- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাংলাদেশ: আদিবাসীদের উপর হামলায় অশান্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, আইন, ধর্ম, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, সরকার

এই প্রবন্ধটি আদিবাসী অধিকার বিষয়ে আমাদের বিশেষ কাভারেজে অংশ। [1]

আদিবাসীদের উপর সংঘঠিত পর পর বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে রাঙ্গামাটিতে আদিবাসীদের উপর হামলা [2] এবং তাদের পাল্টা আক্রমণের প্রতিরোধের ঘটনায় এক তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ৪০ জন আদিবাসী ছাত্র, একজন সরকারি শিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন চেয়ারম্যান এবং ৫ জন বাঙ্গালী ছাত্র আহত হয়েছে।

মুক্তমনা ব্লগে জয় লিখেছেন [3] [বাংলা ভাষায়]:

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর শহর রাঙামাটিতে বসবাসরত পাহাড়ীদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয় । গত সেপ্টেম্বারের ২২ তারিখ হতে পাহাড়ীরা নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করছে । চলছে মনভারী করার মতো মারো- ধরো, সেটেলারদের উল্লাস । চারদিকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় আকাশ অনেক ভারী । প্রশাসনের ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকাস্বত্তেও গত ২৩ তারিখের রাতে সেটেলারের উগ্রপন্থীরা পৃথক পৃথকভাবে ট্রাইবেল আদাম, রাজমনি পাড়া এবং ভেদভেদিতে আক্রমন চালানোর চেষ্টা করে ।

[4]

রাঙ্গামাটিতে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় এক বিক্ষোভ র‍্যালীতে আদিবাসী ছাত্রদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড। ছবি ফিরোজ আহমেদের, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (২৪/০৯/২০১২)।

সুনয়ন চাকমা [5] একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন[বাংলা ভাষায়]:

যারা দূর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন জাতিগত সমস্যা হলে বলে “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান” দরকার তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন আপনার জায়গা জমি কেউ জোড় করে বেদখল করার পর তার সাথে কি আপনারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারবেন?

আদিবাসী বাংলা ব্লগে তন্দ্রা চাকমা [6] অভিযোগ করছেন [বাংলা ভাষায়]:

পুরো ঘটনাতে প্রশাসন সেই আগের মতই সেটেলারদের পক্ষ নিল। কেন এমন হবে? তারা কেন একটু ও বিশ্বাস স্থাপন করার চেষ্টা করলো না যে, তারা কারও পক্ষ নেবে না, কঠোর হাতে তারা দুষ্টের দমন করবে!!

সিএইচটি নিউজ আপডেট [7] (সতর্কতা: মর্মস্পর্শী চিত্র) এই ঘটনার ছবি পোস্ট করেছে। আলাল ও দুলাল ব্লগ [8], এই ঘটনার উপর প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ একত্রিত করেছে।

গত শনিবারে ( ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২), একদল উন্মত্ত জনতা কক্সবাজারের রামু এলাকার বৌদ্ধদের গ্রামে আগুন দেয় এবং ধ্বংস করে ফেলে। ফেসবুকে কোরআন অবমাননার এক কথিত অভিযোগ থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। সংবাদে জানা গেছে [9] যে, রাতের বেলা শুরু হওয়া এই ঘটনা যা ভোর পর্যন্ত চলে, তাতে ৭টি বৌদ্ধ মন্দির এবং ৩০টির মত বাড়ি ও দোকান ভস্মিভূত হয়। সেদিন প্রায় ১০০টির মত ঘর এবং দোকানে হামলা চালানো হয় ও লুঠপাট করা হয়। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বৌদ্ধ মূর্তি এবং জ্বলন্ত প্যাগোডার ছবি, অনেককে ক্ষুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে অনেক ব্লগারও রয়েছে।

আলাল ও দুলাল [10] ব্লগ, লজ্জায় আর্তনাদ করে উঠছে:

এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? এর জন্য কি ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছিল? স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বৌদ্ধ মন্দির জ্বলে যাওয়ার দৃশ্যও আমাদের অবলোকন করতে হল…

ব্লগার প্রলয় হাসান [11] তার ফেসবুকের নোটে বিবৃতি প্রদান করেছেন [বাংলা ভাষায়] :

এটা বিছিন্ন কোন ঘটনা নয় বরং একটা ধারাবাহিক সিরিজ তান্ডব বলা যেতে পারে। [..] বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতবার সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, বরাবরই তা ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক এবং সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য উস্কানিমূলক। মানে হলো, ধর্মকে ইস্যু হিসেবে দেখানো হলেও [মাঝে মাঝে এ ইস্যুগুলোও হয় অত্যন্ত ঠুনকো। যেমন: এবার দেখানো হলো ফেসবুকে এক যুবক কোরআন অবমাননা করেছে তাই হামলা হয়েছে। কিছুদিন আগে ইউটিউব যেহেতু একই ধরনের কারনে বন্ধ হয়েছে, সেহেতু এটা একটা কার্যকরী ইস্যু বটে!] সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কখনই শ্রেফ ধর্মের কারনে হয়নি। অথচ কিছু নির্বোধ দুনিয়ার তাবত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মকে দায়ী করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে প্রদত্ত এক ভাষণে নির্দেশ করেছেন যে, ২০০১- ২০০৬ সালে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এখন বিরোধী দলে থেকে এই সমস্ত সাম্প্রদায়িক হামলা চালাচ্ছে, ব্লগারের মতে এটা একটা প্রতিশোধ মুলক চাল। বিশেষ করে যখন জাতি সংঘের মহাসচিব নিজে বৌদ্ধ ধর্মের এক নাগরিক, তখন এ রকম অভিযোগ বাস্তবিক পক্ষে অনেকের জন্য জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে:

অনেকেই হয়তো জানেন, জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন ব্যক্তিগতভাবে একজন কট্টর বুদ্ধিস্ট। তাছাড়া তার জন্মভূমি কোরিয়ার জাতীয় ধর্মও তাই। [..]

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবর আমাদের মিডিয়া যতটা না প্রচার করে, বিশ্বমিডিয়ায় তা প্রচারিত হয় শতগুণ বেশী।

[12]

ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ র‍্যালীতে অংশ গ্রহণ করা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নাগরিকরা। ছবি ফিরোজ আহমেদের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (৩০/৯/২০১২০)।

ব্লগার ও লেখক আরিফ জেবতিক [13] [বাংলা ভাষায়] তার ফেসবুকে উল্লেখ করেছেন:

গত কয়েকমাসে উপর্যুপরি কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এসব হামলার কিছু নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে। যেসব স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, সেসব এলাকায় জামায়াত-শিবির, হিযবুত তাহরীর সহ বর্তমানে চাপে থাকা ধর্মীয় গোষ্ঠিগুলোর রাজনৈতিক যোগাযোগ ও শক্তি তুলনামূলক ভাবে বেশি। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন এগিয়ে এসেছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে। কিন্তু সরকার বিষয়টি কখনোই খতিয়ে দেখেনি যে মাঠ পর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা ধর্মীয় অসহিষ্ণু ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের নিয়োগ এবং পূর্বতন সময়ে কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ ছিল কী না। আমার বিশ্বাস যদি খতিয়ে দেখা যায়, তাহলে এসব কর্মকর্তাদের অনেকের রাজনৈতিক যোগাযোগ দেখে হতভম্ব হতে হবে।

‘রামুতে পুলিশ কোথায়’? শিরোনামে উন্মোচন ব্লগে কল্লোল মোস্তাফা [14] লিখেছেন [বাংলা ভাষায়]

স্রেফ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও ঠেকাতে জাতীয় কমিটির কর্মীদের দিকে ব্যারিকেড, লাঠিচার্জ আর টিয়ারশেল সহ পুলিশ লেলিয়ে দিতে প্রশাসনের উৎসাহের কখনও কোন কমতি হয় না। অথচ সারারাত ধরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অসংখ্যা ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ সাত সাতটি মন্দির ভাঙচুর চললো, আগুন দেয়া হলো, লুটপাট করা হলো- সারা রাত ধরে একটাও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হলো না, কোন মন্দিরের সামনে একটা ব্যারিকেডও পড়লো না- সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর সকালে এসে ১৪৪ ধারা জারি করে দায় সারা হলো- একটুও কি অদ্ভুত লাগে না?

রামুর এই হামলার ঘটনার পরেরদিন, রোববারে, উখিয়া উপজেলায় পাঁচটি বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা চালানো হয় [15]। রামুর এই হামলার ঘটনায় পুলিশ ৩৫ জন নাগরিককে গ্রেফতার করেছে [16] [বাংলা ভাষায়]। কিন্তু নাগরিকরা ভাবছেন যে এই ধরনের হামলার সমাপ্তি হবে কবে।

এই প্রবন্ধটি আদিবাসী অধিকার বিষয়ে আমাদের বিশেষ কাভারেজে অংশ। [1]