বাংলাদেশে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার বিচার নিয়ে চলছে প্রহসন

গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০১২, রাজধানী ঢাকার এক ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতী মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি (এ নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস এর রিপোর্ট দেখুন)। ঐদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘোষণা দিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের খুনিদের ধরা হবে। এরপর এ বিষয়ে ব্লগার ও সাংবাদিকদের অনেক আন্দোলন হয়েছে। খুনের প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেছে ব্লগার ও সাংবাদিক সমাজ। কিন্তু এ বিচারের সফলতা দেখা যায়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে রদবদল করা হয় এবং এই পদে দায়িত্ব পান ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর।

নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি

নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। সূত্র: সাগর-রুনি'র হত্যাকারীদের বিচার চাই ফেইসবুক পাতা

সাগর-রুনি খুনের পর ৮ মাসেরও বেশী সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু খুনের তদন্তের কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চোখে পড়েনি। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর প্রচণ্ড চাপের মুখে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেন ১০ই অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনি খুনের রহস্য উন্মোচন করা হবে। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সময়সীমার একদিন আগেই সন্দেহভাজন সাতজনকে এ খুনের দায়ে গ্রেফতার করার ঘোষণা দেন। জানা গেছে, অভিযুক্তদের অনেকেই এর আগেও এ খুনের দায়ে একাধিক বার গ্রেফতার হয়েছেন। পলাতক কেয়ার টেকার হুমায়ূনকে ধরতে সরকার ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে, যিনি এক সময় পুলিশের হাতে আটক ছিলেন। তবে পলাতক হুমায়ুনের পরিবারের দাবী তাকে তিনজন সাদা পোশাকধারী লোক এসে ধরে নিয়ে যায়।

সাংবাদিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য গ্রহণ করেননি। তারা দাবী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। তারা বলেছেন এ বক্তব্যে রহস্যের জট খোলেনি এবং অভিযুক্তদের প্রকৃত মোটিভের সন্ধান পাওয়া যায় নি।

সাংবাদিক দম্পতি হত্যার পরদিন শেরেবাংলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সাংবাদিক রুনির ছোট ভাই নওশের রোমান। তিনি গত ১০ই অক্টোবর তাঁর ফেইসবুকে লিখেছেন:

নওশের রোমানের ফেইসবুক স্ট্যাটাস

নওশের রোমানের ফেইসবুক স্ট্যাটাস

নিজেকে দেখে শুধু মনে হচ্ছে কতোটা অসহায় হতে পারে মানুষ!!!!!!!! আমি, আমার পরিবার যে কতোটা অসহায়…….. নিজের জন্য খুব করুণা হচ্ছে, আর মেঘ, আমার পরিবার, আর যে মানুষগুলোকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে তাদের জন্য, তাদের অসহায় মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে বুকটা ফেটে যাচ্ছে… আল্লাহ কি নাই??????????? আল্লাহ কি নাই??? আল্লাহ কি নাই???? (অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল।)

নওশের রোমান

গত ১৫ই মে ২০১২, সাগর-রুনির খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ব্লগারদের সাথে উপস্থিত ছিলেন নওশের রোমান।

নিহত সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মাও এ ঘটনাটিকে সরকারের নাটক উল্লেখ করে বলেন “আমরা শুধু আসল ঘটনা জানতে চাই। খুনি কে, দেখতে চাই।”

অপেক্ষা

গত ২৮শে এপ্রিল ২০১২, সাগর-রুনি খুনের প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে ব্লগারদের আয়োজিত প্রতিবাদী রোড পেইন্টিংয়ে উপস্থিত ছিলেন নওশের রোমান। সূত্র: বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম ব্লগ

সাগর-রুনি'র হত্যাকারীদের বিচার চাই ফেইসবুক পেইজে সাগর-রুনি হত্যা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন:

“সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দুটো ধারণা চালু আছে। এক: তাঁরা সরকারের কোনো এক ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ পেয়েছিলেন, তাই তাঁদের মেরে ফেলা হয়। আরও ব্যাপকভাবে প্রচারিত ধারণা হচ্ছে, সাগর-রুনির হত্যাকারীরা সরকার পন্থী বা একসময় সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের গডফাদার সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ কেউ, তিনিই সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারও থেকে হত্যাকারীদের দায়মুক্তির আশ্বাস পেয়েছেন। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত না হলে এসব ধারণার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।”

খুনের পর পর পুলিশ বলেছিল, এটি পেশাদার খুনিদের কাজ নয়, অপেশাদারদের কাজ। বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পাঁচজন পেশাদার খুনি। এ বিষয়ে প্রবাসী সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:

খুনের ঘটনায় পেশাদার ভাড়াটিয়া খুনীরাই যদি জড়িত হয়, তাহলে পারিবারিক বন্ধু তানভীর জড়িত হবে কেন? খুনিদের ভাড়া করেছে কারা? হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে করা কাজ করেছে? খুনের মোটিভ-ই বা কী? সন্দেহভাজন আটজন কীভাবে, কেন এ ঘটনায় জড়িত হলেন এবং তাঁদের কীসের ভিত্তিতে শনাক্ত করা হলো? বাকিদের মতো, আমিও এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই৷ (অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল।)

সাংবাদিক শওকত মাহমুদ ২৬ সেপ্টেম্বর ফেইসবুকে লিখেছেন:

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরেই নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এ সময়ে অসংখ্য সাংবাদিক আহত হয়েছেন। প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের। সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেই। হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিরা ধরা পড়বেই। আইজিপি বললেন, তদন্তের প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ডিবির কর্মকর্তারা বললেন, আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু আন্দোলন করেই চলেছি।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .