ভারত: নিজের ম্যাপ তৈরি করুন নিজের শহরের সমৃদ্ধির জন্য

ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাই (স্বচ্ছ চেন্নাই) হল নাগরিক অংশগ্রহণের একটি মঞ্চ যা ‌একক ব্যবহারকারী বা বিভিন্ন দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানায় ভারতের চেন্নাই শহর সম্বন্ধে তাদের তথ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। এর লক্ষ্য হল ক্রাউডসোর্সিং (সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দলবদ্ধভাবে কাজ করা) এর মাধ্যমে যোগাড় করা তথ্য হালনাগাদের মাধ্যমে ভুল বা অসম্পূর্ণ সরকারী তথ্যগুলো সম্পূর্ণ করা যাতে তারা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য সরকারের কাছে তাদের দাবিদাওয়াগুলো সহজে তুলে ধরতে পারে।

গত বছর, ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাই রাইজিং ভয়েসেস প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় তাদের কাজে আরও নতুন বিষয় যোগ করেছে, দক্ষিণ চেন্নাইয়ের দুটি মৎস্যজীবী গ্রাম উরুর এবং অলকোট'কে সরাসরি সম্পৃক্ত করেছে। রাইজিং ভয়েসেস ব্লগে তাদের নিজস্ব ব্লগটিতে তাদের কাজের ধাপগুলো বর্ণনা করা হয়েছে:

গুগল চিত্রের ছাপানো ছবিতে অঙ্কন শেষে যেমন দেখাচ্ছে। ছবি – ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাইয়ের সৌজন্যে।

১। প্রস্তাবনাটি স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত সরকার পঞ্চায়েতের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত ও অনুমোদিত হয়।

২। অংশগ্রহণকারীদের বুঝার সুবিধার্থে উপকূল রেখার গুগল মানচিত্রের ছবিগুলো বড় কাগজে ছাপানো হয়।

৩। সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীরা পুরো গুগল মানচিত্রের উপরে ছবিগুলো অঙ্কন করে।

৪। ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাই দল ঐ চিত্রগুলোর উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানচিত্রগুলো তৈরি করে।

৫। খসড়া মানচিত্রগুলো একটি জনসভায় উপস্থাপিত হয় তাদের মতামত জানার জন্যে।

সকলের মতামতের উপর ভিত্তি করে সর্বশেষ মানচিত্রটি অঙ্কন করা হয়।

যে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার মানচিত্রে আপনি কি দেখতে চান? ছবি – ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাইয়ের সৌজন্যে।

ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাই পোর্টালে, পরিবর্তন করা সক্ষম একটি টুল ব্যবহার করে আপনি চেন্নাই শহরে আপনার নিজের মানচিত্র তৈরি করে নিতে পারেন – উড়াল সেতুর স্তরগুলো সনাক্ত করা থেকে বিশেষ সড়ক প্রকল্পগুলো, ওয়ার্ডের আদমশুমারির তথ্যগুলো, বস্তি অনুমোদন বোর্ড থেকে বস্তি এলাকার তথ্য এবং পাবলিক টয়লেটগুলোর অবস্থান। মুক্ত জ্ঞান ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া ব্লগে লুসি চেম্বারস লিখেছেন:

চেন্নাইয়ে নিথ্যা রামান, শ্রী নিধি সাম্পাথকুমার এবং দলের পক্ষ থেকে আয়োজন করা ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাইয়ের মুক্ত তথ্য ক্যাম্প‘এ আমরা অংশগ্রহণ করি। ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাই সমষ্টিগতভাবে তথ্য তৈরি ও প্রকাশ করছে এবং চেন্নাইয়ের নাগরিক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছে, বিশেষ করে যে বিষয়গুলো দরিদ্রদের ক্ষতিসাধন করছে এবং অবহেলিত। ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাইয়ের কাজগুলো অনন্য কারণ তারা মানচিত্র ও তথ্য তৈরি করছে মানুষদের সাহায্যের জন্য এবং বোঝার জন্য শহরের বাসিন্দারা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে। বিল্ড এ ম্যাপ টুল এর ফিচারগুলোর লেয়ারগুলো বাছাই করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরাও তাদের শহরের নিজস্ব মিথস্ক্রিয় মানচিত্র তৈরি করতে পারেন। দলটি চমৎকার কিছু কাজ করছে এবং জোরালো ভাবে চেষ্টা করছেন তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজের জন্য মুক্ত অনুমতি অর্জনের।

এই প্রকল্পের কয়েকটি স্মরণীয় কাজের মধ্যে ছিল চেন্নাইতে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মানচিত্রকরণের সময়টি। সুরাজ নাইর ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাই ব্লগে লিখেছেন:

শনিবার (১২ইমে, ২০১২), মাদ্রাজের আইআইটি এবং স্টেল্লা ম্যারিস কলেজের একদল ছাত্র গ্রীষ্মে ট্রান্সপারেন্ট চেন্নাইয়ের সাথে তাদের প্রশিক্ষণের সময় কাটাচ্ছিল, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মানচিত্রকরণের পর্বের তখন যাত্রা শুরু হল। চিত্র নির্ভর তথ্য ও উপাত্ত যা অন্যদিকে বড় ধরণের রিপোর্ট, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষার্থে এবং চেন্নাই সমর্থকদের জন্য খুবই ভাল পরিকল্পনা, আমরা খুবই উত্তেজিত ছিলাম এর অংশ হতে পেরে। আমরা শনিবার খুব তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করলাম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর তালিকা, এদের স্বল্প বর্ণনা, জিপিএস ডিভাইস এবং ক্যামেরাগুলো নিয়ে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শহরের বাঁকে ও কোনাকাঞ্চিতে আচ্ছন্ন কম পরিচিত জায়গাগুলো খুঁজে বের করা। (..)

সব মিলিয়ে, দিনটি ছিল খুবই আনন্দের, চেন্নাইয়ের খুবই কম পরিচিত দিকটি দেখছিলাম। পরবর্তী দুটি সাপ্তাহিক ছুটিতে আমরা চেন্নাইয়ের অন্যান্য রাস্তাগুলোতে যাব, কম পরিচিত স্থাপনাগুলোকে দেখতে যেগুলো সাক্ষী ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার এবং আতিথ্যকর্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের, হয়তো শুনব ভালবাসার গল্পগুলো, শোকাবহ ঘটনা, জন্ম-মৃত্যুর সাক্ষী, বিবাহ এবং রাজনৈতিক মৈত্রী বন্ধনগুলো সম্পর্কে। সব শেষে, মানুষজন ছাড়া একটি শহরের কি আছে এবং কিভাবে আমরা আমাদের এই শহরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও তৈরি করা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো রক্ষার্থে উৎসাহ দেখাতে পারি।

নিথ্যা ভি. রামান লিখেছে যে অতি পরিচিত সমস্যাটি হল শহরের যে তথ্য, উপাত্ত রয়েছে তা প্রায়ই ভুল। নিথ্যা দেখিয়েছেন চেন্নাই শহরের ফুটপাতগুলোর অসম বণ্টন ব্যবস্থাটি। প্রীতি নারায়ণ দেখিয়েছে, গুগল আর্থ কিভাবে নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে যে কোথায় নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য ওভারব্রিজ দরকার।

এই প্রকল্পটির বর্তমান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এটি নিশ্চিত করা যে গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত ঐসব মানুষদের কাছে পৌঁছানো যারা এগুলো ব্যাবহার করতে পারবে, বিশেষ করে পরিবর্তন প্রত্যাশী নাগরিকদের কাছে – যেমন নীতিনির্ধারকগণ, বিধানমণ্ডলীর নির্বাচিত সদস্যগণ, সাধারণ মানুষজন এবং মিডিয়া।

এই প্রকল্পটি সম্বন্ধে আপনি তাদের ফেইসবুকটুইটার পেইজে জানতে পারেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .