ভারতের মধ্য প্রদেশ অঙ্গরাজ্যের খান্ডোয়া জেলার ঘনোঘোলগাঁও নামক গ্রামের ৫১ জন অধিবাসী নর্মাদা নদীর [1] উপর তৈরি করা ওঁমকারেশ্বর বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার প্রতিবাদে সেখানে গলা পানিতে অবস্থান করে [2] ‘জল সত্যগ্রহ’ নামক এক প্রতিবাদের সূচনা করেছে। সত্যগ্রহ [3] (যার মানে (সত্যের দ্বারা পরিচালিত) নামক শব্দটি মহাত্মা গান্ধীর [4] এক আদর্শ এবং অনুশীলন, যা কিনা একই সাথে অহিংস প্রতিবাদ বা নাগরিক প্রতিবাদ হিসেবে পরিচিত।
উষা হেজ এই প্রতিবাদ সম্বন্ধে সংবাদ [5] প্রদান করছে:
মধ্য প্রদেশের ৫১ জন ব্যক্তি পানির মধ্যে অবস্থান করছে। তারা ওঁমকারেশ্বর বাঁধের সব কটি গেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য বাড়তে থাকা পানির মধ্যে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘটনার ফলে তাদের গ্রামগুলো উপচে পড়া পানিতে ডুবে যায়। এখন তারা যথাযথ পুনর্বাসনের দাবী জানাচ্ছে।
টেলস অফ নর্মাদা নামক ব্লগ [6] সবসময় ছবি সহ এই প্রতিবাদের তাজা সংবাদ প্রদান করে যাচ্ছে। ডন টু আর্থ [7] নামক ব্লগও এই ঘটনার অনেক ছবি পোস্ট করেছে
[8]ভিডিওর স্ক্রিনশট, ওঁমকারেশ্বর বাঁধ প্রকল্পের কারণে উচ্ছেদকৃত নাগরিকরা প্রতিবাদ তুলে ধরছে
নর্মাদা বাঁচাও নামক সামাজিক আন্দোলন এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে, যা আদিবাসী, কৃষক, পরিবেশবিদ এবং মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে গঠিত এই আন্দোলন, নর্মাদা নদীর বাঁধ তৈরির শুরু থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। ১৯৮৪ সালে নর্মাদা নদীর উপর ইন্দিরা সাগর বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং ১৯৮৫-৮৬ সালে নর্মাদা উপত্যকার বাস্তুহারা নাগরিকরা নিজদের সংগঠিত করতে শুরু করে। ইন্দিরা সারাবোর প্রকল্পের পরে এর নিচের দিকে ওঁমকারেশ্বর [9], মহেশ্বর [10] এবং সরদার সরোবর [11] নামক তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
জাতীয় নাগরিক তথ্য অধিকার প্রচারণা নামক প্রতিষ্ঠানের একটি স্বাধীন কমিশন ইন্দিরা সাগর বাঁধ –এর পুনর্বাসনের বিষয়ে তদন্ত করেছে। একটি রিপোর্টে জানা যায় [12] যে এই ঘটনায় ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং ইন্দিরা সাগর পরিয়োজনা নামক পুনর্বাসন ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে মধ্য প্রদেশ সরকার সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে নর্মাদা উপত্যাকার বাসিন্দাদের প্রতি অন্যায় করেছে।
মধ্য প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গুজরাটে সর্দার সরোবর নর্মাদা বাঁধের পানি উপচে পড়েছে। ভিডিও আপলোড করেছে দেশ গুজরাট [13]।
সম্প্রতি আদালত আদেশ প্রদান করে [14] যে ওঁমকারেশ্বর এবং ইন্দিরা সাগর বাঁধের কারণে যারা বাস্তুহারা হয়েছে তাদের-হারানো জমি সাপেক্ষে কমপক্ষে দুই হেক্টর করে জমি প্রদান করতে হবে। স্থানীয় এক সংবাদপত্র সংবাদ প্রদান করেছে [15] যে হাজার হাজার নাগরিককে উদ্বাস্তু করা সত্ত্বেও তাদেরকে এখনো পুনর্বাসিত করা হয়নি। মধ্য প্রদেশ সরকার বাঁধে পানি প্রবাহের উচ্চতা চার মিটার বাড়িয়ে সেটিকে ১৮৯ মিটার থেকে ১৯৩ মিটারে [2] পরিণত করেছে। আর এর ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকা পানি বেশ কিছু গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যায় [16]।
ওঁমকারেশ্বর বাঁধের পানি প্রবাহের স্তর যাতে ১৮৯ মিটারে নামিয়ে আনা হয় তার জন্য ঘনোঘোলগাঁও -এর আক্রান্ত ৫১ জন অধিবাসী [2] ১৬ জুলাই তারিখে জল সত্য গ্রহ নামের একটি আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবী হচ্ছে আক্রান্ত সকল অধিবাসীকে ভূমির বদলে ভূমি এবং পুনর্বাসনের অন্য সব সুবিধা প্রদান করতে হবে।
নীচের এই ভিডিও [17] প্রতিবাদের দশম দিনে ধারণ করা হয়, যাতে ওঁমকারেশ্বর বাঁধের কারণে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া নাগরিকদের প্রতিবাদের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে:
এখানে টুইটারের কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল:
@ডিবান্ডি [18]: ওঁমকারেশ্বর বাঁধের কারণে যারা বাস্তুহারা, তাদের একবারে খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে… http://t.co/mWykJZLb [19]
@জেমেউইলস [20]: ৩ সেপ্টেম্বর তারিখে ওঁমকারেশ্বর বাঁধের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় মানুষের গলা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে…http://t.co/nbHBfbwX [21]
@ হ্যারিয়েটল্যাম্বএফটি [22]: এত বছর পার হয়ে গেছে, এখনো নর্মাদা নিয়ে একটিভিস্টরা লড়াই করে যাচ্ছে। আরটি@এইচটিটুইট: নর্মাদায় পানি মানুষের গলা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। http://t.co/5kpbdog5 [23]
@বাবাইয়েসুদাস [24]:এই রকম পরিস্থিতিতে যখন পুনর্বাসনের বিষয়টি প্রত্যাখান করা হয়, তখন তা সরকার নয়, সেটা হয়ে দাঁড়ায় গুণ্ডাদের রাজত্ব। http://t.co/Oinj4c3O [25]
এই বিষয়ে যথেষ্ট সংবাদ প্রদান না করার জন্য বেদ প্রকাশ সিংহ [26] প্রচার মাধ্যমকে অভিযুক্ত করেন :
@বেদফরগুটুক [26]:এই ছবিটি দেখুন এবং পুনরায় টুইট করুন। বিগত ১৩ দিন ধরে নাগরিকরা গলা সমান পানিতে অবস্থান করে আছে। আর #প্রচার মাধ্যম কি করছে। http://t.co/vf6V5Hh1 [27]
এশিয়ান হিউম্যান রাইট কমিশন (এএইচআরসি)-এর একটি দরখাস্তে [28] আপনি স্বাক্ষর করতে পারেন যেখানে মধ্য প্রদেশের ওঁমকারেশ্বর জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে উচ্ছেদকৃত ব্যক্তিদের জন্য গ্রহণযোগ্য পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপডেট:সাম্প্রতিক এক সংবাদ [29] অনুসারে মধ্য প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ওঁমকারেশ্বর এবং খান্ডোয়া এলাকায় নর্মাদা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি প্রবাহের স্তর ঠিক রাখার জন্য সরকার ওঁমকারেশ্বর বাঁধের সব কটি গেট খুলে দিয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে খান্ডোয়া জেলার ৩০ টি গ্রামে বিপদ আরো বাড়লো, যে সমস্ত গ্রাম ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে আছে।