ভারতে বাল্যবিবাহের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন

বিশ্বের বেশীরভাগ বাল্যবিবাহ দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার সাব সাহারা নামক এলাকার গ্রামগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের গ্রামগুলোয় ৪৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে ১৮ বছরের আগে সম্পন্ন হয়ে থাকে [ইউএনএফপি-এর রিপোর্ট অনুসারে]। ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে বিহারে বাল্যবিবাহের হার সর্বোচ্চ, যা ৬৯ শতাংশ।

উর্মিলা চানাম আমাদের এ রকম এক ভারতীয় কনে শিশুর ঘটনা তুলে ধরছে :

ভারতের এই অংশে এটা একটা ঐতিহ্য। যখন শিশুদের খেলনা নিয়ে খেলার কথা তখনই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে কি জিনিস তা বোঝার আগেই ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। তাদের শৈশব এবং জীবনের আনন্দ, শুরুতে শেষ হয়ে যায় হাজার বছরের পুরোনো এক ঐতিহ্যের কারণে। কেউ একে চ্যালেঞ্জ করে না কারণ এটা একটা প্রথায় পরিণত হয়েছে। [..]

যদিও ভারতীয় আইনে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তারপরেও ভারতের মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশের গ্রামগুলোয় তা ব্যাপক ভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যদিও তৃতীয় বিশ্বের অন্য অনেক দেশেও বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, তারপরেও বাল্যবিবাহের দুই-তৃতীয়াংশ কেবলমাত্র ভারতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

Girls dressed as young bride and groom for an awareness campaign against child bride. Agartala, India. Image by Reporter#24728. /Copyright Demotix (7/3/2012)

ভারতের আগরতলায় বাল্যবিবাহ বিরোধী এক সচেতনতা প্রচার অভিযানে মেয়েরা তরুণ কনে ও বরের সাজে। ছবি রিপোর্টার#২৪৭২৮ –এর। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (৭/৩/২০১২)।

অল্প বয়সে বিয়ের ধর্মীয় কারণও রয়েছে। ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হাইকোর্ট সম্প্রতি এক বাল্যবিবাহের মামলায় বিবাহের পক্ষে রায় প্রদান করে এই কারণে যে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন ২০০৬ (পিসিএমএ)–এ, মুসলিম পারিরারিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক, যেখানে একটি মেয়ের বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হবার সাথে সাথে তার বিয়ের বিধান রয়েছে।

পিসিএমএ অনুসারে ভারতে ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়ে এবং ২১ বছরের কম বয়সের ছেলের বিয়ে নিষিদ্ধ। গ্রামের বেশীর ভাগ মেয়ে এবং ছেলেরা দরিদ্র, তারা খুব সামান্য শিক্ষালাভ করে থাকে অথবা কোন শিক্ষা লাভই করতে পারে না এবং তারা ঐতিহ্যগত সামাজিক প্রথা ও মূল্যবোধের দ্বারা আবদ্ধ, আর বেশীরভাগ গ্রামের মানুষ আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অল্প বয়সে বিয়ে করে। কিন্তু সকল এলাকায় অবস্থা একই রকম নয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক বাল্যবিবাহের হার যে সব এলাকায় বেশী তার মধ্যে মহারাষ্ট্র অন্যতম। ইয়োথ কি আওয়াজের ভিডিও ভলেন্টিয়ার আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে:

মহারাষ্ট্রের ৫২ শতাংশ নারী স্বীকার করেছেন যে ১৮ বছরের আগে তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন, সরকারের জেলা পর্যায়ের গৃহস্থালী এবং ফ্যাসিলিটি সার্ভে (ডিএলএইচএস-৩) রিপোর্ট বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে। আর এই বিষয়টি ঘটেছে তথাকথিত আধুনিক রাজ্য মহারাষ্ট্রে, এখানে পরিবারই একটি মেয়ের জীবন এবং সন্তান ধারনের বিষয়টি নির্ধারণ করে।

কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। ইন্ডিয়ান আনহার্ড (ভিডি ভলান্টিয়ার্স) সম্প্রদায়ের সংবাদদাতা রোহিনি পাওয়ার সম্প্রতি দুইজন বালিকার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে যারা দেখেছে যে তাদের চোখের সামনে তাদের বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তারা উভয়ে কৃতজ্ঞ যে এমনটা তাদের ক্ষেত্রে ঘটেনি:

১২ জন নারী, যাদের সবার বাল্যকালে বিয়ে হয়েছিল , তারা সকলে এই ভিডিওতে অংশ গ্রহণ করেছে, তারা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। এই ভিডিও এবং প্রজেক্ট ছিল ভিডিও ভলেন্টিয়ার কমিউনিটির ভিডিও ইউনিট কর্মসূচির প্রথম কাজ:

ভারতের অনেক গ্রামে উপরের এই ভিডিওটি বড় পর্দার মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে।

ভারতের গ্রামাঞ্চলে বাল্য বিবাহকে সামাজিক কার্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সাধারণত এটিকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। নতুন দিল্লির এক ব্লগার নেহা, লিখেছে:

যদিও এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ এবং ভারত সরকার একত্রে কাজ করে যাচ্ছে, আইন শক্তিশালী করছে এবং মেয়েদের শিক্ষা প্রদান করছে, তারপরেও ভারতের অনেক নেতা বিশ্বাস করে মেয়েদের ধর্ষণের মত বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর এক উপায় হচ্ছে বাল্যবিবাহ।

ইউএনএফপি-এর সূত্রানুসারে যদি বর্তমান হারে বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে বিশ্বে প্রতিদিন ৩৯,০০০ জন হিসেবে প্রতিবছর গড়ে ১ কোটি ৪২ লক্ষ মেয়েকে অনেক অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .