ফিলিপাইন সিনেটের সভাপতি জুয়ান পন্সে এনরিল স্বীকার করেছেন যে তিনি ব্লগ এবং ব্লগিং করা সম্বন্ধে কিছুই জানেন না কিন্তু তারপরেও তিনি একটি ব্লগ নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাব করেছেন, যখন তার এক সহকর্মী সিনেটে অনলাইনে গালাগালির (সাইবার নিন্দা) শিকার হবার অভিযোগ করে, তারপরে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। অনেকে মনে করছে যে এই আইন দেশটির অনলাইন স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করার এক প্রচেষ্টা।
শেডেড অফ গ্রে সিনেটরদের অন্য বিষয়ে মনোযোগ প্রদান করার বিষয়টির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন:
সিনেটর, আপনার জন্য একটা ভালো পরামর্শ, ব্লগ বিরোধী আইন প্রস্তাব করার বদলে কেন আপনারা চৌর্যবৃত্তি প্রতিরোধ আইন তৈরি করছেন না কেন, এবং আপনারা যখন এই কাজের সঙ্গে জড়িত তখন একটি উন্নত আচরণ বিধি এবং নৈতিকতার নিতিমালা তৈরি করার বিষয়েও ভাবছেন কি?
বং মেনডোজা প্রশ্ন করেছেন রাজনৈতিক ব্লগকে নিয়ন্ত্রণ করা কি বাস্তবসম্মত কিনা:
রাজনৈতিক ব্লগ সম্বন্ধে কি বলা যায়? কি ভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব? প্রথমে থেকে কি তাদের নজরদারির উপর রাখা উচিত? ব্লগ সংবিধানের স্বাধীন কথামালার আওতায় সুরক্ষিত। ব্লগকে দায়বদ্ধ করে রাখার জন্য ইতোমধ্যে কি যথেষ্ট আইন তৈরি করা হয়নি? যদি কোন ব্লগার সরকার উৎখাতের কথা বলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অথবা বিদ্রোহের অভিযোগ আনা যেতে পারে? নিঃসন্দেহে, ব্লগাররা সাইবারজগতে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখার বিষয়টি উপভোগ করে। তবে যারা এই বিষয়ে তদন্ত করবে, তারা কি ব্লগারের আইপিএ্যাড্রেস (বা এ্যাড্রেসসমূহ) চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।
সিনেটের সভাপতি জুয়ান পন্সে এনরিলে যিনি ব্লগের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ করেছেন, তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি ইন্টারনেট সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। ব্লগ কি জিনিস তা তিনি জানেন না। তিনি মনে করেছিলেন যে ব্লগ মানে হচ্ছে স্লোগান। তার নিজের কোন ব্লগ নেই। তারপরেও তিনি অনুভব করছেন যে ব্লগের উপর নজরদারি করার জন্য একটি আইন পাস করা দরকার।
যদি এ রকম একটি আইন পাস করা হয়, তাহলে আমরা সকলে একযোগে এর শিকার হব। সম্ভবত আমরাই হব বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রে, যাদের সাংসদের আত্মসম্মানে আঘাতের কারণে একটি ব্লগ নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্যাসি লইয়ার–এর মতে ব্লগ নয়, সাইবার অপরাধের উপর নজর রাখতে হবে:
আমি জানি না বিষয়টিকে কি আর কি ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ইন্টারনেটে সৃষ্টিশীলতা বাড়ে কারণ তা নিজের মত করে সবাইকে বেড়ে উঠতে দেয়। কোন ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া। কিন্তু এটা তাদের চিন্তার কারণ নয়, তাই কি?… এটা ব্লগ নয়, যার উপর নজরদারি করা উচিত, সাইবার অপরাধ সংঘঠিত হবার ঘটনার প্রতি মনোযোগ প্রদান করা উচিত। প্রায় প্রতিদিন আমার বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ চুরি হয়ে যায় (না বলে ব্যবহার করে), এমনকি কি প্রধান প্রধান সংবাদপত্র (এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সংবাদ কণিকা) তা করে থাকে। আর এই ধরনের চৌর্যবৃত্তির বিরুদ্ধে আমি প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, কোন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া অথবা চুরি করে ব্যবহার করা উপাদান তাদের সাইট থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য আমি শেষ পর্যন্ত যাই। কিন্তু যে সমস্ত নাগরিকদের এমনকি এই অভিজ্ঞতা নেই তারা কি ভাবে বিষয়টিকে উপলব্ধি করবে?
মুলা সা পিলিপিনাস ব্লগিং বিলকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সাথে তুলনা করেছেন:
ব্লগিং-এর জন্য আইন? দেখে মনে হচ্ছে সর্বত্র আবার সামরিক আইন জারি করা হচ্ছেঃ “গণ মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ”।
ব্লগ নিয়ন্ত্রণ আইন– এর চেয়ে বেশী কি আপনার আর কিছু করতে পারেন না? সরকারের তিনটি বিভাগ যে ভাবে দেশকে পরিচালনা করছে সেক্ষেত্রে অনুভূতি এবং চিন্তা যাই হোক না কেন সে বিষয়ে আমরা কণ্ঠ সীমিত করে ফেলছেন? আপনারা যদি আরেকটু বিনম্র হন এবং বোকার মত ওইসব ব্লগ বিরোধী আইন তৈরি না করতেন- তাহলে আপনারা হয়ত আরেকটু বেশী কিছু করতেন, তাহলে আপনারা আমাদের অপ্রচলিত পুনর্মূল্যায়িত দণ্ডবিধির ধারায় সংশোধন আনতে পারতেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশটিতে যে সামরিক আইন জারি করা হয়, সিনেটের সভাপতি এনরিলে তার এক অন্যতম প্রয়োগকারী ছিলেন।
সিনেটর-এর প্রতি দি ভিনসেন্টন পোস্ট-এর বার্তা হচ্ছে “ ইন্টারনেট এবং ব্লগ সমাজ তার নিজের হাতে ছেড়ে দাও।”
দেখে মনে হচ্ছে সে দেশটির রাষ্ট্রীয় আইন প্রণেতার সম্মিলিত ভাবে একটি বিষয়ে একমত: কেবল ফিলিপাইনসের ব্লগিং এবং অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যক্রম নয়, সমগ্র ইন্টারনেটকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে চায়।
স্বৈরতান্ত্রিক এবং হস্তক্ষেপমূলক বৈশিষ্ট্যের কারণে আমি প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক আইনের কঠোর বিরোধী। কিন্তু এটি… কেবল ফিলিপাইনের ব্লগিং নয়, ফিলিপাইনসের সমগ্র ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণে আনার এই প্রস্তাবনাটি যেন আলোচনার অযোগ্য।
ইন্টারনেটকে একটি জাতি বা স্বয়ং একটি রাষ্ট্রে পরিণত হতে দিন!
ইন্টারনেট এবং ব্লগ সমাজকে তার নিজের হাতে ছেড়ে দিন
সিনেটর টিটো সাতো, বিতর্কিত প্রজনন স্বাস্থ্য বিলের বিপরীত অবস্থান গ্রহন করার কারণে স্থানীয় এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে যখন হয়রানির অভিযোগ আনেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্লগ বিষয়ক আইনের চিন্তা এনরিলের মাথায় প্রবেশ করে। একই সাথে সাতো তার বিরুদ্ধে আমেরিকার এক ব্লগারের লেখা চুরির অভিযোগের জবাব প্রদান করেন। এক মাস আগে যখন তিনি প্রাকৃতিক নয় এমন জন্ম নিরোধক উপাদান ব্যবহারের বিপদ সম্বন্ধে ভাষণ প্রদান করেন, সে সময় তার বিরুদ্ধে এই লেখা চুরির অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
স্টুয়ার্ট সান্তিয়াগো উল্লেখ করছেন যে, স্বয়ং সাতো তার সমালোচকদের হয়রানি করছেন:
সাতো হচ্ছে সেই জন যে আক্রমণাত্মক আচরণ করছে, সিনেটে উচ্চ এক ক্ষমতাসীন আসনে বসে আমাদের উপর চাবুক চালাচ্ছে। সাতো হচ্ছে সেই জন যে সুবিধার এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমাদের মৌখিক ভাবে আক্রমণ এবং হয়রানি করছে, নোংরা ভাবে আমাদের অভিযুক্ত করছে এবং এমনকি অভিযোগ আনছে যে আমরা টাকার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি।
আসলে সাতো যা চায় তা হচ্ছে আমরা সকলে যেন চুপ করে থাকি, তার বিরুদ্ধে যেন দলবদ্ধ হয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করি।