ইরানঃ নতুন করে ব্লগারদের উপর নির্যাতন শুরু

ইরানের ব্লগাররা আবার নতুন করে সরকারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এদের অনেকে এখনো জেলে এবং আরেক ঘটনায় এক ব্লগারের স্ত্রীকে নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রহার করেছে। মনে হচ্ছে শাসকেরা তাদের নিজেদের নির্মমতার প্রদর্শন বৃদ্ধি করেছে।

বিপন্ন এক জীবন

বেশ কিছু সংবাদ সাইট খবর প্রদান করেছে যে [ফার্সী ভাষায়] কারাবন্দী ব্লগার হোসেইন রোনাঘি মালেকির জীবন এখন হুমকির মুখে। তার স্বাস্থ্য ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং তাকে বিচ্ছিন্ন এক কামরায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তার কিডনির সমস্যা (রক্ত ক্ষরণ) দেখা দিয়েছে, এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করছে না।

আগস্ট ২০১২-এ, অন্য বেশ কয়েকজনের সাথে হোসাইনকে পূর্ব আযারবাইজান প্রদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, যেখানে তারা ভূমিকম্পে পীড়িত নাগরিকদের স্বেচ্ছায় সাহায্য করছিল। এর আগে জুলাই ২০১২-এ, ৫০০, ০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তাকে জামিন প্রদান করা হয়েছিল।

হোসাইন রোনাঘি মালেকি, ব্লগার

পুলিশের হাতে ব্লগারের স্ত্রী প্রহৃত

Mohmmad Esmailzadeh, blogger and political activist. Source: Botimar blog

মোহাম্মদ এসমাইলজাদেহ, ব্লগার এবং রাজনৈতিক একটিভিস্ট। সূত্রঃ বোটিমার ব্লগ।

সেপ্টেম্বর ২০১২-এর শুরুতে সংবাদপত্রের সাইট খবর প্রদান করে যে [ফার্সী ভাষায়], ব্লগার এবং রাজনৈতিক একটিভিস্ট মোহাম্মদ এসমাইলজাদেহ-এর স্ত্রী কাতাইয়ুন বাহারামিকে উত্তরের শহর বাবোল-এর পুলিশ প্রধান প্রহার করে। সে সময় তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন।

এসমাইলজাদেহ সাধারণত সংস্কৃতি নিয়ে, এবং বোটিমারে লিখতেন, আবার একই সাথে তিনি একজন সংস্কারপন্থী। ২০০৯ সালের বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৯০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এখনো মাঝে মাঝে নিরাপত্তারক্ষীরা তার গৃহে অনুসন্ধান চালায় এবং একই সাথে বিভিন্ন ব্যক্তিগত জিনিসপত্র জব্দ করে। উক্ত প্রহারের ঘটনায় কাতাইয়ুন-এর দাঁত ভেঙ্গে গেছে এবং তাকে কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয়।

নেই অনুতাপ

শিভা নজর আহারি, একজন ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মী, যাকে সেপ্টেম্বর ২০১২ এ, চার বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১০-এ ব্লগ লেখিকার বিরুদ্ধে ‘ইসলামিক সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রচেষ্টার’ অভিযোগ আনা হয়েছে, যার সাথে যুক্ত করা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, এবং জন নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ।

এই ঘটনায় পরিহাসের বিষয় হচ্ছে “স্রষ্টার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার” মত অভিযোগের পরও শিভা নিজেকে সৌভাগ্যবতী ভাবতে পারেন, এই কারণে যে তাকে মাত্র চার বছরের কারাবাস প্রদান করা হয়েছে, যে অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারত।

শিভাকে বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছে, তবে শিভা বলেছে নিজের কোন কাজে তার কোন অনুতাপ নেই। এই তথ্যচিত্রে শিভাকে দেখা যাচ্ছে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর, যেখানে সে বলছে, যে কোন মূল্যে সে ইরানে থেকে যাবে। শিভা বলছে যে সে মনে করে, ইরান হচ্ছে সেই স্থান যেখানে তার কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়বে।

গুজব নাকি বাস্তবতা?

ব্লগারদের নিরাপত্তার বিষয়ে গত বছরের এক সংবাদ, বেশ কিছু ব্লগারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ইরান ভিত্তিক মাশরেগ নিউজ এক বছর আগে সংবাদ প্রদান করে যে দক্ষিনের শহর বন্দর আব্বাস থেকে “সায়াগান এসফানদায়েরি” (সম্ভবত ছদ্মনাম) নামক এক ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ইসলাম এবং ইরানের সরকারকে অপমান করা, সাথে বিদেশী প্রচার মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ইরান সরকার কিংবা মানবাধিকার সংস্থার কেউ এই সংবাদ নিশ্চিত করেনি।

গামেরন নামের ব্লগে সাধারণত সায়াগান লিখে থাকত, যেখানে ট্যাগলাইন জানাচ্ছে যে ব্লগারের বেশীর ভাগ পোস্ট ছিল ব্যাঙ্গাত্মক এবং সে সব সমালোচনায় শঙ্কিত হবার মত কিছু ছিল না।

ইরানের লিঙ্ক শেয়ার করা সাইট বালাতারিয়ান-এ বেশ কয়েকজন ব্লগার লিখেছে যে উল্লেখিত সময় থেকে ব্লগার আর লিখছে না, তবে সেটা প্রযুক্তিগত বা ব্যক্তিগত কারণে হতে পারে… সম্প্রতি তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে যা কিনা ব্লগারে মতামতের সাথে একবারে মেলে না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এই যে এক বছর আগে সে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল এবং হয়ত সে তার ব্যক্তিগত সব ব্লগ এবং স্যোশাল সাইটের একাউন্ট নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .