- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সিরিয়ার দেওয়ালে গ্রাফিতি যুদ্ধ

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., সিরিয়া, ছবি তোলা, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, শিল্প ও সংস্কৃতি

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১/২০১২ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ [1]

গ্রাফিতি হচ্ছে এক শিল্প যা কিনা নাগরিক প্রতিবাদের এক শান্তিপূর্ণ প্রকাশ। যদিও সিরীয় বিপ্লবের এক [1] সহজাত মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ আছে; সাথে এটা শৈল্পিক দিক দিয়ে এক বিপ্লব। চিন্তার একটি দিককে প্রকাশ করার জন্য পেইন্টিং অন্যতম এক পদ্ধতি। এটা একটি চিন্তাকে তুলে ধরার অথবা এই ধরনের চিন্তার সাথে নাগরিকদের যুক্ত করার দ্রুত এক মাধ্যম।

গ্রাফিতিকে প্রকৃত ক্ষমতা প্রদান করার মধ্যে দিয়ে আসুন স্মরণ করি যে আগুন সিরীয় বিপ্লবকে প্রজ্বলিত করেছে, তার কথা। ২০১১ সালে অঙ্কিত দা’আরার [2] এক বিখ্যাত গ্রাফিতি, স্কুলের দেওয়ালে সরকার বিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য অন্তত ১৫ জন স্কুল ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং স্থানীয় সরকার এই ব্যাপারে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাদেরকে প্রদান করা শাস্তিতে ছোট্ট শহরটি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল এবং হঠাৎ করে সিরিয়া, আরব বসন্তে [3] বিদ্রোহের এক প্রথম শাক্তিশালী স্বাদ লাভ করে।

[4]

সিরিয়ার গ্রাফিতি, “ডাক্তার, আপনার পালা আসছে,” এখানে ডাক্তার হিসেবে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি (এবং চোখের ডাক্তার) বাসার আল আসাদকে উল্লেখ করা হচ্ছে। সূত্র:ইএ ওয়ার্ল্ডভিউ [4]

গ্রাফিতি আরেক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে,যেখানে সরকার এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীরা উভয়ে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যবহার করছে। আল-আখবার [5] এর সূত্রানুসারে:

সিরীয় কর্তৃপক্ষ এবং গ্রাফিতি অঙ্কনকারীরা দেশটির দেওয়াল দখলের খেলায় লিপ্ত। সিরিয়ার বিক্ষোভকারীরা দেওয়াল সরকার বিরোধী স্লোগানে ভরিয়ে দিয়েছে, এদিকে কর্তৃপক্ষ তা মুছে ফেলার জন্য দ্রুত দেওয়াল রঙে ঢেকে দিচ্ছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করছে, এদের মধ্যে এক রহস্যময় ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত, যার ছদ্মনাম স্প্রে ম্যান। যদি আপনি সিরিয়ায় রঙ কিনতে যান, তখন আপনার পরিচয় পত্র সাথে রাখতে ভুলবেন না। যদি ক্রেতা তার বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পারে, তাহলে বিক্রেতা তার কাছে রঙ বিক্রি করতে অস্বীকার করে এবং এই ক্রয়ের কারণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ক্রেতাকে হলফনামা (এফিডেভিট) করতে হয়।

এছাড়া গ্রাফিতি ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে। যেমন উদাহরণ, সিরিয়ার একটিভিস্ট একটি গ্রুপ তৈরি করেছে যার নাম “اسبوع غرافيتي الحريـّة سوريا –এর অর্থ গ্রাফিতি স্বাধীনতা সপ্তাহ [6]“।

গ্রাফিতি:জনতার দেওয়াল।

কোয়াপাহ [7],রাজনীতি,বই এবং নাগরিক সমাজের ঘটনাবলী বিষয়ক একটি ব্লগ, সেখানে লেখা হয়েছে :

রাজনীতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের সময় গ্রাফিতি স্বয়ং নিজে বিকশিত হতে থাকে এবং তা কর্তৃপক্ষের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে জনতার ক্ষমতার এক ধরন। একজন অথবা একদল শিল্পী ব্যস্ত রাস্তার দেওয়ালে নিজেদের বার্তা তুলে ধরার উপায় হিসেবে ছবি বা লেখা কিংবা উভয় মাধ্যমকে ব্যবহার করে, যেগুলো বেশীরভাগ সময় তীব্র সমালোচনাপূর্ণ হয়ে থাকে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার এক উপায় হিসেবে গ্রাফিতির ক্ষমতা অনেক, এবং তা সরকার ও শাসন ব্যবস্থার জন্য আশঙ্কা বৃদ্ধি করছে। রাস্তার কণ্ঠস্বরকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য নিপীড়ন মূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এর এক সেরা উদাহরণ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সমাজ বিরোধী আচরণ আইন ২০০৩ এবং সে দেশের এক সংসদ এক আইনে স্বাক্ষর করেন, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “গ্রাফিতি কোন শিল্প নয়, একটা অপরাধ”।

[8]

এল টেনিন-এর বাসার-এর ছাপচিত্র (স্টেনসিল), এর ঠিক পাশে লেখা রয়েছে’ জনগণ সরকারে পতন চায়” এই গ্রাফিতি বাক্যটিকে বিখ্যাত করেছে। যা কিনা ২৫ জুলাই, ২০১১-এ আঁকা। সূত্র : ব্লগসুজিইনদিসিটি [8]

মার্চ -২০১১ থেকে সিরিয়ার জনগণ নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য রাস্তায় নেমে আসে, যে সময় সিরিয়ার বিভিন্ন শহরের রাস্তা হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়, যারা স্বাধীনতার দাবীতে স্লোগান দিতে থাকে। এদিকে অন্যরা দেওয়ালে তাদের কণ্ঠস্বর আবিস্কার করে। আপনি বিভিন্নভাবে আপনার বক্তব্য ছড়িয়ে দিতে পারেন। রাস্তায়, যেখানে আপনি আওয়াজ করতে, নাচতে, গান গাইতে পারেন; এছাড়াও আপনি দেওয়ালে রঙ দিয়ে ছবি আঁকতে, লিখতে এবং ব্যক্তিগত চরিত্রকে তুলে ধরতে পারেন; আসাদপন্থী এবং আসাদ বিরোধী বার্তা এখানে প্রকাশ, সংশোধন এবং অঙ্কন করা হয়েছে, এই বিষয়টি প্রদর্শন করার জন্য যে, উভয়পক্ষ একই স্থান শেয়ার করছে।

[9]

সিরিয়ার দামেস্কে এফএসএ কর্তৃক অঙ্কিত গ্রাফিতি : “অনিবার্য কারণে আমরা দুঃখিত…আমরা আপনার জন্য মারা যাব।” সূত্র: দি রিভলটিং সিরিয়ান ব্লগ [9]

আসাদ পন্থী এবং বিরোধীদের বিপ্লবাত্মক গ্রাফিতি

হ্যাপি আরব নিউজ সার্ভিস ব্লগ সংবাদ [10] প্রদান করছে যে আসাদ বিরোধী গ্রাফিতি যুক্তরাষ্ট্রের জীবনবীমা এজেন্টের ব্যবসায় দেখা গেছে। একদিন পরে আসাদ-পন্থী এক সাংবাদিক ফেসবুকে বিপ্লব-পন্থী গ্রাফিতি পোস্ট করে যেটা গার্ডেন গ্রোভার ট্রাভেল এজেন্সিতে আঁকা হয়েছে, যার মালিক এক সিরিয়-আমেরিকান এক নাগরিক, যে কিনা বর্তমান শাসকের প্রতি প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছে ।

অরেঞ্জ কাউন্টির সিরীয়-আমেরিকান নাগরিকরা সিরিয়ার বিপ্লবে দুই ভাগে বিভক্ত। আমরা নিউপোর্ট বীচের সিরীয় কনসুলেট–এর সামনে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ এবং সরকারের সপক্ষে মিছিল অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি। সম্প্রতি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া সিরীয় নাগরিকদের এই বিভাজন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিরিয়ায় একটি প্রবাদ আছে : “الحيطان دفاتر المجانين” যার অর্থ হচ্ছে “দেওয়াল হচ্ছে উন্মাদের আবর্জনা”; তবে, এখন তা সিরীয় নাগরিকরা মুক্ত ভাবে মত প্রকাশ বিনিময় স্থানে পরিণত করছে!

সিরিয়ার কয়েকটি শহরের দেওয়ালের আঁকা কিছু পেইন্টিং-এর ছবি দেখিয়ে আমি বিদায় নিচ্ছিঃ

[11]

বিপ্লবের সাথে থাকুন। সূত্র: ২৯ আরব লেটার্স ব্লগ [11]

[12]

আসাদ গ্রাফিতি।এর অর্থ হচ্ছে: “( হয় সমর্পণ কর) আসাদের কাছে অথবা আমরা দেশটাকে জ্বালিয়ে দেব”. সূত্র: দি রেভ্যুলুশন সিরিয়ান ব্লগ [12]

[13]

দামেস্কের গ্রাফিতি, সিরিয়া, এফএসএ-এর (ফ্রি সিরিয়ান আর্মি) লোগো বহন করছে, যেখানে লোগোর নীচে লেখা আছে “ আমরা আসছি”। লোগোর উপরে দেওয়ালে লেখা আছে: “দিন ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে [13]” (যার মানে বাসার তুমি দিন গুনতে শুরু কর) সূত্র :টাম্বলারের পুট এ স্পেল অন ইউ-এর।

[14]

আলেপ্পোর সায়েন্স ফ্যাকাল্টির দেওয়ালে বিপ্লবাত্মক ভাষায় লেখা আছে, আসাদের গুণ্ডার যা লিখেছিল তা সংশোধন করে এটা লেখা হয়েছে। সূত্র: ফ্রিডম গ্রাফিতি উইক সিরিয়ার [6] ফেসবুকের পাতা

[15]

মার্চ ২০১১ এ, সিরিয়ার গণজাগরণের সময় একজন গ্রাফিতি শিল্পী দেওয়ালে লিখে রেখেছে “বাসার নিপাত যাক”,। ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া।

[16]

হামা-তে আসাদের গুণ্ডাদের লেখা এক গ্রাফিতি: “আসাদ ছাড়া আর কেউ সিরিয়া শাসন করতে পারবে না” সূত্র: ফ্লিকারের ফ্রিডমহাউজ

[17]

আসাদের গুণ্ডাদের গ্রাফিতি: কেবল বাসার –আমরা মৃত মানুষ। সূত্র: ফ্লিকারের ফ্রিডমহাউজ

[18]

#সিরিয়ায় বাসার আসাদের বিরুদ্ধে লেখা এক গ্রাফিতি। সূত্র: ফ্লিকারের সাবরি খালেদ-এর

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১/২০১২ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ [1]