দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা ভোট প্রদানের সময় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে

যখন দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাসেরও কম সময় বাকী, তার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণরা ভোট দানের সময় আরো বৃদ্ধি করার আহ্বান জানাচ্ছে, যা কিনা ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলে সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে।

সাধারণত দক্ষিণ কোরিয়ায় ভোট দানের সময় শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। আর দক্ষিণ কোরিয়ায় কঠোর কর্পোরেট সংস্কৃতির অধীনে অনক তরুণকে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। যার ফলে ভোট দিতে যাবার সময় নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৬০ লক্ষ চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারী আছ, যাদের চাকুরী সবসময় নড়বড়ে অবস্থায় থাকে।

ভোট প্রদানের সময় বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে উপস্থাপন করা একটি খসড়া আইন এখনো ঝুলে আছে, কিন্তু বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই তা বার বার বাতিল করা হচ্ছে। আইঅ্যামপিটার নামক ব্লগার দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্লগার, তিনি আগের সব ভোটের ধরন বিশ্লেষণ করে প্রদর্শন করছেন [কোরীয় ভাষায়] যে কি ভাবে ভোট প্রদানের সময়ের সামান্য পরিবর্তন, নাগরিকদের ভোটে অংশগ্রহণের পরিমাণ দারুণভাবে বাড়িয়ে দেয়।

South-Korea-vote-confirmation-photo

মে ২০১১-এর নির্বাচনের সময়কার এই ছবিটি পোস্ট করেছেন টুইটার ব্যবহারকারী @মিজারী। ভোট নিশ্চিতকরণ ছবি নামক বিষয়টি নতুন এক ধারণা, যার মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ কোরীয় তরুণরা ভোট প্রদানের প্রমাণ টুইট করে (যেমন হাতে ব্যালট পেপার ধরা অথবা ভোট প্রদানের স্থান নির্দেশনা চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা)। এই বিষয়টি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে তা নির্বাচনী ফলাফলের উপর প্রভাব তৈরি করে।

일반적인 투표는 오후 6시로 되어 있습니다. 그러나 한국 이외의 나라는 대부분 오후 8시까지 투표할 수 있도록 배려하고 있습니다.[…] 대한민국 선거 대부분이 오후 12시를 기점으로 투표율이 올라갑니다. 그러다 오후 3시부터 4시를 넘어 오후 5시까지 투표율이 가파르게 상승합니다. 이것은 유권자 대부분이 오후에 그것도 투표 마감 전에 몰리는 경향으로 볼 수 있습니다. […]해외 주요국가는 공휴일로 지정했으면 근무하는 회사가 그리 많지 않습니다.[…] 그러나 한국은 임시공휴일이라고 해도 많은 회사들이 선거날 정상 출근하는 일이 많습니다.

সাধারণ দক্ষিণ কোরিয়ায় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভোট প্রদানের সমাপ্তি ঘটে। তবে বিদেশী বসবাসরত দক্ষিণ কোরীয় নাগরিকরা রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট প্রদান করতে পারে।[…] বেশীর ভাগ সময় শুরুতে কম ভোট পড়ে,যা মূলত শুরু হয় দুপুর থেকে। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে, ভোট প্রদানের হার সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই ধারা অব্যহত থাকে (ভোট প্রদানের শেষ সময় পর্যন্ত এই হার বিন্দুমাত্র কমে না)। কিছু উল্লেখযোগ্য বিদেশী রাষ্ট্রে, নির্বাচনের দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়, সে দিন কোন কোম্পানীতে কোন কাজ হয় না। দক্ষিণ কোরিয়ার এই দিনটি ছুটির দিনে পরিণত হবার পরেও, এখানকার বেশীরভাগ কোম্পানী অন্যান্য দিনের মত নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ করে থাকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কুখ্যাত কর্পোরেট সংস্কৃতি সফলভাবে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে, বিশেষ করে যারা পূর্ণ দিবস কাজ করে, যদি কোম্পানী সিদ্ধান্ত নেয় যে ভোটের দিনও প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিক ভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যাবে তবে সেখানকার এই ধরনের কর্মচারীদের জন্য ভোট প্রদান একটা বোঝায় পরিণত হয়। টুইটার ব্যবহারকারী @কেন্নেডিয়ান৩, এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে [কোরীয় ভাষায়] :

18대 총선에 불참한 비정규직 노동자들의 64.1%가 “참여가 불가능한 상황”을 기권의 이유로 꼽았다고 한다. 이들이 경제적 약자인 것도 서러운데 정치적 약자까지 되게 해서는 안 된다. 투표시간 연장!

দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬৪.১ শতাংশ কর্মী চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের আওতায় কাজ করে, যারা ১৮ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে পারেনি। কেন তার ভোট দিতে পারেনি, তার উত্তর হচ্ছে, তাদের কাজের সময় এমন ভাবে নির্ধারিত যে, ভোট দিতে যাবার জন্য সময় বের করা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ইতোমধ্যে তাদের দূর্বল করে ফেলেছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে চলে যাক বা তাদের প্রতি অন্যায্য আচরণ করুক আমরা তা হতে দিতে পারি না। সবার ভোট দেওয়ার জন্য আমাদের ভোট প্রদানের সময় বাড়িয়ে দিতে হবে।

নেট ব্যবহারকারীরা একটি অনলাইন দরখাস্ত প্রদান করেছে [কোরীয় ভাষায়], এতে তারা সরকার এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ভোট প্রদানের সময় বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে ঝুলে থাকা আইনটি পাস করা হয়। ইতোমধ্যে এই দরখাস্তে প্রায় ৩০,০০০ নাগরিক স্বাক্ষর করেছে।

এই আইন আটকে রাখার জন্য অনেকে ক্ষমতাসীন সায়নুরি পার্টিকে দায়ী করছে। সাধারণত প্রবীণরা নিয়মিতভাবে এই দলকে ভোট দিয়ে থাকে, অন্যদিকে তরুণ ভোটাররা আধুনিকমনস্ক প্রার্থীদের পছন্দ করে থাকে। @_হোপ_ -এর করা এই টুইটটি [কোরীয় ভাষায়] ৪১০ জন পুনরায় টুইট করেছে।

새누리당이 가장 무서워하는 것은 안철수도 문재인도 아니다. 바로 투표장으로 가는 당신이다[…]

সায়েনুরি দলটি, আহন চোল সো বা মুন জায়েকে [ নোট- বিরোধী দলীয় প্রার্থী] ভয় পায় না। তারা যাকে ভয় পায় সে হচ্ছে আপনি, যে কিনা ভোট দিতে যান।

@গিগোডিডো টুইট করেছে [কোরীয় ভাষায়] :

투표시간 연장에 반대하는 당이 여당이어도 괜찮은 나라. 독재자의 딸이 독재 30년후에 다시 대권에 나와도 강력한 대선후보가 되는 나라. 대한민국. 아. 슬퍼.

কোরীয় রাজনৈতিক পটভূমি কতটা বিষণ্ণ। ভোট প্রদানের সময় বাড়ানোর বিরোধীতাকারী আর কেউ নয়, দেশটির প্রধান শাসক দল। আর রাষ্ট্রপতি পদের জন্য অন্যতম এক শক্তিশালী প্রার্থী কিনা এক স্বৈরশাসকের কন্যা, যে তার পিতার স্বৈরশাসনের ৩০ বছর পর, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

@মাইন্ডগুড লিখেছে [কোরীয় ভাষায়] :

참정권은 귀족에서 평민, 남성에서 여성으로 당대의 사회적 약자로 확대해왔고 오늘날 사회적 약자는 당연히 비정규직. 그럼에도 선관위가 투표시간 연장을 반대한다면 비정규직을 국민으로 인정하지 않겠다는 것 입니다.

অভিজাতদের সাথে সাধারণ মানুষও ভোটের অধিকার লাভ করেছে, পুরুষদের সাথে নারী এবং সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকরাও ভোটের অধিকার লাভ করেছে। যদি ভোট প্রদানের সময় বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে বিষয়টি সঙ্কেত প্রদান করে যে কমিশন সুবিধাবঞ্চিত চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের আমাদের সমাজের একটি অংশ হিসেবে মনে করে না।

আর নির্বাচন কমিশনের খোঁড়া অজুহাতকে সে উপহাস করছে [কোরীয় ভাষায়]:

국민들이 밤새워 개표를 지켜보느라고 건강을 해칠까 봐 투표시간 연장을 반대한다는 선관위. 그렇다면 보건복지부와 통합하는 것이 좋을 것 같네요.

নির্বাচন কমিশন বলছে তারা ভোট প্রদানের সময় বৃদ্ধির বিপক্ষে কারণ তারা নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে নির্বাচনের ফলাফল জানার অপেক্ষায় তারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকবে। যদি তা সত্যি হয়, তাহলে তাদের উচিত স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে মিশে যাওয়া।

@মেট্টাইয়ুন মন্তব্য করেছে [কোরীয় ভাষায়]:

투표시간 늘리면 사회적 비용이 크게 든다는 새누리당의 주장, 지난 4년 대통령 하나 잘못 뽑아서 든 국가적인 손해에 비하겠습니까? […]

সায়েনুরি দলটি দাবী করছে যে সময় বাড়িয়ে দিলে তার জন্য বিশাল এক ‘সামাজিক মূল্য প্রদান’ করতে হবে। এটা কি জাতীয় ক্ষতির তুলনায় ততটাই বিশাল, চার বছর আগে একজন ভুল লোককে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে যা আমরা করেছিলাম? [নোটঃ বর্তমান রাষ্ট্রপতি এখনো অত্যন্ত অজনপ্রিয়, বিশেষ করে তরুণদের মাঝে]

প্রাক্তন আইন প্রণেতা এবং বর্তমানে একজন আইনজীবী ও প্রাবন্ধিক @ইয়োর_রাইটস লিখেছেন [কোরীয় ভাষায়] নতুন কোন পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে দেরি মোটেও কোন বিষয় নয়, এক্ষেত্রে ক্রীড়ার মত বিষয় থেকে তিনি উল্লেখ করছেন।

투표시간 연장 문제에 대한 새누리당의 논리는 “경기 중 룰을 바꿀 수 없다”입니다. 지금 투표가 시작됐나요? 마치 심판이 편파판정으로 인저리타임을 늘려주는 것으로 생각하는 꼴.

সায়েনুরি নামক দলটি বলছে যে খেলা চলাকালীন সময়ে আমরা আইন পরিবর্তন করতে পারি না। তারা বিষয়টিকে এমনভাবে পরিচালনা করছে, যেন এক অসৎ রেফারী, খেলায় বাড়তি অতিরিক্ত সময় যোগ করে মূল সময়ের পরিমান কমিয়ে দিচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .