এই প্রবন্ধটি লন্ডন অলিম্পিক-২০১২ সংক্রান্ত আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
থাইল্যান্ডের জন্যে লন্ডন ২০১২ অলিম্পিক গেমস ছিল একটি হতাশা। ১৯৯৬ সাল থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এই দেশটি প্রতি অলিম্পিকে অন্ততঃ একটি স্বর্ণপদক জয় করেছে। এবছর থাইল্যান্ড জিতেছে দু’টি রৌপ্য এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক।
তার প্রতিবেশীদের তুলনায় অবশ্য থাইল্যান্ড অপেক্ষাকৃত ভালই করেছে। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া প্রত্যেকে একটি রৌপ্য এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে আর সিঙ্গাপুর জোগাড় করতে পেরেছে দু’টি ব্রোঞ্জ পদক। অন্যান্যরা গেমস ত্যাগ করেছে শূন্য হাতে।
অলিম্পিক গেমসে জয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে “নঙ তায়েউ” নামে পরিচিত শ্রীকায়েউ পিমসিরি ছিলেন শ্রেয়তর প্রতিযোগী। তিনি মহিলাদের (৫৮কেজি) ভারোত্তোলনে একটি রৌপ্য পদক নিয়ে বাড়ি ফিরেন। খোন কায়েন প্রদেশের এই বাসিন্দা তার নিজ শহরের জন্যে যে গর্ব ও সম্মান বয়ে এনেছেন, তাতে তার নামে সেখানকার একটি স্থানীয় রাস্তার নামকরণ সম্পর্কে কথা চলছে। দেশে ফিরে আসার পরে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ মা দিবসে তাকে ‘সবচেয়ে কৃতজ্ঞ মেয়ে’ হিসেবে পুরস্কার প্রদান করেছে।
চানাতিপ সংখাম বা “নঙ লেক” মহিলাদের (৪৯কেজি) তায়কোয়ান্দোতে একটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন। নঙ লেক সেমিফাইনাল ম্যাচে এগিয়ে থাকলেও শেষের দিকে খেই হারিয়ে ফেলে পরাজয় বরণ করেন। তারপরও তাকে “বীরাঙ্গনা” নামে ডাকা হচ্ছে এবং লন্ডন থেকে ফিরে এলে তাকেও তার নিজের শহর পাত্তালুং-এ শোভাযাত্রা প্রদর্শন করা হয়।
সবচেয়ে বিতর্কিত পদক বিজয়ী হলেন পুরুষদের লাইট ফ্লাইং মুষ্টিযুদ্ধে রৌপ্য পদক বিজেতা কায়েও পঙপ্রেউন। কায়েও-এর পরাজয়টি অধিকাংশ থাই ভক্তকে বিস্মিত করেছে। তারা বিশ্বাস করতে পারে নি যে খেলায় থাই মুষ্টিযোদ্ধাকে পরাজিত সাব্যস্ত করা হবে। চার বছর আগে বেইজিং-এ বিজয়ী ৩১ বছর বয়েসী জোউ তার খেতাব রক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে এই বছর তার চূড়ান্ত ম্যাচটি একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সৌজন্যে জিতেছেন। লন্ডনের এক্সেল রঙ্গভূমিতে দর্শকরা চূড়ান্ত ফলাফলকে দুয়োধ্বনি দিলেও কায়েও বেষ্টনীতে প্রকাশ্যে কেঁদেছেন, এরকম একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ব্যাংকক পোস্ট।
এই পরাজয়ে থাই নেটাগরিকদের প্রতিক্রিয়ার ঝড় দেখা গেছে। তারা তাদের হতাশা এবং অবিশ্বাস প্রকাশের জন্যে বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ার আশ্রয় নিয়েছে।
“আমি জানি কেন কায়েও কেঁদেছিলেন… আমি এ্টা দেখেছি এবং আমি নিজেও কেঁদেছি। আমি খুব ক্ষুদ্ধ,” স্পোর্টস ওয়েব বোর্ডে বলেছেন জেব জয় ওয়াহ সানুক।
ক্ষুদ্ধ ভক্তরা তাদের বার্তা অনলাইনে নিয়ে গিয়েছে। কীলামুন ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে ইংরেজি এই পোস্টার:
“তার হৃদয় ভাঙ্গার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ‘কায়েও পঙপ্রেউন,’ যিনি মুষ্টিযুদ্ধের জন্যে তার জীবন দিয়েছেন। তিনি তার স্বপ্নকে সত্য করতে ১০ বছরের বেশি এই সুযোগের জন্যে অপেক্ষা করেছেন কিন্তু আপনি সেটা মাত্র ৯ মিনিটের লড়াইয়ে ধ্বংস করেছেন। সবাই জানে যে তিনি এই লড়াইয়ে জিতেছেন। তবে আপনি জানেন না, এআইবিএ আপনি তাকে হারিয়েছেন। আপনি খুব অন্যায়কারী। এআইবিএ আপনি ঠিক মুষ্টিযুদ্ধের সম্মান এবং চেতনাকে ধ্বংস করেছেন” মুষ্টিযুদ্ধের ভক্তদের।
সামগ্রিক প্রদর্শনী হতাশাজনক হলেও জাতির জন্যে এরকম “বীরোচিত কর্ম”-এর জন্যে জনগণ এবং মিডিয়া থাই অলিম্পীয়দের এখনো প্রশংসা করছে। সর্বোপরি, অনেকের চোখে অলিম্পিক মানে হলো উৎসর্গ, নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রম। এরকম অলিম্পীয়দের মাঝে মাঝে সরকারী কর্তৃপক্ষ অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে এভাবেই সম্মান জানিয়ে থাকে।
শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন ছাড়াও পদক বিজয়ীদের আর্থিক পুরস্কারে – মূলতঃ ব্যক্তিগত অনুদান থেকে – স্নান করিয়ে দেয়া হয়েছে। নঙ তায়েউ পেয়েছেন আনুমানিক দেড় কোটি বাত (প্রায় ৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা)। কায়েও অন্ততঃ ২ কোটি ৪০ লক্ষ বাত (প্রায় ৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা) পাওয়ার পাশাপাশি সেনাপ্রধান তাকে সাব লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত করতে যাচ্ছেন।
এই প্রবন্ধটি লন্ডন অলিম্পিক-২০১২ সংক্রান্ত আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।