প্যালেস্টাইনঃ জীবন যাত্রার ব্যায় বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে

প্রায় এক সপ্তাহ আগে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরে নিত্য পণ্যের তীব্র মূল্য বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ শুরু হয় তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২-এ, গণপরিবহন এবং স্কুলগুলোতে ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক এবং ফিলিস্তিনি একটিভিস্টরা এই বিক্ষোভের অংশ নিয়েছে এবং টুইটার এবং অন্য সামাজিক প্রচার মাধ্যম প্লাটফর্মে এই বিক্ষোভের বিষয়ে লিখেছে।

একটিভিস্ট স্কট ক্যাম্পবেল এই ঘটনার সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে যা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত হয়:

@এ্যাংরিহোয়াইটকিড: রামাল্লা, হেবরন, নাবলুস, তুলকারেম…এর কোথাও যাত্রী পরিবহনের জন্য কোন যান ছিল না। নাবলুস, হেবরন এবং রামাল্লাহ ও কালানদিয়ার মাঝে যান চলাচলের রাস্তায় টায়ার পোড়ানো হয়েছে।

ধর্মঘটে অংশ নেওয়া সরকারি কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রী ফাইইয়াদ-এর অফিসের সামনে সমাবেত হয়েছে। ছবি টুইটার ব্যবহারকারী @শেখএনবি-এর।

হেবরনের বাসিন্দা ব্লগার ওলা আল-তোমামি এই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শনের স্থান থেকে টুইট করেছে। ভদ্রমহিলা দেখেছেন কি ভাবে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, যা প্রধানমন্ত্রী সালাম ফাইইয়াদ-এর বিরুদ্ধে স্লোগান প্রদান করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়, তা এক সময়ে পাল্টে যায়[ আরবী ভাষায়]:

@OlaAlTamimi: أخيرا ظهر الغاز المسيل للجموع المختبىء في مخازن الشرطة كل هادا عشان الهتاف ضد أبو مازن والسلطة #الخليل
অবশেষে, পুলিশের স্টোরে যে সব টিয়ার গ্যাস লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তা দৃশ্যমান হয়। এই সমস্ত ঘটনা ঘটে কারণ,তারা আবু মাজেন [মাহমুদ আব্বাস] এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান প্রদান করে।

ওলাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে এই বিক্ষোভের মূল কারণ কি, আর পরে পৌরসভা ভবনে পাথর ছুড়ে মারার পেছেন দায়ী ছিল কারা। এর উত্তরে ওলা জানায় [আরবি ভাষায়] :

@OlaAlTamimi: الي في الشارع ناس عاديين ومنهم نشطاء وطنيين ..فجأة طلع مين يكسر ويخرب وعددهم لا يتجاوز 50 شخص من مظاهرة شارك فيها 10 الاف شخص
রাস্তায় যারা অবস্থান করছিল, তারা ছিল সাধারণ জনতা, যার মধ্যে কয়েকজন একটিভিস্টও অর্ন্তভুক্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদল নাগরিকের আচরণ পাল্টে যায়, যারা জিনিসপত্র ভাঙ্গতে এবং লুটপাট করতে শুরু করে, কিন্তু ১০,০০০ বিক্ষোভকারীর মধ্যে তাদের সংখ্যা ৫০-এর বেশী ছিল না।

লুটপাটের এই ঘটনার ফলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, সাংবাদিক নোয়াহ ব্রাউনিং যার সাক্ষী:

‏@শেখএনবি:হেবরনে, দাঙ্গা দমনের যন্ত্রপাতি নিয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছে, তাদের সাথে পাথর নিক্ষেপের খেলা খেলছে, একবার সামনে এগুচ্ছে একবার পিছিয়ে যাচ্ছে।

নাবলুসে একই ধরনের দৃশ্যের অবতারণা ঘটে, শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ শেষে দাঙ্গায় পরিণত হয়। ইয়ামামা শাহকা টুইট করেছে [আরবী ভাষায়] :

@yamama_sh: كان الاحتجاج ضد الغلاء .. بعدين ضد فياض.. بعدين ضد السلطة.. و هلأ صار ضد بعض ..
এই বিক্ষোভ ছিল পণ্যের দাম অত্যাধিক বেড়ে যাবার কারণে, পরে তা ফাইইয়াদ এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়, আর এখন তা একে অন্যের বিরুদ্ধে করা এক বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে।

মুহাম্মাদ মাশহারকা, হেবরনের একজন ব্লগার, তিনি একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হানাহানির বিরুদ্ধে তার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন [আরবী ভাষায়]:

أقول لكل المستعجلين على العنف صبراً، فإن احتلالاً ينتظرنا، نجمع له ويجمع لنا، فحضر له دون أن تحرفنا عن مطالبنا، فالجماهير التي انطلقت بوعيها من إسقاط حكومة فياض إلى تحميل أبو مازن للمسؤولية سوف تتطور بوعيها إلى بناء البديل الوطني الشرعي والممثل انطلاقاً من برنامج نضالي شامل ضد الاحتلال.
যারা শান্ত থাকার বদলে দ্রুত সংঘর্ষের পথ বেছে নেয় আমি তাদের বলছি, আগামীতে দখলদারিত্বের বিষয়টি আসছে, সে নিজে স্বয়ং আমাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যেমনটা আমারা তার জন্য অপেক্ষা করছি। আসুন আমরা আমাদের দাবীকে এর থেকে আলাদা না করে এর জন্য প্রস্তুত হই। নাগরিকরা ফাইইয়াদ সরকারের পতনের আহ্বান জানিয়ে, তারপর আবু মাজেন এর দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জেনে তাদের এই যাত্রা শুরু করেছে, আর তারা এখন বৈধ, জাতীয়তাবাদী, প্রতিনিধিত্বশীল বিকল্পের বিষয়টির বিবর্তন এবং নির্মাণ করতে যাচ্ছে, এবং এক পরিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে তারা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছে।

১১ সেপ্টেম্বর তারিখে, রামাল্লায় শত শত ফিলিস্তিনি নাগরিক এক প্রতিবাদে (যার শুরু ফেসবুকে) সাড়া দেয়, যেটিতে মর্যাদা ও স্বাধীনতা এবং প্যারিস চুক্তির বিরোধিতা করা হয়, এই চুক্তি ছিল অসলো এ্যাকোর্ড নামে পরিচিত শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপটে তার এক বিবর্ধিত অর্থনৈতিক চুক্তি।

বিস্ময়করভাবে, এই বিক্ষোভ আল মুকাতায়া’আ-এ পৌঁছতে সক্ষম হয়, যা কিনা সরকারের সদর দপ্তর, এবং বিক্ষোভকারীরা অসলো শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান প্রদান করে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস এতে কোন রকম হস্তক্ষেপ করেনি এবং কাছে অবস্থান করা নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে কোন রকম সংঘর্ষ না ঘটিয়ে তারা এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়, লিনাহ আল সাফিনের কাছে যার একটা ব্যাখ্যা ছিল:

@লিনাহআলসাফিন: আজ মুকাতায়া’আ-এ বিক্ষোভকারীদের যেতে দিয়ে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাদের গণতান্ত্রিক চেহারা প্রদর্শন করল, যার মধ্যে দিয়ে তারা নাগরিকদের বিভ্রান্ত করল, যেন তারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন না করে।

প্রধানমন্ত্রী সালাম ফাইইয়াদ যখন ঘোষণা প্রদান করে যে ভ্যাটের পরিমাণ ১৫ শতাংশ কমানো হবে এবং ডিজেল, তেল এবং কেরোসিন মুল্য কমিয়ে আগস্টে যে দামে বিক্রি করা হত, সেই দমিয়ে নামিয়ে আনা হবে- তার ঠিক পরেই এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, দৃশ্যত এই ঘোষণা বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ প্রশমিত করেনি।

অসলো শান্তি চুক্তির ধারায় পরবর্তীতে প্যারিসে প্যারিস প্রোটোকল নামে যে অর্থনৈতিক চুক্তি করা হয়, এই সব বিক্ষোভ সরাসরি তার বিরুদ্ধে। এই চুক্তি ১৯৯৪ সালে পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) এবং ইজরায়েল-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যে চুক্তি অনুসারে মাধ্যমে উভয়ে পরস্পরের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যার মধ্যে ছিল বাণিজ্য, কৃষি পণ্য এবং আমদানি ও রপ্তানি।এখন ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এই চুক্তির পুনর্বিন্যাস এবং সংশোধনের আহ্বান জানাচ্ছে, আর যদি তা না করা হয় তাহলে তারা এই চুক্তি বাতিলের দাবী জানাচ্ছে। ব্লগার রায়া জিয়াদা একটি ব্লগ পোস্টে ব্যাখ্যা করেছে [আরবী ভাষায়] কেন ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্যারিস চুক্তির বিরোধিতা করা উচিত।

আবির কোপ্তি বিশ্বাস করেন যে বর্তমানে চলতে থাকা এই বিক্ষোভ কেবল এক শুরু মাত্র এবং এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা আগামীতে আরো বৃহৎ এক রাজনৈতিক বিষয়, বিশেষ করে ইজরায়েল-এর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে। ভদ্রমহিলা টুইট করেছেন:

@আবিরকোপ্তি : আমি সত্যি আশা করি যে, বিক্ষোভের এই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর, আমরা আসলো শান্তি চুক্তির ইতি টানবো এবং ইজরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাব। #এন্ডঅসলো

এই বিষয়ে টুইটারে আরো প্রতিক্রিয়া জানার জন্য #প্যালপ্রোটেস্ট হ্যাশট্যাগ অনুসরণ করুন। ছবির জন্য ফ্লিকার ব্যবহারকারী একটিভস্টিল-এর প্যালেস্টাইনিয়ান স্যোশাল স্ট্রাগল শিরোনামে ছবির সেট দেখুন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .