বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে ফুলবাড়ির স্থানীয় জনগণ প্রস্তাবিত ফুলবাড়ি উন্মুক্ত কয়লা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত করতে জোটবদ্ধ হয়েছে। ২৩শে নভেম্বর, ২০১২ তারিখে কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ এড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্যে চার জনের বেশি একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার জনগণ রাস্তায় নেমে আসে এবং ফুলবাড়িতে সাধারণ ধর্মঘটের আজকে (২৫শে নভেম্বর ২০১২) দ্বিতীয় দিন [বাংলা ভাষায়]।
বাংলাদেশ কয়লা ও গ্যাসের একটি বিশাল মজুদ নিয়ে বসে আছে এবং ১৯৯৭ সালে ফুলবাড়ি কয়লার মজুদ (৫৭ কোটি ২০ লক্ষ টন) আবিষ্কৃত হলে সেটা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে। খনি প্রকল্পের লাইসেন্সধারী যুক্তরাজ্যের এশিয়া এনার্জি পিএলসি ৮০% আহরণের উদ্দেশ্যে দূষণ সৃষ্টিকারী খনিজ আহরণ পদ্ধতি উন্মুক্ত খনি পদ্ধতি গ্রহণ করে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ৫৯ বর্গ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যেকার ১০০টিরও বেশি গ্রাম দখল করবে এবং লক্ষ লক্ষ অধিবাসীকে স্থানান্তরিত করবে।
২০০৬ সালে প্রকল্পটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী ফুলবাড়ির অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া বিক্ষোভের উপর গুলি চালালে তিন জনের মৃত্যু এবং অনেক আহত হয়। সরকার মধ্যস্থতা করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং লাইসেন্স বাতিলের মতো কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিস্থিতি প্রশমিত করে। ২০০৭ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন এবং জরুরী শাসন জারি হলে স্থবির হয়ে পড়ে।
২০১১ সালে দেখা যায় যে গ্লোবাল কয়লা সম্পদ ব্যবস্থাপনা (জিসিএম) অর্থাৎ সাবেক এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লা খনি প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করা নিয়ে কথা বলা শুরু করে। ইতোমধ্যে ব্যবসাতে তারা ফিরে আসে প্রস্তাবিত ফুলবাড়ি কয়লা খনি এলাকা এবং এর আশেপাশে দুই বছরের জরিপ চালানোর মাধ্যমে।
সাংবাদিক এবং ব্লগার প্রবীর কুমার সরকার লিখেছেন কেন প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের জন্যে ক্ষতিকর:
ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত কয়লা খনির পরিকল্পনায় আশংকা প্রকাশ করেন। এই প্রকল্প শুরু না করতে তারা সরকারকে অনুরোধ জানায়।
বিশেষজ্ঞ বিবৃতি অনুসারে:
প্রস্তাবিত খনিটি এখুনি আনুমানিক ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার জনগণকে স্থানচ্যুত করবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেচ খাল ও (নল)কূপ শুকিয়ে গিয়ে আরো সম্ভাব্য ২ লক্ষ ২০ হাজার লোক প্রভাবিত হবে।
উপরন্তু, প্রকল্পটি প্রায় ৬,০০০ হেক্টর (৬০ বর্গ কিমি) এলাকার একটি সাইট থেকে আগামী ৩৬ বছরে ৫৭ কোটি ২০ লক্ষ টন কয়লা আহরণ করবে বলে জানা গিয়েছে এবং এতে প্রায় ১২,০০০ হেক্টর (১২০ব বর্গ কিমি) উৎপাদনশীল কৃষি জমি ধ্বংস হবে।
২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ তারিখে লন্ডন খনিজ নেটওয়ার্ক এবং আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা প্রকল্প একটি রিপোর্টেউল্লেখ করেছে যে:
বাংলাদেশে একটি নতুন জাতীয় কয়লা নীতি প্রণয়ন এবং অনুমোদনের চেষ্টা চলছে, যা উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লা খনি নিষিদ্ধ করা অন্তর্ভুক্ত করার একটি বিতর্কে বারংবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বক্তারা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবকারীরা উল্লেখ করেছে যে জাতীয় কয়লার মজুদ রয়েছে একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে, যার মানে হলো উন্মুক্ত পদ্ধতির খনিজ আহরণে একটি বিরাট মানবিক ক্ষতি হবে।
প্রতিবেদনটিতে আরো ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো পুঁজি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্যে কর এবং খাজনার হার কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তারা ট্যাক্স ছুটি এবং ছাড় থেকে লাভবান হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা প্রকল্প ঘটনাবলীর একটি সময়ানুক্রম দিয়েছে যেখানে ফুলবাড়ির প্রতিবাদের সর্বশেষ অগ্রগতিগুলো দেখানো হয়েছে:
৭ই মে, ২০১২: বাংলাদেশ সরকারকে ফুলবাড়ি কয়লা খনি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানী অন্বেষণ করার আহবান জানানো বিক্ষোভকারীদেরকে পুলিশের আক্রমণ এবং প্রহার, ১৫ জন আহত… আরো পড়ুন >>>
২৬শে আগস্ট, ২০১২: ফুলবাড়ি দিবসের সমাবেশে হাজার হাজার লোকের যোগদান আরো পড়ুন>>>
৯ই নভেম্বর, ২০১২: তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ এবং বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সরকারকে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লা খনি এবং বাস্তবায়ন চুক্তি নিষিদ্ধ করে জিসিএম’কে (সাবেক এশিয়া এনার্জি) বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছে। আরো পড়ুন>>>
১৩ই নভেম্বর, ২০১২: স্থানীয় প্রশাসকদের ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জিসিএম এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়িতে কয়লার মজুদ জরিপে সহায়তা করার নির্দেশনা প্রদান করে দেয়া আদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে ফুলবাড়িতে হাজার হাজার জনগণ মিছিল করেছে…আরো পড়ুন>>>
২৩শে নভেম্বর, ২০১২: প্রকাশ্য সমাবেশের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার জনগণ পুলিশের বাঁধা ভেঙ্গে ফেলেছে এবং তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ এবং বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ২৪শে নভেম্বর শনিবার ফুলবাড়িতে সারাদিন ব্যাপী একটি সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করেছে আরো পড়ুন>>>
২৪শে নভেম্বর, ২০১২: কয়েক হাজার জনগণ প্রকাশ্য সমাবেশের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পুলিশ বেরিকেড ভেঙ্গে ফুলবাড়িতে রাস্তায় নেমেছে। আরো পড়ুন>>>
২৪শে নভেম্বর, ২০১২: বিক্ষোভকারীরা ফুলবাড়িতে সমাবেশ করেছে, ট্রেন থামিয়ে দিয়েছে, রাস্তা অবরোধ করেছে এবং স্কুল ও ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। আগামীকালও সাধারণ ধর্মঘট চলবে আরো পড়ুন>>>
এক্টিভিস্টরা মূলধারার মিডিয়ার দুর্বল কাভারেজের প্রতিবাদ করেছে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ উন্মোচন.কম-এ একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন [বাংলা ভাষায়] যে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ এবং বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন সত্ত্বেও মূলধারার মিডিয়া এই সমস্যাটিকে প্রায় উপেক্ষা করেছে।
এছাড়াও তারা সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে – যারা বলেছে যে “উন্মুক্ত খনি পদ্ধতি” একটি বাস্তবতা – বিরক্ত হয়েছে। বিবিসি বাংলা [বাংলা ভাষায়] রিপোর্ট করেছে যে আজকে দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় সরকার প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্যে প্রস্তুত।