লেবাননে অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণ প্রতিরোধে প্রচারণা

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সাতটি এনজিও “ ফি চি ঘালাত ” নামক প্রচারণার সুচনা করেছে (যার অর্থ কিছু একটা ভুল হচ্ছে, তারা কাফালা (সেন্সরশীপ) পদ্ধতির নিন্দা জানাচ্ছে।

এই কাফালা পদ্ধতি যে ভাবে কাজ করে তা খুব সাধারণ। এতে সকল অদক্ষ কর্মীর (গৃহ পরিচারিকা) ভিসা এবং বৈধ অবস্থানের দায়িত্ব সেই দেশের একজনের হাতে ন্যস্ত থাকবে। সাধারণত স্পনসররা এদের নিয়োগ কর্তা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিস সিমেল এসিমের, মতে যা পুরোপুরি এক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে এবং সবখানে শোষণের জন্য রাস্তা খুলে দেয়” এই ঘটনা ঘটে এক সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এক ব্যবস্থার কারণে যার ফলে এত বছর ধরে বিশাল সংখ্যক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
ঘটনা হচ্ছে, এই বিষয়ে লেবাননের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউর) এর উর্ধ্বতন গবেষক নাদিম হউরির-এক উদ্ধৃতি রয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন :

নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পালানোর সময় অভিবাসী শ্রমিকদের মারা যাওয়ার দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা [এবং] এই সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা।

লেবাননের পরিস্থিতি বাজে রয়ে গেছে। আল্টসিটি এবং মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কস টাস্ক ফোর্স-এর একসাথে করা এক পরিসংখ্যান অনুসারে, ৯৯ শতাংশ অভিবাসী কর্মীকে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া হয় না; ৬৫ শতাংশ কর্মীকে প্রতিদিন ১১ ঘণ্টার বেশী কাজ করতে হয়, ৫২ শতাংশ কর্মীকে হামরার (গাধা) মত নিন্দা সূচক গালি শুনতে হয়, ৩৪ শতাংশকে অবসর দেওয়া হয় না, ৩১ শতাংশকে বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হয় না, ১৪ শতাংশকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং ৭ শতাংশ কর্মীকে নির্যাতনের শিকার হয়।

এই প্রচারণায় এর সাথে যুক্ত হয়েছে কাফার [যথেষ্ট হয়েছে নির্যাতন এবং শোষণ] প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টার (২৪/৭) এক হেল্পলাইন, (টেলিফোন নাম্বার ৭৬০৯০৯১০) যা কিনা শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য। বর্ণবাদ প্রতিরোধে সৃষ্ট এক বর্ণবাদ বিরোধী প্রচারণা এখন লেবাননের সমুদ্র সৈকতে এবং ‘ইথিওপিয়ান সুইসাইড‘ ব্লগ সবসময় শোষণের বিষয়ে সংবাদ প্রদান করে যাচ্ছে।

তাহলে তারা কি জানতে চাইছে ? মাইগ্রেনট রাইটস.অর্গ -এর কাছে এর উত্তর আছে:

এই সংগঠনটি এই স্পনসরশিপ-এর বদলে এমন এক পদ্ধতি চায়, যা নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে:

সঠিক সময়ে বেতনের নিশ্চয়তা।
চাকুরি ছেড়ে দেওয়ার অধিকার
কর্মীর পাসপোর্ট এবং নিজস্ব জিনিসপত্র নিজের কাছে রাখার অধিকার…
এমন এক পদ্ধতি যা ভাল এবং মানবতা ও শ্রম অধিকারকে রক্ষা করবে
ঘণ্টা পর পর বিশ্রাম নেওয়ার অধিকার, যার সাথে একদিন ঘরের বাইরে ছুটি কাটাবার অধিকার

কর্মী এবং কর্তৃপক্ষ উভয়ের জন্য এই প্রচারণা [আরবী ভাষায়]:

لازم يتغير القانون وعقلية العالم وهيدا ببلش من الشخص وبعدين الحكومة. لازم نغير نظام الكفالة!

ব্যক্তি এবং সরকারের আইন ও মানসিকতার পরিবর্তন সাধিত হওয়া প্রয়োজন, আমাদের অবশ্যই কাফালা পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে !

এবং এই প্রচারণার ফেসবুকের পাতায় নেপালি এক অভিবাসী শ্রমিকের কাহিনীর মাধ্যমে স্মরণ কর নিতে চাই, পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে হবে।

আমাকে ঠিক মত খাবার দেওয়া হত না। কোন কোন দিন আমাকে কেবল রুটি আর চা দেওয়া হত। আমি সারাদিন ধরে কাজ করতাম, আর ভাগ্যে জুটত কেবল রুটি আর চা। একদিন আমি বললাম যে আমাকে পুরো বেতন দিয়ে দিন আর আমি গৃহকর্ত্রীকে বললাম, “তিনি যেন আমাকে তার বন্ধু ও আত্মীয়দের বাসায় কাজ করতে না পাঠান এবং আমি তাকে বললাম, যদি আপনি আমাকে আমার বেতন না দেন, তাহলে আমি আর কাজ করব না”, এই কথা বলার সাথে সাথে তিনি আমাকে প্রহার করতে শুরু করেন, এমনকি তিনি আমাকে জুতা দিয়ে প্রহার করেন। এতে আমার ডান হাত ভেঙ্গে যায় এবং সারা শরীরে ক্ষত তৈরী হয়। ঠিক দশদিন পরে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু গৃহকত্রী আমাকে বলে যে ডাক্তার বা কেউ কি ঘটেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন আমি এই মারধরের কথা না বলি। সে আমাকে বলে যে আমি যেন বলি, কাজ করার সময় আমি পড়ে গিয়েছিলাম।

নেপাল থেকে অমৃতা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .