চীনের চলচ্চিত্রে প্রদর্শীত জাপানি আক্রমণ, যার কোন শেষ নেই

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চীনের উপর জাপানের আক্রমণ নিয়ে চীনের বিনোদন শিল্পে একের পর এক চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টি তখন আবার আলোচনায় উঠে আসে, যখন চলচ্চিত্রে এক্সটা হিসেবে অভিনয় করা এক অভিনেতা শী ঝংপেং গত সপ্তাহে সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে, যার বিবরণ অনুসারে সে গত বছরে দুইশো-র বেশী চলচিত্রে জাপানি সৈনিকের ভুমিকায় অভিনয় করেছে [চীনা ভাষায়] এবং এমনকি একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন চলচ্চিত্রে সে আটবার মৃত্যুবরণ করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে যখন পূর্ব চীন সাগরের দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে চীন ও জাপান লড়াই করছে,তখন ১৯৩১ সালে মাঞ্চুরিয়ায় জাপানের আক্রমণ, চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্যে একটি নিরাপদ ও জনপ্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছে। যদিও চীনে তাদের অত্যন্ত কঠোর সেন্সরশিপের মুখোমুখি হতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের পূর্ব ঝেজিয়াং প্রদেশে অবস্থিত হেংডিয়ান ফিল্ম স্টুডিওতে ২০১২ সালে ৪৮টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে যেগুলোর বিষয় বস্তু ছিল চীনে জাপানের আক্রমণ।

চেংডু বিজনেস নিউজ৯-কে [চীনা ভাষায়] গ্রিনটাউন মিডিয়ার জেনারেল ম্যানেজার, ঝঊ উইচেং বলেন “প্রাইম টাইমে ঐতিহাসিক সিনেমা ও গুপ্তচরবৃত্তির কাহিনী দেখানোর ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জাপানি হামলার উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা ছাড়া আমরা আর কি বা তৈরী করতে পারি?

বলা যেতে পারে এসব কারণেই,দর্শকদের শিক্ষিত করার লক্ষে চীনের টিভি চ্যানেলগুলো জাপান বিরোধী চলচ্চিত্রে প্লাবিত হয়ে গেছে। চীনা গণমাধ্যম ও জনগণ, কর্তৃপক্ষের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ধারাভাষ্যকার ইউ ডেকিং আরো ব্যাখ্যা করেন [চীনা ভাষায়] যে, “চীনের চলচ্চিত্র শিল্পে মূলত দুটো দিক রয়েছে। একদিকে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ; আবার অন্যদিকে, কিছু সাধারণ বিষয় সরকারী অনুদান পায়, যেমন জাপানের আক্রমণ বিষয়ক চলচ্চিত্রগুলো। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্যে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন সেগুলোর জন্য সেন্সরের ছাড়পত্র বা সরকারী অনুদান পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

A screenshot of the report about movie extra who has acted as a Japanese soldier over 200 times last year(from youku)

ভিডিও হোস্টিং ওয়েবসাইট ইউকুর একটি স্ক্রিনশট যেটি টিভিতে এক্সট্রা শী ঝংপেং-কে নিয়ে। গত বছর সে ২০০ টির মত ছবিতে জাপানি সৈনিকের ভুমিকায় অভিনয় করেছে।

শিক্ষা নাকি মগজ ধোলাই?

চীনের মাইক্রো-ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েবো ওয়াংগির একজন ব্যবহারকারী এই বিষয়ে এত বেশী বেশী চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন [চীনা ভাষায়]:

日军侵华虽然值得我们每一个中国人铭记,但我们是不是真的有必要拍出N*N部出来,并变着法的来丑化日本?让本来是只该对日本法西斯的憎恶,升华成对整个日本民族的憎恶。

যদিও জাপানের আক্রমণ চীনের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে, তবে এই বিষয়ে এত বেশী বেশী চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং এই ধরনের কাহিনী প্রদর্শন করে বিভিন্নভাবে জাপানকে অশুভ প্রমাণ করার সত্যিই কি কোন প্রয়োজন আছে? এটা শুধু জাপানী ফ্যাসিবাদীদের প্রতি নয়, সমগ্র রাষ্ট্রটিকে ঘৃণা করতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে ।

লেইয়াং৫১৬৭৮৯৯৯১, ওয়েবোতে ওয়াংগিতে চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর সত্যতা নিয়ে, প্রশ্ন করেছে [চীনা ভাষায়]:

别人的电影都是反射战争的残酷性和非人性,让观众对战争有理性的反思。我们的电影反映的是杀戮的正义性和领导人的英明伟大,让观众对那段真实的历史从始至终都稀里糊涂。没办法,历史这个小姑娘我们就是要打扮成这样的,尔等胆敢乱讲真话,拉出去枪 毙!

অন্যান্য দেশের যুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রে নিষ্ঠুরতা এবং অমানবিকতার প্রতিফলন ঘটে, যা দর্শকদের যুদ্ধ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। সেখানে আমাদের চলচ্চিত্রে হত্যার যৌক্তিকতা এবং বীর যোদ্ধাদের মহিমা প্রদর্শন করা হয়, যা কিনা দর্শকদের আসল ইতিহাসের প্রতি সন্দিহান করে তোলে। কিন্তু আমরা কি করতে পারি? ইতিহাস নামক এই ছোট্ট মেয়েটিকে তারা নিজের ইচ্ছে মত পোষাক পরায়, যে সত্য বলার সাহস দেখাবে তাকেই সরিয়ে দেয়া হবে বা হত্যা করা হবে।

ওয়াংগেই১৯৭৬, ওয়াংগি ওয়েইবোতে এই একই আবেগের প্রতিধ্বনি করেছে [চীনা ভাষায়]:

抗日片不真实让我们觉得抗战是场游戏,这会误导我们的人民。这是对历史的背叛,强调历史的真实能让我们更清楚的去面对明天!日本拍得日美之间的战争和德国拍得德苏之间的战争,美国人近几年拍得二战大片中,都真实得让人对战争和人性进行深层次的思考。这才是一个民族自信的源泉!

সত্য বিবর্জিত এই ধরনের জাপানি আক্রমণ প্রদর্শন, আমার কাছে একটি খেলার মত মনে হয়, যা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এটি ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। সঠিক ইতিহাস জানলে আমরা আরো পরিষ্কারভাবে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে পারব। জাপানের নিজস্ব জাপান বনাম যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই বিষয়ক চলচ্চিত্র, জার্মানীর অভ্যন্তরে নির্মিত জার্মান-সোভিয়েত যুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর নির্মিত যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রগুলো, যুদ্ধ এবং মনুষ্যত্ব বিষয়ে গভীরভাবে মানুষের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এটি হল একটি দেশের আত্মবিশ্বাসের উৎস।

চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের ফলাফল:

অর্থনীতিবীদ 李子暘, চীনা চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের সাধারণ অবস্থাটা ব্যাখ্যা করে ওয়েবোতে [চীনা ভাষায়] মন্তব্য করেছে:

抗日剧泛滥是管制的闹剧。投资影视,不是闹着玩的。万一题材通不过,百万千万甚至上亿的投资就要打水漂。谁也受不了。因此,就只好跟 风,题材政治安全是首要考虑的条件。既然抗日题材政府允许,那就赶紧拍。在中国做影视,创新是最可怕最疯狂的,跟风无可指责。

চীনা চলচ্চিত্রে সেন্সরশিপের ফলাফল হচ্ছে জাপানি আক্রমণ নিয়ে এত বেশী বেশী চলচ্চিত্র নির্মাণ। চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ কোন ছেলেখেলা নয়। যদি চলচ্চিত্র সেন্সরের ছাড়পত্র না পায়, তাহলে লক্ষ, লক্ষ, এমনকি কোটি টাকাও জলে যাবে। কেউ এই ধরনের ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে রাজি নয়, তাই চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে অন্য কোন পথ খোলা থাকে না। একটি বিষয় পছন্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিরাপত্তাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । যেহেতু সরকার জাপান বিরোধী চলচ্চিত্রগুলোকে সাধুবাদ দিচ্ছে, তাহলে কেন তা নির্মিত হবেনা। চীনে কারো পক্ষে চলচ্চিত্রে নতুনত্ব আনা সবচেয়ে ভয়ংকর ও মাথা খারাপ করা কাজ। তাই কেউ যদি, যা চলছে তাই অনুসরণ করে তাহলে তাকে দোষ দেয়া যায় না।

চেংডু বিজনেস নিউজে ধারাভাষ্যকার 于德清 সেন্সরশিপের প্রতি তার শঙ্কা প্রকাশ করেছে[চীনা ভাষায়]:

问题是,过度的行政管制,只会抑制创新和产业的升级。造成抗日剧的低水平和无聊重复的原因,大抵如此。其一个直接后果是,电视的吸引力下降,人们远离沙 发。近年来,大中城市电视开机率已经明显下降。年轻人都上网看美剧、韩剧了。可是,有些管制者仍然不明白,他们把市场管死了,自己还有什么用呢?

সমস্যাটা হল অত্যন্ত বেশী প্রশাসনিক বিধিনিষেধ, নতুনত্ব তৈরী ও শিল্প উন্নয়নে বাঁধা দেয়। এ জন্যেই নিম্নমানের ও নকল সর্বস্ব জাপান বিরোধী চলচ্চিত্র তৈরী হয়। আর তার সরাসরি ফলাফলটা এই যে, মানুষের টেলিভিশনের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। তারা টেলিভিশন দেখার সোফাটা থেকে দূরে থাকে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে, মাঝারি ও বড় শহরগুলোতে টেলিভিশন দেখার হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। নতুন প্রজন্ম, ইন্টারনেটে যুক্তরাষ্ট্র এবং কোরিয়ার চলচ্চিত্রগুলো দেখছে। কিন্তু এর পরেও কিছু কিছু নির্মাতা বোঝেনা যে তারা তাদের বাজারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এতে তাদের লাভ কি?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .