প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে তুর্কমেনিস্তান হচ্ছে সর্বোচ্চ সরকারি ছুটির দেশ। যার মধ্যে রয়েছে বৃষ্টিপাত দিবস- সোনালী শস্যদানা উৎসব, যা মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে অথবা নভেম্বর মাসে তুলা চাষ উৎসব তুর্কমেনিস্তানের ভিন্ন কয়েকটি ছুটির উদাহরণ। সোভিয়েত যুগ, ইসলাম এবং প্যাগান বা পুরোনো ঐতিহ্যের উদযাপন এর সাথে ডিসেম্বরের ১২ তারিখে উদযাপিত নিরপেক্ষতা দিবস-এর মত রাজনৈতিক দিবসের ছুটিকে যোগ করুন-আর এতে, পরিষ্কার হয়ে যাবে যে ঘরের বাইরে পোলাও খাওয়া এবং একসাথে মিলে নাচার জন্য মধ্য এশিয়ার বিচ্ছিন্ন এই দেশটিতে দিবসের কমতি নেই।
আর দেশটির অন্যতম এক প্রিয় ছুটির দিন হচ্ছে তরমুজ দিবস, যা আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের রোববারে পালন করা হয়ে থাকে, তবে সত্যিকার অর্থে তা উক্ত মাসের প্রতিটি দিনই পালন করা হয়ে থাকে, বিশেষ করে যখন দেশটির দামী চাষের জমি মানব প্রজাতির জন্য সুস্বাদু কিছু শস্য উৎপাদন করে থাকে।
‘সবচেয়ে মিষ্টি’ ছুটি
আনুষ্ঠানিকভাবে তরমুজ দিবসে ছুটি প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন সাপামুরাত নিয়াজভ, ফলের মত মধুর এই ব্যক্তিটি ১৯৯৪ সালে দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। প্রতি বছর এই দিনে দেশটির প্রধান সবাইকে এক অভিবাদন জানিয়ে একটি বক্তৃতা প্রদান করে এবং তুর্কমেন তরমুজের জন্য একটি দিন উদযাপনের দাবী জানায়। এই রকম একটি বিশ্বাস রয়েছে যে তুর্কমেনিস্তানের তরমুজ এবং খরবুজ বিশ্বের সেরা এবং দেশের প্রায় অদ্বিতীয় সেরা এক ফল। রাষ্ট্রপতি গুরবানগুলায়েভ বেরদামুহামেদভ তরমুজ দিবসে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ প্রদান করেন, যেদিন তিনি জনতাকে স্মরণ করিয়ে দেন, প্রাচীনকাল থেকে তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তরমুজের জন্মভূমি বলে পরিচিত। যেমনটা গ্লোবাল ভয়েসেস-এ এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে, খুব কম লোকই তার সাথে দ্বিমত পোষণ করে।
এই দিনে ঐতিহ্যগত ভাবে তুর্কমেনিস্তান সরকার তরমুজ চাষীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন এবং এই ফসল চাষের দিবসটিকে সবাই গান আর নাচের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে, যেমনটা এই ভিডিওতে দেখা যাবে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে তুর্কমেনিস্তান সরকার গত বছরের মত এ বছরও এই ছুটির দিনটিকে গুরুত্বের সাথে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর কয়েকদিন আগে তালয়াপ্লার.কমে বেলিগ্লিয়ার লিখেছিল [তুর্কমেন ভাষায়] :
Ýetip gelýän gawun baýramynyz gutly bolsun!
এই বিষয়ে সাড়া প্রদানকারী বেশ কিছু ব্যক্তি গণ উদযাপনের সময় ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত হবার বর্তমান অনুশীলন নিয়ে রসিকতার সাথে আলোচনা করেছে। বাহবিত পোস্ট করেছে [তুর্কমেন ভাষায়]:
ertir ayyn 12 anfiteatrda belleyaler sagat 17:00 da. Eger howes bildiryan bar bolsa barayyn gawun iymage
দুইয়াগুর এতে সাড়া দিয়েছেন [তুর্কমেন ভাষায়]:
Duygur: Yok cagyrma Önem yany zordan kanikula cykdyk. Cagyrmawersinler cäre bar diyip.
সবচেয়ে মিষ্টি এই ছুটির দিন নিয়ে দৃশ্যত বিদেশী পাঠকেরাও উচ্ছসিত এবং বিশেষ করে তুর্কমেনিস্তানের তরমুজ নিয়ে।
টুইটারে, কেটি আউনে এই উৎসব নিয়ে তৈরি হওয়া এক প্রশ্নের ব্যাপারে জবাব প্রদান করেছেন :
তরমুজ দিবস পালন করার জন্য [আমি] সেখানে যাইনি। তবে তরমুজগুলো আসলে উত্তম ছিল! 🙂
তবে মনে হচ্ছে এতে অনেকের উৎসাহ বেশ কম। নিকোলাস ক্লাইটর বলছে:
সবাইকে তরমুজ দিবসের শুভেচছা পাঠানোর মধ্যে দিয়ে বর্তমানে আমি আমার ৮ জন অনুসারীকে হারিয়েছে। যারা মনেপ্রাণে তরমুজ ঘৃণা করে তাদের প্রতি আমি আরো একবার আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
তবে শেষে বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা মিটে যায়:
কয়েকদিন আগে “তুর্কমেন তরমুজ দিবস” নামক হঠকারিতায় আমি আমার যে সমস্ত অনুসারী হারিয়েছিলাম তাদের সকলকে আমি আবার ফিরে পেয়েছি। যারা এখনো আমার সাথে আছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ।
এভরি ডে’স এ হলিডে নামক ব্লগের এক ব্লগার পরিহাসের সাথে তুর্কমেনিস্তানের ছুটির দিনগুলোর বিষয়ে বর্ণনা করেছে, এবং যারা তরমুজ এবং শসা জাতীয় ফল খায় সেই কিউকারবেটিসিয়ানদের ১২ আগস্ট দিনটি যাতে শুভ দিন হিসেবে অতিবাহিত হয়, তার জন্য শুভেচছা জানিয়েছে। এদিকে ব্লগের অন্যতম কে পাঠক তুর্কমেনিস্তানে ক্ষমতার পথ এবং তার বিখ্যাত তরমুজের মাঝে এক যোগসূত্র তৈরি করেছে:
‘পশ্চিম তারার রাজ্যে ভুতুড়ে ট্রেন’ (ঘোস্ট ট্রেন ইন ইস্টার্ন স্টার) নামক বইয়ে লেখক তুর্কমেনিস্তানের প্রাক্তন নেতা নিয়াজভ-এর উন্মাদনা এবং আত্ম-অহংকারের বিষয়ে বেশ কিছুটা উল্লেখ করেছে। কাজে যখন সে তরমুজের জন্য একটি ছুটির দিন ঘোষণা করল, তখন তা আমাকে আদৌ বিস্মিত করেনি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ তাজিকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি তুর্কমেনিস্তানকে অনুসরণ করে বিগত ছয় বছর বা তার আগে থেকে নিজস্ব ‘তরমুজ দিবস’ পালন করা শুরু করেছে। তবে এ বছর দেশটির সরকার তরমুজ দিবসকে, ২ সেপ্টেম্বর মধু দিবসের সাথে মিলিয়ে একত্রে ‘তরমুজ এবং মধু দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে [রুশ ভাষায়]। তাজিকিস্তানের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বিবিসি দেশটির তরমুজ এবং মধু দিবস উদযাপনের এই ছবি সংবাদটি তুলে ধরেছে।