন বছররেও বেশি আগে, ইরানী কর্তৃপক্ষ একটি ছাত্র কর্মীকে অপদস্থ করতে একই পদ্ধতি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। [8] কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হয়।

এর পর ইরানী কর্তৃপক্ষ অভিযোগ [9] করে, ছাত্র দিবসে [10]তেহরানে একটি বক্তৃতা প্রদানের পর মজিদ তাভাকলি [11]মুক্তির জন্য নারীদের মতো পোশাক পড়েছেন । যাহোক, ইরানে মানবাধিকার কর্মীরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ [9] করে এবং দাবি করে, “রাষ্ট্র মিডিয়া দ্বারা প্রকাশিত সমস্ত ছবি মিথ্যা এবং এটি ইরানে ছাত্র ও সুশীল কর্মীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক উপায় ব্যবহারের একটি পরিষ্কার নমুনা।”

সেই সময় শত শত ইরানি তাভাকালিকে সমর্থন দেবার জন্য নিজেরা হিজাব পরিহিত নারীদের মতো করে পোশাক পরে ছবি তোলে।