ইয়েমেনঃ রাষ্ট্রপতির ভাষণ

ইয়েমেনের অনেক নাগরিক তাদের “নির্বাচিত” রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এক সুন্দর ভাষণ আশা করে, যেটিতে দেশের মানবিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক চাহিদা এবং বর্তমানে দেশটি যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেসবের উল্লেখ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তার ভাষণে দেশবাসী সর্বশেষ যে বিষয়টি আশা করেছিল সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার প্রশংসা।

ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আব্দে রাবুহ মনসুর আল-হাদি শুক্রবারে (২৮ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্টের রাজধানী ওয়াশিংটন-এর উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে এক ভাষণ প্রদান করেন, এর পরে তিনি এক বিবৃতি প্রদান করেন, সংবাদে প্রকাশ যে তাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার প্রশংসা এবং এর অনুমোদন প্রদান করেন।এই বিষয়টি নেট নাগরিকদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে তরুণ ইয়েমেনীদের মাঝে, যারা ইয়েমেনে ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ এবং বিরোধিতা প্রদর্শন করে আসছে।

ইয়েমেন পিস প্রজেক্টের ডিরেক্টর উইল পিকার্ড এই ভাষণের উপর তৈরি স্টোরিফাই [ টুইট নিয়ে করা আলোচনা] একত্রিত করেছে এবং একই সাথে একটি ব্লগ পোস্ট লিখেছে, যেখানে তিনি নির্দেশ করেছেন :

যা কিছু হোক না কেন, ঘটনা হচ্ছে হাদি তাই উচ্চারণ করেছে যা তার করা উচিত, তাতে বিষয়টি দৃশ্যমান হল যে সে আসলে ওয়াশিংটনের সাথে কতটা একাত্ম। ড্রোন কর্মসূচি বিষয়ে প্রথম ওবামার নীতি হচ্ছে, “সব সময় প্রচেষ্টা থাকবে, এই বিষয়ে কোন কথা বলা”, আর যখন সে তা করতে ব্যর্থ হবে, তখন তার নীতি হবে কোন বিশেষ ঘটনার বিষয়ে কোন রকম দায়িত্ব না নেওয়া। এখন রাষ্ট্রপতি হাদি বিশ্বের সামনে উপস্থিত হয়ে উচ্চারণ করল যে কোন সময়ে কেউ একজন গিয়ে ইয়েমেনের অন্ধকারকে দূরীভূত করেছে, যা আসলে আমেরিকা করেছিল। তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পদক্ষেপকে প্রবলভাবে অনুসরণ করছে।

একই সাথে হাদির ভাষণের কথা উল্লেখ করে উইল পিকার্ড টুইট করেছেন :

@ইয়েমেনপিসনিউজ : #হাদি: #ইয়েমেনে এখন তিনটি সমস্যা বিরাজমানঃ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং তিনটা নিরাপত্তা? জনাব রাষ্ট্রপতি, মানবিক সমস্যা কোথায় গেল? আসলেই?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের খানিকটা হতাশার মাঝে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি কেবল প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার বিষয়টি স্বীকার করে নেননি, সাথে তিনি তাদেরকে এই হামলার অনুমোদন প্রদান করে এর সকল দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে নিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছেন যে “প্রতিবার হামলা চালানোর আগে তারা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করে”।

রাষ্ট্রপতি হাদির বিতর্কিত বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মোহাম্মদ আলমারানি টুইট করেছে:

@ইয়েমেনট্রিবিউন: #ইয়েমেন- হাদির ব্যাপারে উইকিলিকসের কোন প্রয়োজন নেই। এমনকি আমেরিকার নাগরিকদের বিস্মিত করে দিয়ে সে নিজের সততা প্রদর্শন করেছে…। সে তার নিজের জনগণের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেছে।

তার ভাষণ পরবর্তী এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি হাদি দাবি করেছেন যে “ ঠিক কোন লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে যাচ্ছে সে বিষয়টি যদি সে বিষয়টি জানা থাকে, সেক্ষেত্রে ড্রোনের ভুল করার হার হয় শূন্য,”। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে বিপরীতে দেখা গেছে যে একই সাথে ভুল তথ্য এবং ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মাধ্যমে ড্রোন ইয়েমেনের সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল।

আতিয়েফ আলওয়াজির রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতিউত্তরে টুইট করেছে:

@উইমেনফ্রমইয়েমেন: ওহে #হাদি, ওই সমস্ত মিসাইলগুলো কতটা সুনিদৃষ্ট ছিল যে সেগুলো একটা হাসপাতাল, একটা ওষুধের দোকান এবং এক সাধারণ নাগরিকের বাসগৃহে আঘাত হেনেছিল। http://english.al-akhbar.com/photoblogs/us-war-yemen-view-ground … #ইয়েমেন

ভদ্রমহিলা এর সাথে যুক্ত করেছে:

@উইমেনফ্রমইয়েমেন: হাদি,#ইয়েমেন সম্বন্ধে জনসম্মুখে খুব কমই কথা বলে থাকে, কিন্তু #যুক্তরাষ্ট্র সম্বন্ধে কথা বলতে গেলে মুখে আর লাগাম থাকে না। দয়া করে সময় নিয়ে এবং বেছে বেছে শব্দ দিয়ে নিজের ভাষণ লিখুন।

@উইমেনফ্রমইয়েমেন:সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার বিষয়ে কোন প্রশ্ন না তুলে স্থানীয় কিছু পত্রিকা, #যুক্তরাষ্ট্রে হাদির সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তার সরকারে বৈধতার জন্য যা মোটেও মঙ্গলজনক নয়। #লিগেটিমেসি#ইয়েমেন #ইউএস

ইব্রাহিম মোথানা টুইট করেছে:

@আইমমোথানাইয়েমেন: হাদি, হামিদ কারাজাই-এ পরিণত হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রকে নির্দ্বিধায় ড্রোন হামলার অনুমতি প্রদান করার পর রাষ্ট্রপতি হাদির প্রতি আমার প্রাথমিক মনোভাব। http://on.fb.me/VYci91 #ইয়েমেন

সে যুক্তি প্রদান করছে:

@আইমমোথানাইয়েমেন:ইয়েমেনে রাষ্ট্রপতি হাদির সুবিধা হচ্ছে তার প্রতি সবার যে ঐক্যমত। স্থানীয় সমর্থনের বিনিময়ে আর্ন্তজাতিক গ্ল্যামারের অর্জনের মাধ্যমে সে আরেকটি হামিদ কারজাই-এ পরিণত হবে।

এর সাথে সে বিদ্রূপাত্মকভাবে মন্তব্য করেছে:

@আইমমোথানাইয়েমেন:রাষ্ট্রপতি পদে তার দুটি মেয়াদ পূর্ণ করার পর হাদি হয়ত এক অসাধারণ ড্রোন বিক্রেতায় পরিণত হবে#ইয়েমেন।

সব শেষে বলা যায়, ইয়েমেন কেবল ড্রোন হামলার এই সব ক্ষতিকর প্রভাবের কথাই মনে রাখবে না, সাথে তারা এই ধরণের কর্মকাণ্ডের সমর্থনে তাদের রাষ্ট্রপতি কথা স্মরণে রাখবে।

আমার স্টোরিফাই-এ রাষ্ট্রপতির ভাষণ এবং তার সাক্ষাৎকারের বিষয়ে আসা আরো কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .