বিভিন্ন দেশের কমিক বই এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় নিয়ে পোস্ট এটি। আর এটি আপনার জন্য এনেছে গ্লোবাল ভয়েসেস-এর লাতিন আমেরিকা এবং পর্তুগিজ টিম।
এ বিষয়ে এটিই প্রথম পোস্ট। এখানে আমরা ব্রাজিলের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু বক্তব্য জানতে পারবো। প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি, লাতিন আমেরিকার কমিক বিশ্বকে আমরা খুব কমই জানি। তবে এ অঞ্চলে সমৃদ্ধ শিল্পকর্ম তৈরি হচ্ছে, যা অনলাইনের বদৌলতে সবখানেই পৌঁছে যাচ্ছে। এখন আমরা কিছু লেখক-শিল্পীর সাথে পরিচিত হবো, তাদের কাজগুলো দেখবো। চলুন, যাওয়া যাক তাদের কাছে।
ভলিউম দুই: সংযোগ স্থাপন
২০১২ সালে লিনিয়ার্স আজেন্টিনা থেকে ব্রাজিলে ঘুরতে যান। গুস্তাফ ট্রিভিসোল্লি নামের একজন শিল্পী-ব্লগার লাইয়ো লেসারের জন্য একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি ছিল কমিক বইয়ের উপরে। সেখানে তিনি লেখেন, “ব্রাজিলের সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলোতে লিনিয়ার্সের কাজের মতো একই আবেদন তৈরি করতে পারে এমনটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।”
ট্রিভিসোল্লি ব্রাজিলের কমিক শিল্পবাজারের একটি প্রবণতা খুঁজে পেয়েছেন। আর সেটা হলো মণিকার্স গ্যাং, চার্লি ব্রাউন এবং ক্যালভিন অ্যান্ড হবেস-এর মতো চরিত্রগুলো পেছনে ফেলে এখানকার কাজগুলো হয়ে উঠেছে অনেক বেশি সিরিয়াস প্লট নির্ভর। এরপরও তিনি লিখেছেন, ব্রাজিলে স্প্যানিশ ভাষায় কমিক বই লেখা একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা! এবং এগুলোর মধ্যে তারা খুব সহজেই দেশকে খুঁজে পায়।
গুস্তাফ ট্রিভিসোল্লি অন্য একটি পোস্টে চিলির কমিক বইয়ের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছেন। এজন্য অবশ্য তাকে কিছু সময় লোকোতে গবেষণা করতে হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “চিলির কমিক বইয়ের এখন খুবই ভাল সময় যাচ্ছে। নতুনরা চমৎকার সব কাজ করছে।”
চিলির জনপ্রিয় কার্টুন কারেক্টার কনডোরিতো এবং এই ম্যাগাজিনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা কথা উল্লেখ করেছেন ট্রিভিসোল্লি। তাছাড়া তিনি মজার একটি তথ্যের উল্লেখ করেছেন, ডিজনির স্যালুডোস অ্যামিগোজ-এর কাউন্টার হিসেবে চিলিতে এই ক্যারেক্টার তৈরি হয়েছিল। উল্লেখ্য, স্যালুডোস অ্যামিগোজ অ্যানিমেশন তৈরি করা হয়েছিল ডোনাল্ড ডার্ক এবং লাতিন আমেরিকার ক্যারেক্টারগুলো প্রতিরোধ করতে। ট্রিভিসোল্লি অবশ্য মালাইমাজিনের মতো নতুন বিষয়ও খুঁজে পেয়েছেন।
অনলাইন কমিক- পাদপ্রদীপের আলোয়
অনলাইন বা অফলাইন সব জায়গাতেই লাতিন আমেরিকার কমিক শিল্প নতুন পরিচয় নিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে। আর এটা করা হয়েছে করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আঁকা, প্রচারণা এবং সবার সাথে শেয়ারিং-এর মাধ্যমে। আপনি না জানলেও লাতিন আমেরিকার শিল্পীরা কি করছে, চলুন তা দেখে আসি।
ডক্টর কমিক শুধূ আঁকাতেই নয়, লেখাতেও মেইনস্ট্রিম ও স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিহাস তৈরি করেছে। ভেনিজুয়েলার একই ধরনের কাজ ব্লগে তুলে ধরছেন জুপ্লেমেন্টো ম্যাগাজিন। তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশে কমিক বা ইলাস্ট্রেশনের শিল্পকর্মগুলো তৈরি হয়, তার একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা। কারণ আলাদা করে তুলে ধরা না হলে এগুলো সাধারণ সাংস্কৃতিক বেড়াজালে হারিয়ে যাবে। আর্জেন্টিনার আগাস্টিনা গুয়েরো তার হাস্যরসের ডায়েরি [নারীদের] সিরিজে হাস্যকৌতুকময় নারী-পুরুষদের এঁকেছেন।
কমিকবলিভিয়াতে শিল্পীরা কমিক বইয়ের এক নতুন বিশ্ব উন্মোচন করেছেন। যে কেউ এই ব্লগে ঢুকে ডান পাশের মেনুতে বলিভিয়া ও লাতিন আমেরিকার শিল্পী ও লেখকরা কী করছেন, তা জানতে পারবেন।
চিলির আলবার্তো মন্ট ডরিস ডায়েরি নামে একটি সিরিজ তৈরি করেছেন। এতে দারুণ কিছু হাস্যরসের দেখা মিলবে।
ভেনিজুয়েলার আদ্রিয়ানা ব্লেক সুয়েন্টা কনমিগো [এটা ইংরেজিতে পাওয়া যায়] প্রকাশ করেছেন। দম্পতিদের জীবনের দৈনন্দিনের ঘটনা নিয়ে তিনি কমিক আঁকেন।
চিলির ফ্রান্সিসকো জেভিয়ার ওয়েলা ওলেইসমোস প্রকাশ করেছেন। এটির মাধ্যমে ইতোমধ্যে নিজেকে “কদাচিৎ গভীর কথা বলে” বলে পরিচিত করেছেন। এবং তিনি এটা যখন করেন, তখন “মুখ থেকে সহজেই কোনো কথা বের হয় না।”
সেতুবন্ধ
আমরা যদি এভাবে খুঁজে দেখি, এই অঞ্চলে অন্যান্য ভিজুয়াল শিল্প গোনায় না ধরেও তাদের কাজের মধ্যে ধারাবাহিকতা দেখতে পাবো। কিন্তু কী সেই, যা শিল্পীদের মধ্যে সেতুবন্ধ হয়ে কাজ করছে? কী সেই সাংস্কৃতিক আধেয় যা সবার সাথে সংযোগ স্থাপন করছে?
তবে ব্রাজিলিয়ান ব্লগার এবং কমিকস বইয়ের সম্পাদক গারোতা সিকোয়েন্সিয়াল অবশ্য কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছেন। আর তা হলো সিনেমা। সিনেমাই লাতিন দেশগুলোর মধ্যে মূল সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে।
(…) o intercâmbio cultural com os outros países da América Latina sempre foi prejudicado pelos moldes relativamente restritivos dessa indústria [dos quadrinhos], bem como acredito que, assim como no Brasil, sua produção tenha sido prejudicada por percalços econômicos. Mas hoje já percebo o cinema como principal ponte cultural entre os países latinos (…).
(…) ব্রাজিল এবং অন্যান্য লাতিন দেশের মধ্যেকার আন্ত:সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ফলে কমিকস বইয়ের ওপর যে বাধানিষেধ ছিল তা ধ্বসে গেছে। আমি বিশ্বাস করি, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্রাজিলের কমিকস বই শিল্পের ক্ষতি হয়েছে। এখন খেয়াল করছি সিনেমা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছে (…).
নিচের এই ছবিটি সে কথাই নির্দেশ করছে।
এখানকার শিল্পী সম্প্রদায়ের দিকে নজর বোলালে কয়েকটি চমকপ্রদ উদ্যোগ যে কেউ দেখতে পাবেন।
আমি যদি নাচতে না পারি, সেটা আমার বিপ্লব নয় নামের একটি সম্মিলিত উদ্যোগে লাতিন আমেরিকার নতুন ভাবনা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
(…) uma rede independente criada para aproximar e relacionar novas ideias latino-americanas. Começou em 2007, com foco em música, para em seguida expandir seu interesse sobre produções e artistas com trabalhos nas áreas de ilustração, design e literatura. Cria e articula projetos, organiza publicações, mostras, e promove ciclos de música.
(…) একটি নতুন স্বাধীন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে সেখানে লাতিন আমেরিকার নতুন ভাবনাগুলো একত্রিত করা হবে। এটা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে, সংগীতশিল্প দিয়ে। পরে এটার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হয়। ইলাস্ট্রেশন, ডিজাইন, সাহিত্যর মতো শিল্পকর্ম এবং শিল্পীদের কাজ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়, প্রকাশনা বের করা হয়, বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সংগীতের প্রচারণা করা হয়।
সম্মিলিত এই উদ্যোগের কেন্দ্রস্থল ব্রাজিলের সাও পাউলো। তবে সহযোগী হিসেবে রয়েছে আরো কয়েকটির দেশ।
তাদের একটি প্রজেক্টের নাম হলো- আমি নিজের জন্য আর বসতি করবো না। এটি একটি গানের সংগ্রহশালা। এটি গড়ে তুলেছেন আদ্রিয়ানা ক্যালক্যানহোট্টো। এখানে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন ব্যান্ডদলগুলোর গান রয়েছে। এর ওয়েবসাইটির ডিজাইন করেছেন গুস্তাভ গিয়ালুকা। গানের যেসব অডিও লিংক রয়েছে, সেখানে ব্যান্ডগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য রয়েছে।
অন্য একটি উদ্যোগের নাম হলো- ইট গোজ অ্যাওয়ে অ্যাজ ইট বার্নস। প্রকল্প পাতায় বলা হয়েছে:
Se quema y se acaba é um pequeno livro de memórias. Uma coletânea de afeto e saudade. Convidamos 19 ilustradores latino-americanos a recriar – sob efeito do tempo e da imaginação – amigos, amores ou colegas que compartilharam a fileira da sala, trocaram recados proibidos, riram do tênis novo ou pouco se falaram. Pessoas que vieram para ir embora. Que se despediram com poucas palavras, e nunca disseram tchau.
ইট গোজ অ্যাওয়ে অ্যাজ ইট বার্নস স্মৃতিকথার ছোট্ট একটি বই। এতে ভালোবাসা ও নস্টালজিয়ার কথা উঠে এসেছে। আমরা লাতিন আমেরিকার উনিশজন ইলাস্ট্র্রেটরকে আমন্ত্রণ করেছিলাম এগুলোকে নতুন করে তৈরি করার জন্য। যাতে অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে সময় এবং কল্পনা। আর থাকবে বন্ধু, প্রেমিক অথবা সঙ্গীরা মিলে স্কুলের বেঞ্চিতে গল্প করার ছল, গোপন কথামালা আদান-প্রদান, নতুন জুতা পরার হাস্যমুহূর্ত অথবা একে অপরে অকপটে কথা বলার ভঙ্গিটুকু। মানুষজন এখানে আসবে সেই সময়ে হারিয়ে যেতে। বিদায় সম্ভাষণটুকু থাকবে খুব কম কথার, তবে কখনোই বলা হবে না শুভ বিদায়।
এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ তৈরির জন্য প্রজেটো নোসোট্রোস নামের একটি উদ্যোগ রয়েছে। তাদের হোমপেজে লেখা আছে:
Quando o resto do mundo pensa em América Latina, as primeiras imagens são do nosso folclore e dos povos mais antigos. Mesmo tendo muito orgulho do passado e reconhecendo o quanto ele enriquece a nossa cultura, sabemos que os países e os próprios latino-americanos mudaram muito desde então.
Para desmistificar essa visão que ficou parada no tempo, criamos este projeto que apresenta jovens artistas, profissionais criativos e suas produções na América Latina. Aqui, conversamos e debatemos sobre os processos criativos e referências destes profissionais.
লাতিন আমেরিকার কথা উঠলেই বিশ্ববাসীর সামনে প্রথম যে চিত্র উঠে আসে তা হলো এখান লোকসংস্কৃতি। আমরা আমাদের অতীত নিয়ে গর্বিত। এটা বলে দেয়, একসময় আমাদের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ ছিল। তবে আমরা জানি, এই সময়ের মধ্যে আমরা লাতিন আমেরিকানরা কতটা বদলে গেছি।
এখন সময় এসেছে এই রহস্যমোচনে। এজন্যই আমরা এই প্রজেক্টটি হাতে নিয়েছি। এখানে লাতিন আমেরিকার তরুণ শিল্পী, সৃজনশীল মানুষদের কাজ আমরা তুলে ধরবো। এখানে আমরা তাদের সৃজনশীল কাজের ধরন ও সূত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
নিচের সাক্ষাত্কার, ভিডিও আর কমিক স্ট্রিপের মাধ্যমে তারা এটা করছে:
উপরের ছবিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, স্প্যানিশে কীভাবে একজন লোককে পরাস্ত করা যায় (আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায়) এবং বিভিন্ন দেশে শব্দের ব্যবহার কীভাবে বদলে যায়।
প্রজেটো নোসোট্রোস-এর দুই উদ্যোক্তা প্রিসিলা মিডরি এবং ভিক্টর মার্সেলোর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা আমাদের পোস্টে উল্লেখ করার মতো শিল্পীদের নাম দিয়ে সহযোগিতা করেন। প্রজেটো নোসোট্রোস-এর প্রযোজনায় নিচের এই ভিডিওতে আর্জেন্টিনার দুইজন শিল্পী আছেন। তারা হলেন বারলিয়াক এবং জুয়ান সানেজ ভ্যালেন্টি।
কমিক কারো কাছেই কোনো বিষয় না। আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। কেন না কেউ-ই এটাকে সিরিয়াস হিসেবে নেয় না, বলে মন্তব্য করেন সানেজ। আপনি কী স্যানেজের কথার সাথে একমত না ভিন্নমত পোষণ করেন? নিচের ভিডিওটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন তারা কি রকম সৃজনী স্বাধীনতা ভোগ করেন। কেউই কমিককে সিরিয়াস হিসেবে দেখেন না। বিশেষত স্যানেজের ক্ষেত্রে । এই দুই শিল্পীর চিন্তাভাবনার প্রকাশ দেখতে ভুলবেন না।
বারলিয়াক এবং জুয়ান সানেজ ভ্যালেন্টি (আর্জেন্টিনা)। প্রজেটো নোসোট্রোসর ভিডিও।
এই যে লাতিন আমেরিকার ব্যাপক উদ্যোগ, তা সেখানকার দেশগুলোর সৃজনশীলতার শক্তি, বিষয়, টেকনিক, হাস্যরস, সমালোচনা, দৈনন্দিন জীবনসহ মানবতার গল্পগুলো তুলে ধরে। তবে কিছু কিছু উদ্যোগের মাধ্যমের নতুন পরিচিতির বিষয়টিও উঠে আসছে। আর তা থেকে বোঝা যাচ্ছে আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমাদের গন্তব্যইবা কোথায়?
ব্রাজিলের দিক থেকে বলতে গেলে এখনই ঠিক সময় আমাদের দেশের হিরোদেরকে মুলধারা এবং স্বাধীন সৃজনশীলতার সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া। যে গানগুলো আমরা শুনি, দূরে কোনো জায়গা থেকে পাওয়া যে চিত্রগুলো আমরা পরস্পরে শেয়ার করি, স্প্যানিশের যে বিষয়গুলো আমাদের কাছে আসে সেটাও তুলে ধরতে হবে। *এখানে আরো আছে!