দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫০টির বেশি মানবাধিকার সংগঠন ১০-জাতি সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থার খসড়া একটি মানবাধিকার ঘোষণার সাম্প্রতিক প্রকাশের সমালোচনা করে একটি বিবৃতি জারি করেছে।
গতমাসে নম পেনে অনুষ্ঠিত ২১তম আসিয়ান শীর্ষসম্মেলনের যৌথ ঘোষণাটি স্বাক্ষরিত হয়। অঞ্চলটির মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রথম যৌথ ঘোষণার উদ্যোগ সম্পর্কে প্রথম আলোচনাটি হয়েছিল ২০১০ সালে লাওসে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান পক্ষগুলো এবং অন্যান্য মানবাধিকার সমর্থনকারীরা অভিযোগ করেছে যে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
এই মাসে ঘোষণাটি প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এতে মানবাধিকার সুরক্ষার সার্বজনীন মান বিকৃত করার ব্যবস্থা থাকার কথিত অভিযোগে একে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষ করে, তারা ঘোষণাটিতে সদস্য দেশগুলোর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঙ্গে অধিকারের ভারসাম্য বজায় রাখা সাধারণ নীতির ভাষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিতর্কিত ব্যবস্থাগুলো পড়তে এরকম:
… মানবাধিকার বাস্তবায়ন অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক এবং জাতীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় পটভূমি মাথায় রেখে বিবেচনা করা হবে।
মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রয়োগ সীমাবদ্ধ থাকবে শুধুমাত্র আইন সঙ্গতভাবে অন্যদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার স্বীকৃতি নিশ্চিত করার এবং জাতীয় নিরাপত্তা, জনশৃংখলা, জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, জননৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের সাধারণ কল্যাণ বিধানের ক্ষেত্রে।
বস্তুত, ঘোষণাটিতে ভোটাধিকার, সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকারের মতো বিভিন্ন মৌলিক অধিকার চিহ্নিত হয়েছে, তবে দৃশ্যতঃ এইসব সার্বজনীন অধিকার প্রযোজ্য হবে কেবল যদি তারা বিদ্যমান জাতীয় আইন এবং নীতি মেনে চলে।
প্রাচাতাই ঘোষণাটির সমালোচনা করা সুশীল সমাজের বিবৃতিটি প্রকাশ করেছেন:
নথিটি মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ছদ্মবেশে সরকারের ক্ষমতার একটি ঘোষণাপত্র।
এটা দুঃখজনক যে আসিয়ান সরকারগুলো এমন একটি ঘোষণা দিতে চাচ্ছে যে তাদের জনগণ মানবাধিকারের ইউরোপ, আফ্রিকা অথবা আমেরিকার জনগণের তুলনায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিপন্ন হচ্ছে। আসিয়ানভুক্ত জনগণ বাকি বিশ্বের তুলনায় তাদের মানবাধিকারের একটি নিম্ন স্তরের সুরক্ষা কখনো মেনে নিবে না।
ঘোষণাটি সংগঠন করার অধিকার এবং বলপূর্বক অন্তর্ধানের থেকে মুক্ত থাকার অধিকারসহ কয়েকটি প্রধান মৌলিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অত্যন্ত অনুশোচীয় যে অপেক্ষাকৃত বেশি গণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকারের প্রতি অধিক খোলামেলা আসিয়ানভুক্ত সরকারগুলো মানবাধিকারবিরোধী সরকারগুলোর চাপে মারাত্মক ত্রুটিযুক্ত হাতিয়ার অবলম্বনে নতি স্বীকার করছে।
এই ঘোষণাটি তার নামের যোগ্য নয়। সুতরাং আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি। গোষ্ঠী হিসেবে এই অঞ্চলের মানবাধিকারের সুরক্ষা নিয়োজিত থাকায় আমরা আমাদের কাজে এটি ব্যবহার করবো না। আমরা মানবাধিকারবিরোধী হাতিয়ার হিসেবে এর নিন্দা করা ছাড়া আসিয়ানকে বা আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আহবানের সময় এটা উত্থাপন করবো না।
সিঙ্গাপুরের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী মারুয়াহ অনুসারে ঘোষণাটি মানবাধিকার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক:
এটা আপত্তিকর এবং স্ব-বিরোধী… (ঘোষণার) এই ব্যবস্থাটি নিবারণ মুলক এবং মানবাধিকার ধারণার প্রতি সাংঘর্ষিক। এটি বস্তুনিষ্ঠ নয় এবং জনগণকে বিশেষ করে, নারী অধিকার আদায়ে (খারাপভাবে) প্রভাবিত করে বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে – একারণে ‘জন-নৈতিকতা'র এই অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এর নৈতিকতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ব্যক্তি-নির্ভরতা বিশ্বজনীনতাকে আলিঙ্গন করার পরিবর্তে… নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে, এটি কতগুলো সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে প্রান্তিক করে তোলে বলে এই ব্যবস্থাটি আপত্তিকর।
ফিলিপাইনের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী কারাপাতান এই ঘোষণাটি ‘আরো বেশি অধিকার লংঘনের নীলনকশা’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন:
এগুলো শুধু ঘোষণাটির রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রক্ষার উপযুক্ত দুর্বলতা নয়, আমরা ভয় পাচ্ছি এই বিধানগুলো অঞ্চলভুক্ত রাস্ট্রগুলোর ধারাবাহিক মানবাধিকার লংঘনের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করার জন্যে ব্যবহৃত হতে পারে। ঘোষণাটি মানবাধিকার প্রচার, সুরক্ষা এবং আদায়ে শুধু অর্থহীন নয়, একইভাবে এটি আরো বেশি অধিকার লংঘনের নীলনকশা হিসেবে গণ্য হতে পারে
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি লক্ষ্য করেছে যে নথিটিতে ‘প্রয়োগের জন্যে প্রয়োজনীয় একটি প্রক্রিয়ার অভাব রয়েছে।’