ভারতের বিহার প্রদেশের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার (২৩৯ মাইল) পূর্বে অবস্থিত সুন্দরবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত নারীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বিহারের জনসংখ্যা ১০ কোটি ৪০লক্ষ – যে কোন ইউরোপীয় দেশের তুলনায় বেশি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ।
জুলাই মাসে উত্তর প্রদেশের (ইউপি) বাঘপাত জেলায় বালিকাদের জন্যে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর সাম্প্রতিকতম নিষেধাজ্ঞাটি এসেছে। এর পরের নিষেধাজ্ঞাটি ঘটেছে আগস্ট মাসে রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার উদয়পুরভাতি এলাকায় ১৮ বছরের কম বয়েসী বালিকাদের মোবাইল ফোনের জন্যে, জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাজস্থানে নিষেধাজ্ঞাটি জারি করা হয়েছে যাতে মেয়েরা অত্যাধিক সেলফোন ব্যবহার করে “নষ্ট” না হয়ে যায়। উত্তর প্রদেশে মোবাইল ফোনের নিষেধাজ্ঞায় পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কেনাকাটা করতে যাওয়া ৪০বছরের কম বয়সী নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভূক্ত। সামগ্রিকভাবে নিষেধাজ্ঞাগুলোর লক্ষ্য নারীর স্বাধীনতা এবং গতিশীলতা। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন:
দেখা গিয়েছে মোবাইল ফোন মেয়েদের যে ‘অপ্রয়োজনীয়’ স্বাধীনতা দিয়েছে তা আমাদের সংস্কৃতি অনুসরণ করা থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সবাই একথাটি মেনে নিয়েছে বলে গ্রামে পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।
বিহারে সাম্প্রতিকতম ঘটনায় গ্রাম্য কর্মকর্তারা দাবি করেছে মোবাইল ফোন দম্পতিদের পালিয়ে বিয়ে করার সুযোগ সৃষ্টি করে “সামাজিক পরিবেশের অবনমন” ঘটাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে এসব গ্রাম থেকে “পালিয়ে বিয়ে করার” হার বৃদ্ধি পেয়েছে। পঞ্চায়েতটি কোন (অবিবাহিত) মেয়ে রাস্তায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ধরা পড়লে তার জন্যে ১০,০০০ রুপি (প্রায় ১৫,০০০ টাকা) এবং বিবাহিত মহিলাদের জন্যে ২,০০০ রুপি (প্রায় ৩,০০০ টাকা) জরিমানা আরোপ করেছে।
নিখিল ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সহ-সভাপতি জগমতি সাংওয়ান বলেছেন যে এধরনের গ্রাম কাউন্সিলগুলোর প্রধান পুরুষরা “নারীদেরকে আধুনিকতা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চান।” তিনি বলেছেন সমাজের শুধুমাত্র একটি অংশকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা এধরনের আইন আইনসঙ্গত নয়, জানিয়েছে ইন্ডিয়া ইংক।
টেকডার্ট (প্রযুক্তির ময়লা) যেমন রিপোর্ট করেছে: এটা “সমাজের নৈতিক বন্ধনসূত্রের অবক্ষয়” সম্পর্কিত নয়, বরং শক্তি সম্পর্কিত এবং বিশেষ করে গ্রামে প্রথাগত পুরুষ শক্তির ক্ষয়।
একটি সুস্থ সমাজে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করা যায় না – এই কথা বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছে।
ভারতের কিছু কিছু টুইটার প্রতিক্রিয়ায় এই নিষেধাজ্ঞাতে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে এবং গ্রামের মুসলিম প্রধান জনসংখ্যাকে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে মনে হলেও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কোন ব্যাখ্যা নেই।
@কপটতার _বিরুদ্ধে: ইসলামী শরিয়াহ!! বিহারের মুসলমান প্রধান সুন্দরবাড়ি তরুণী এবং নারীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে!
@হিথাটি (হিদার টিমোন্স): বিহারের গ্রামীণ মহিলা এবং তরুণীদের ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিহার পর্যটন দপ্তরে লেখার মাধ্যমে একটি প্রচারাভিযান শুরু করা উচিৎ: আরসি (এলোমেলো আলাপচারিতা) http://nyti.ms/TECSFd
@হালকা চা (সমীর খাণ্ডেওয়াল): ভারতীয় গ্রাম অবিবাহিত নারী এবং মেয়েদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে। কেন লিঙ্গ বা বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্যে এটা নিষিদ্ধ করা হয় না?
কবিতা রাও উল্লেখ করেছেন যে সম্ভবতঃ মোবাইল ফোন ভারতীয় মহিলাদের একক বৃহৎ ক্ষমতায়ণের প্রযুক্তি। বিহারের অন্যান্য এলাকায় এক্টিভিস্ট ও সমাজকর্মীদের দ্বারা স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো কর্মক্ষেত্রে মোবাইল ফোনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটা প্রসবকালীন মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাসের মতো ফলাফল সৃষ্টিতে অবদান রাখছে।
বছর দুয়েক আগে কন্টাডর হ্যারিসন ওয়ানারুয়া অবিবাহিত নারীদের জন্যে উত্তর প্রদেশের আরেকটি অংশে অনুরূপ একটি নিষেধাজ্ঞার সংবাদে মত প্রকাশ করেছেন:
কেবলমাত্র একজন নব্য-ঔপনিবেশিক মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিই স্থানীয় নারী অধিকার গোষ্ঠীর পদক্ষেপটিকে অনগ্রসর এবং অন্যায্য হিসেবে সমালোচনা করাকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মোবাইল ফোন জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক ভূমিকা পালন করেছে এবং কেউ এই হাতিয়ারের ব্যবহারের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য করতে পারেন না। সেটা বাস্তবায়িত হলে তা মোবাইল শিল্পের সবার জন্যে একটি জাতীয় অবমাননা হিসেবে গণ্য হতে পারে…
ফেসবুকে শেঠি মুশতাক লিখেছেন:
এটাই আসল ভারত এবং বিশ্বব্যাপী বলিউড যেমনভাবে প্রদর্শিত তেমন নয়: P
আমরা আশা করি সত্যিকারের ভারত নারীদের স্বাধীনতা এবং চলা-ফেরায় বাঁধা দিবে না।