বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই রায়ের প্রতিবাদে জামাত-শিবির সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা শুরু করে। পুলিশের ওপর আক্রমণ, রাস্তা অবরোধ, যানবাহন, দোকানপাট ভাংচুর ছাড়াও তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হিন্দুদের ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। তাদের হামলায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ

চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ-এর সভাপতি দেবাশীষ পালিত জানান, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট, লক্ষীপুর, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও যশোরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি তিন শতাধিক মঠ-মন্দির এবং তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা লুট এবং ভাংচুর চালানো হয়েছে।

: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জামাত-শিবিরের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হিন্দুপাড়া। খোলা আকাশের নিচে তারা এখন আতংক নিয়ে বসবাস করছেন। ছবি মেহদী হাসান খান।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জামাত-শিবিরের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হিন্দুপাড়া। খোলা আকাশের নিচে এখন আতংক নিয়ে বসবাস করছেন হিন্দু সম্প্রদায়। ছবি মেহদী হাসান খান।

জামাত শিবিরের আক্রমণের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বর্তমানে চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বাংলাদেশে নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিছুদিন আগেও কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় হামলার শিকার হয়েছিলেন। এবার যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর রায় ঘোষণার পর আক্রমণের শিকার হলেন হিন্দুরা, যাদের সাথে বিচার কার্যের কোনো সম্পকই নেই। আক্রমণের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন:

রাজাকারের বিচারের সঙ্গে কিন্তু হিন্দুদের কোনো ধর্মীয় সম্পর্ক নেই, অথচ পরিকল্পনা করে হিন্দুদেরকে আক্রমন করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে উস্কে দেয়া। যখনই শোনা গেল যে ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রপতি এদেশ সফরে নিশ্চিতই আসছেন, তখন হিন্দুদের উপর এই আক্রমন শুরু হলো। […]

এখন যদি একই সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে বিপন্ন করে তোলা যায় এবং সেটি ইন্ডিয়াতে সরবরাহ করা যায় তাহলে ইন্ডিয়ার জামায়াত-শিবির তথা শিবসেনা-বিজেপি গোষ্ঠি সেখানে হইচই করার সুযোগ পায়। সেই হইচইয়ে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে একটি অস্থিরতা তৈরির সুযোগ তৈরি হয়।

এদিকে মুক্তমনার ব্লগার গীতা দাস তার এক পরিচিত আত্মীয়ের উদ্বৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার কারণে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে।

human chain

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে মানববন্ধন। ছবি ফেসবুকের আমি হিন্দু পেজ থেকে নেয়া।

হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় দেশের নানা স্থানে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। অনলাইনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। অলি সৈয়দ মাহবুব ফেসবুকে কালের কণ্ঠের সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর শেয়ার করে বলেন:

ভালোই লাগে এদের রক্তের স্রোতে আমি-আমরা বেঁচে আছি। এই সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইদের, এই পুলিশ ভাইদের খুনের রক্তে আমরা নিরাপদ আছি। এরা মরে গেছে বলেই আমাদের মরতে হয় নি। ঢাকা সুরক্ষিত আছে। আরো সুরক্ষিত শাহবাগে আমি যাই-আসি। বাসায় খাই দাই। ভালোই আছি। এদিকে পুড়ে যাচ্ছে ওদের গা-জীবন-স্বপ্ন-স্বাধীনতা! দিগন্ত জুড়ে আমার কেবল অক্ষম  আক্রোশ!

জামাত-শিবিরের হিংস্রতা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার আহবান জানিয়ে সাবরিনা টুইটারে টুইট করেন:

জামাত-শিবির হায়েনার হাত থেকে #দেশ বাঁচান। ওরা #হিন্দু মন্দির ধ্বংস করছে। সংখ্যালঘু #হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করছে। #শাহবাগ।

(লিন্ক)

শেহাব টুইট করেন:

আজকে জামাতের মেনুতে কয়টি হিন্দু পরিবার আছে? আজকের শেফ স্পেশাল কী? ধর্ষণ না অগ্নিসংযোগ? #শাহবাগ #সেভ বাংলাদেশ

বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করেন। সে কথা স্মরণ করে লেনিন টু্ইট করেন:

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই আমাদের ভাই। চলুন জামাত-শিবিরের হাত থেকে তাদের রক্ষা করি।#shahbag http://www.thedailystar.net/newDesign/latest_news.php?nid=45104 …

প্রতিবাদী পোস্টার- ধর্ম যার যার, দেশ সবার।

প্রতিবাদী পোস্টার- ধর্ম যার যার, দেশ সবার।

উনিশ শ’ একাত্তর সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যেসব রাজাকার, আলবদর অংশ নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। জামাত-শিবির শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করে দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আর এর অংশ হিসেবেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করেছে। গত ১০ মার্চ, হাইকোর্ট চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্পদ্রায়ের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে হাইকোর্ট নোয়াখালির সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়।

2 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .