সিরিয়ায় তীব্র যুদ্ধের চরম মূল্য দিচ্ছে শিশুরা

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১/১৩ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ বিশেষ কাভারেজের অংশ

চিলড্রেন রাইটস পোর্টাল.-এর এক রিপোর্টে অনুসারে বিগত দশ বছরে যুদ্ধের কারণে প্রায় এক কোটি শিশু নিহত হয়েছে। এই সাইটটি যুদ্ধের শিকার শিশুদের সাধারণ অপরাধের শিকার শিশু, সৈনিক, বাস্তুচ্যুত, অনাথ, আহত অথবা পঙ্গু,বন্দী অথবা শোষণের শিকার (যৌন শোষণ কিংবা জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা)ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভক্ত করে থাকে। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও ভিয়েনা ঘোষণা এবং কর্মসূচি পরিকল্পনা (ভিডিপিএ), এবং ২০ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে স্বাক্ষর করা জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদ সত্ত্বেও, সারা বিশ্বে শিশুরা ক্রমাগত যন্ত্রণা ভোগ করে যাচ্ছে।

শিশু অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন-এর ১৯ নাম্বার ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো শিশুদের সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক আঘাত থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই যথাযথ সাংবিধানিক, প্রশাসনিক, সামাজিক এবং শিক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

বিস্মৃতির শিকার

সিরিয়ার গোরস্থানে ফেরেশতার বাস। সূত্র: টুইটারের @এনএমসিরিয়া

মার্চ ২০১১-এ, বাসার আল আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে যখন সিরিয়ার বিপ্লব গর্জে ওঠে, তখন শিশুরা ছিল আক্রমণ, অত্যাচার ও খুনের প্রথম শিকার। এইচআরডাব্লিউ-এর সংবাদ অনুসারে: জুন ২০১১–এ “ আমরা যে সমস্ত বীভৎস দৃশ্য দেখেছি, তেমনটা আর কখনো দেখিনি”:

সরকারের পতন দাবী করে দেওয়ালে গ্রাফিতি আঁকার অভিযোগে ১৫ জন শিশুকে গ্রেফতার করা এবং তাদের উপর অত্যাচার চালানোর প্রতিক্রিয়ায় দারা নামক শহরে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। ঠিক তখন থেকে এর জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী পদ্ধতিগত ভাবে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর গুলি চালায়। কেবল মাত্র দারা প্রদেশেই নিরাপত্তা বাহিনী ৪১৮ জনকে হএবং সমগ্র সিরিয়ায় ৮৮৭ জনকে ত্যা করেছে। ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, সে সংখ্যাটি সঠিকভাবে যাচাই করা অসম্ভব।

এক হিসেবে এই ঘটনার পর এ পর্যন্ত, ৪৩৫৫ জন শিশু নিহত হয়েছে [১৫/১/২০১৩ তারিখ পর্যন্ত] সিরিয়ার বিপ্লবে শহীদের তালিকার এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে ৪৩৫৫ জন নিহত হয়েছে, এছাড়াও হাজার হাজার আহত, গ্রেফতার, অথবা পরিবারহীন হয়েছে, অথবা চিকিৎসা সাহায্য প্রাপ্ত কিংবা মানবিক ত্রাণ লাভ করেনি। যেমন বলা যায় হিউম্যান রাইট ওয়াচ, প্রমাণ প্রদর্শন করেছে, যেসব প্রমাণে দেখা যাচ্ছে যে শাসকদের বিমান বাহিনী থেকে শিশুদের উপর গুচ্ছ বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।

ফেরেশতা…সেই সমস্ত ফেরেশতা, যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে…এক অদ্ভুত যুদ্ধে সিরিয়ার নাগরিকদের যে উচ্চ মূল্য প্রদান করতে হচ্ছে…সূত্র: ফেসবুকের নিনো ফেজ্জা সিনেরিপোর্ট-এর

১৮ জানুয়ারি তারিখে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা ইউনিসেফের আঞ্চলিক প্রধান মারিয়া ক্যালিভিসবিবৃতি প্রদান করেন:

“ এই সপ্তাহে সিরিয়া থেকে আসা ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি সংবাদ দেশটিতে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুদের যে মূল্য প্রদান করতে হচ্ছে তা তুলে ধরছে।

ঘটনা হচ্ছে, সিরিয়ার শিশুরা দেশটিতে ২২ মাস ধরে চলতে থাকা যুদ্ধের কারণে বিস্মৃতির শিকার। দেশটিতে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিশু প্রাণ হারাচ্ছে; এবং সিরিয়ার শিশুদের সামাজিক প্রচার মাধ্যমগুলোতে খারাপ সংবাদ পোস্ট করা ছাড়া আর উপায় নেই।

এখানে টুইটারে আসা সিরিয়ার নেট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়ার একটি রাউন্ড আপ/আলোচনা তুলে ধরা হল রয়েছে:

১৫জানুয়ারি ২০১৩: @আর আলাফ:গতকাল আসাদ সরকার # সিরিয়ায় অন্তত ২১ জন শিশু এবং ১৩০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে খুন করেছে। যাদের বেশীর ভাগই গৃহে এবং বেকারিতে নিহত হয়।
১৩ জানুয়ারি ২০১৩: @রেভুল্যুশন সিরিয়া: ৪০০০ শিশু সহ ৫২ হাজারের বেশী নিরস্ত্র নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা কোন গৃহযুদ্ধ নয় বরং তা মানবতার বিরুদ্ধে এক বিশাল অপরাধ।#সিরিয়া

১২ ডিসেম্বর ২০১২: @রানাকাবানি৫৪ আজ খুন হওয়া ১২০ জন নাগরিকের মধ্যে ২৭ জন শিশু + ১৩ জন মা ছিল, যাদের গণহত্যাকারী #আসাদ খুন করেছে। এটা আমাদের জনগণের জন্য বড়দিনের উপহার #সিরিয়া #আসাদক্রাইম।

১২ ডিসেম্বর ২০১২: @ফারগার: আজকের দিনটি বাদ দিয়ে, কেবল বড়দিনের সময় থেকে এই পর্যন্ত ১০৩ জন শিশু নিহত হয়েছে। #চাইল্ডভিকটম

সিরিয়াতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুকে খুন করা হয়েছে।

২৫ মার্চ ২০১১, বিশ্ব প্রায় এক মাস কারাগারে অন্তরীন থাকা হামজা আলি আলখাতিব এর উপর চালানো অত্যাচার এবং তার মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারে, হামজা ছিল ১৩ বছরের এক সিরীয় বালক, অভিযোগ রয়েছে দারা শহরের প্রশাসনের হাতে বন্দী অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।

তার দেহে অজস্র আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়, যার মধ্যে ভাঙ্গা হাড়, দেহে গুলির আঘাত, শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া চিহ্ন এবং গোপনাঙ্গ আঘাতের চিহ্ন ছিল।

হামজার শহীদ হবার কাহিনীর ঠিক এক বছর পরে, ২৫ মে, ২০১২ তারিখে আল- হোউলা গণহত্যা সংঘঠিত হয়, এই ঘটনায় ১০৮ জন নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় একটিভিস্টরা বাসার-আল আসাদের বাহিনীকে দায়ী করে, হোমসের আল হোউলা নামক এলাকায় নিহত এই ১০৮ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, ৩৪ জন নারী এবং ৪৯ জন শিশু ছিল (জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী]। পরবর্তী এই ফুটেজে [সতর্কতা;গ্রাফিক ফুটেজ, যার ভেতরে শিশুর মৃত্যু দৃশ্য রয়েছে] গণহত্যার পরের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে এক শিশুর মৃত্যু এবং রক্তাক্ত মানব শরীর প্রদর্শিত হয়েছে।

সিরিয়ার শিশুরা দেশটির প্রাপ্ত বয়স্কদের যুদ্ধের মূল্য প্রদান করছে. সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিশুদের সংখ্যা এখন উপচে পড়ছে, কারণ তারা কখনোই ধারণা করেনি যে তারা এরকম এক পরিস্থিতিতে পড়ে যাবে। ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস নামক সংস্থা ডিসেম্বর ২৮, ২০১২ তারিখে তাদের ফেসবুকের পাতায় লিখেছে :

এতদিন পর্যন্ত সিরিয়ায় আসাদের চাপানো যুদ্ধে প্রায় ৪০০০ শিশু নিহত হয়েছে, হাজার হাজার শিশু পঙ্গু এবং আহত হয়েছে এবং সকলে প্রায় মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও তারা আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে, বিশ্বের নেতাদের কাছে প্রশ্ন একটা বিপজ্জনক সঙ্কেত তৈরীর জন্য আর কতগুলো শিশুর খুন হওয়া প্রয়োজন'? বিশেষ করে এমন এক শাসকের বিরুদ্ধে, যারা শিশুদের বৈধ লক্ষ্যবস্তু ভাবে।

সিরিয়ার শিশুদের রক্ষার জন্য অনেক উদ্যোগ এখন সহজলভ্য। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় শিশুদের জন্য গরম কাপড়, জুতা, কম্বল সরবরাহ করার জন্য নাগরিকরা সেভ দি চিলড্রেন-এ , অর্থ দান করতে পারেন.। শীতের ত্রাণসামগ্রী- বিশেষত সদ্যজাত শিশুদের জন্য শীতের ত্রাণসামগ্রী এখন সহজলভ্য।

আশা করি যে, এই বিষয়ে আমরা একটা ভিন্নতা গড়ে দিতে পারব, যেমনটা টুইটারে লেয়লা আশা প্রকাশ করেন:

@লেইলা_না: সেই সব দিনের অপেক্ষায় আছি যে দিন কম্পিউটার খুলে সুন্দর ওই সব শিশুদের নির্মম ভাবে খুন হতে দেখব না #দিসইজসিরিয়া

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১/১৩ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .