অভিনেতা কমল হাসানের পরিচালনা ও সহ-প্রযোজনায় বলিউডের বড় বাজেটের ছবি বিশ্বরূপম মুক্তির আগেই শিরোনাম হয়েছে — এবং ভুল সব কারণের জন্যে। ২০১২ সালের জুন মাসে নির্মীয়মান চলচ্চিত্রটি তামিলনাড়ুর হিন্দু মাক্কাল কাচি নামে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। তারা ছবিটির শিরোনাম পরিবর্তনের দাবি করেছিল।
কমল হাসানের সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহের সাথে সাথে ডিটিএইচ (স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সরাসরি বাড়িতে) এ মুক্তির পরিকল্পনা করার পর প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সমালোচনা ও হুমকির সম্মুখীন হয়। তবে সিনেমাটির বিরুদ্ধে অধিকাংশ অভিযোগ এসেছে তামিলনাড়ু মুন্নেত্রা কাযাঘাম (টিএমএমকে) সহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠণের পক্ষ থেকে যারা এই ছবিটিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের চিত্রায়ণ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে ২০১৩ সালের ২৩শে জানুয়ারি তারিখে যখন কমল হাসানের বিশ্বরূপম ছবিটির বড় পর্দায় মুক্তি ১৫ দিনের জন্যে তামিলনাড়ু সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। সরকার বলেছে যে সম্ভাব্য আইনশৃংখলা পরিস্থিতি প্রতিরোধের জন্যেই তারা এটা করেছে। ২৫শে জানুয়ারি ২০১৩ তারিখের এর তামিল সংস্করণটি মুক্তির আগেই প্রথম সপ্তাহের জন্যে সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ অগ্রিম বুক করা ছিল। তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা নিষেধাজ্ঞাটির পক্ষাবলম্বন করেছেন।ছবিটি ঘিরে যে বিরোধ ও রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে তার নিন্দা করে কমল হাসান বলেন, কোন বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত মুসলমানের এই ছবিটি নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়। হাসান বিষয়টি মাদ্রাজ হাইকোর্টে উত্থাপন করে অবিলম্বে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চেয়েছেন। গত ২৯ জানুয়ারি তারিখে তামিলনাড়ুতে ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর পর নিষেধাজ্ঞাটি মাদ্রাজ হাইকোর্ট তুলে নেয়। কিন্তু পরে তা ৩০ জানুয়ারিতে পুনর্বহাল করা হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা নিষেধাজ্ঞাটিকে বাক স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে নিন্দা করে কমল হাসানকে সমর্থন করেছে।
মালয়েশিয়া এবং শ্রীলংকার কর্তৃপক্ষও ‘বিশ্বরূপম’-এর প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
তামিলনাডু বাদে সিনেমাটির তামিল সংস্করণ ২৫শে জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে ভারতসহ অন্যান্য দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিশ্বরূপম-এর হিন্দি সংস্করণটি আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মুক্তি পাওয়ার কথা।
এখানে টুইটারে প্রকাশিত কিছু প্রতিক্রিয়া:
মানিশবাইটস: নাটক চলছে… কেন্দ্র এবং তামিলনাডু সরকার শিং বাগিয়ে আছে। কিন্তু তাদের কোন একজন (কী) আমার #বিশ্বরূপম ছবিটি দেখার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবে?
আকাশটেকার০০১: পুন:টুইট @শেখরকাপুর: বিশ্বরূপম চলচ্চিত্রটি নির্মাতাদের কাছে এক ভয়ংকর বার্তা পাঠিয়েছে। তারা এখন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক বা ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল কোন কিছু স্পর্শ করবেন না।
রোটকস: এছাড়াও: বিশ্বরূপমকে ঘিরে বিতর্কের সবই কী নিয়ে? আপনি সন্ত্রাসী না হলে ছবিতে নেতিবাচক কিছু নাই। সুন্দর উপস্থাপন @মাইমালিশকা
জারা আহমেদ: #বিশ্বরূপম যারা দেখছেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ… এটা উপভোগ করুন। কিন্তু বুঝতে হবে এটা একটা কাল্পনিক কর্ম, আর (তাই) এটাকে ঠিক সেভাবেই নিন।
ধারাত্রিভেদি: পুন:টুইট @ওকিউস্পট: শিল্প সব সময়ই শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া উচিৎ এবং সৃজনশীলতায় লাগাম থাকা উচিৎ নয়। কমল হাসান এবং #বিশ্বরূপমকে আমি সমর্থন করি। তার শিল্প নৈপুণ্য অতুলনীয়। বিশ্বের এটা দেখা দরকার।
ধিনা২২৫: পুন:টুইট @প্রকাশরাজ: চলচ্চিত্র ভ্রাতৃসংঘের কুশীলব এবং পরিচালকরা বিশ্বরূপমের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন কাদা ছোড়াছুড়ি খেলা চলছে। চলুন ন্যায়বিচারের জন্যে একসঙ্গে অপেক্ষা করি।
ব্লগার ফারজানা ভার্সি ক্রস কানেকশনে উল্লেখ করেছেন যে, এই দীর্ঘ কাহিনীটি ছিল চরমপন্থী লোকদের (যারা তাদের মতাদর্শ সমর্থনের জন্যে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী খুঁজে পেয়েছে) একটি প্রদর্শনী:
মানুষের সবচেয়ে বড় ভুলটি হলো এই চরমপন্থী মতামতকে বৈধতা দেওয়া। মামলাটি আদালতে থাকাকালীন মিডিয়া কিভাবে এটা নিয়ে আলোচনা করতে পারে? চলচ্চিত্র নির্মাতা কী সংবাদ সম্মেলন করেছেন?
এই ব্লগার কামাল হাসানের দেশত্যাগের বিবৃতিটিকে প্রশ্ন করেছেন:
ধর্মনিরপেক্ষ আশ্রয়স্থলের জন্যে দেশত্যাগের কথা ভাবার মানে হলো চরমপন্থীদের মতো চিন্তা করা। তারা মানসিক ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা ধর্মনিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
মধ্যদক্ষিণপন্থী ভারত ব্লগ বলেছে:
এটা খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার যে এই সংবাদ সম্মেলনে এবং পথচারী আক্রমণগুলোতে কমল এবং তার সিনেমার বিরুদ্ধে কতগুলো প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল। আমার সর্বশেষ পোস্টে আমি যেমন বলেছি আমি কমলের রাজনৈতিক দর্শন – যার কিছু কিছু সত্যিই স্থূল মনে হয় – সমর্থন করি না। কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো এই মধ্যযুগীয় উগ্র জনতাকে বন্দুক হাতে নিয়ে আমাদের বাকি সবাইকে বলার সুযোগ দেওয়া যাবে না, আমরা কী দেখবো আর কী দেখবো না। কমল বা তার সিনেমা নিয়ে আমরা যাই ভাবি না কেন এই উগ্র জনতা আমাদের বাকি সবাইকে নসিহত করার সুযোগ পেতে পারে না।