আফগানিস্তানঃ এক বালিকার খুনের ঘটনায় ক্ষোভ এবং বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে

আফগানিস্তানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক এবং নারী অধিকার কর্মী, শাকিলার খুনের ঘটনার ব্যাপারে সরকারী তদন্তে দেরি হওয়ার প্রতিবাদে ৩১ জুলাই তারিখে কাবুলের রাস্তায় নেমে আসে, গত বছর দেশটির বামিয়ান প্রদেশে ১৬ বছরের শাকিলাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয় [ফার্সী ভাষায়]।

অপরাধের এই ঘটনাটি প্রাদেশিক সংসদ সদস্য ওয়াহেদি বেহেশতির ঘরে ছয়মাস আগে সংঘঠিত হয়। বেহেশতি এবং তার ক্ষমতাবান সমর্থকরা এই বিষয়টি বলে আসছে যে শাকিলা আত্মহত্যা করেছে। তাদের এই দাবি সত্ত্বেও অনেক নাগরিক অভিযোগ করে আসছে যে এই রাজনীতিবীদ উক্ত বালিকাকে খুন করেছে এবং তারা ধারনা দিচ্ছে যে উক্ত রাজনীতিবিদ এখন এই ঘটনার তদন্তকে ভুলপথে পরিচালিত বা দেরি করানোর জন্য তার ক্ষমতা এবং সংযোগ ব্যবহার করছে।

যেমন বলা যায়, আফগান সুশীল সমাজের এক সদস্য রাফিম গাফফারি বলেছেন [ফার্সী ভাষায়]:

به جان شکیلا تجاوز صورت گرفته و فیری هم  که شده از پشت سر بوده، دوسیه وی از طرف طب عدلی به سارنوالی فرستاده شده ، متاسفانه سارنوالی یکی از دوستان اقای واحدی بهشتی است که در این قسمت توجه نکرده.

শাকিলার উপর যৌন নিপীড়ন চলানো হয়েছিল এবং তাকে পিছন দিক থেকে গুলি করা হয় [যা কিনা নির্দেশ করে যে সে আত্মহত্যা করেনি]; ময়না তদন্তকারী বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার ময়না তদন্তের ফলাফল এই ঘটনার তদন্তকারীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদি বেহেশতির একজন বন্ধু, কাজে সেই হিসেবে, সে একে এই ধরনের ঘটনা বলে বিবেচনা করেন

কাবুলে আফগান মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিল এবং সেখানে তারা শকিলার মৃত্যুর ঘটনার প্রতি মনোযোগ দেবার আহবান জানায়। ছবি ফেরদৌস শামিম-এর, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

কাবুলের বিক্ষোভ মিছিল আফগান স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন ( আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন বা এআইইচআরসি) অতিক্রম করে আফগান সংসদের দিকে এগিয়ে যায়। তার শাকিলা ছবি বহন করে এবং স্লোগান দেয়, “বামিয়ানের এটর্নি নিপাত যাক, শাকিলা আত্মহত্যা করেনি”। তারা একই সাথে স্লোগান দেয়, বিচার মন্ত্রণালয়! ন্যায়বিচার ! ন্যায়বিচার চাই এবং মানবাধিকার সংস্থা! গুরুত্ব দাও! গুরুত্ব দাও!”

(আরএফএফ/আরএল রেডিও ফ্রি আফগানিস্তান এর অনুষ্ঠান থেকে এই ভিডিওটি নেওয়া হয়েছে, যা আপনারা এখানে দেখতে পাবেন। এই বিক্ষোভের আরো ছবি এখানে থেকে দেখতে পাবেন)

এই বিক্ষোভের পর, আফগানিস্তানের একটি বেসরকারি সংগঠন যারা এই বিক্ষোভের অন্যতম এক আয়োজক, সেই সংগগঠনের তরুণীরা এর ফেসবুকের পাতায় পোস্ট করেছে:

আজকের এই পদযাত্রার স্লোগান ছিল “ আমরা যেন আর কোন শাকিলাকে খুন হতে না দেই”, এই বিষয়টি নির্দেশ করছে যে [ এই বাস্তবতার বাইরে] এই পদযাত্রা কেবল শাকিলের ন্যায়বিচারের দাবীতে নয়, তার এই ঘটনার উপর আলোকপাত করার মধ্যে দিয়ে সকল নারীর প্রতি হওয়া সকল অন্যায়ের বিষয় তুলে ধরছে।]

জোহাল, যে কিনা অন্যতম এক প্রতিবাদকারী,ভদ্রমহিলা পরামর্শ প্রদান করেছে [ফার্সী ভাষায়]:

.قاتل شکیلا آزادانه گشت و گذار می کند و دولت هیچ اقدامی برای دستگیری اش نمی کند و پارلمان ازمتهمین پشتیبانی می کند. ما ازدولت میخواهیم که جداً موضوع را پیگیری کرده و عاملین تجاوز و قتل شکیلا را دستگیرو محاکمه کند

শাকিলার খুনের বিচার হবে না এবং খুনিকে গ্রেফতার করার জন্য সরকারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সংসদ অভিযুক্তকে সমর্থন করে চলছে। আমরা সরকারকে গুরুত্বের সাথে এই ঘটনার তদন্ত করার এবং যে ব্যক্তিটি শাকিলাকে ধর্ষণ এবং খুন করেছে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করার আহবান জানাচ্ছি।

এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

কাবুলের এই বিক্ষোভ বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, ২৫ জুলাই তারিখে, শাকিলার ঘটনার প্রতি মনোযোগ প্রদানের জন্য ডজনখানেক নাগরিক বামিয়ানের রাস্তায় নেমে পড়ে

বামিয়ানের বিক্ষোভ। ছবি আব্দুলওয়াহিদ দানিশইয়ার। অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

এছাড়াও, অনেক একটিভিস্ট এবং নেটনাগরিক, শাকিলার খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবীতে এবং যাতে খুনি শাস্তি না পেয়ে পার পেয়ে যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করেছে। আফগান একদল ফেসবুক ব্যবহারকারী যারা ফেসবুকে “শাকিলা” নামের একটি পাতা তৈরি করেছে, তারা এবং অন্য দুটি উন্মুক্ত গ্রুপ “আমাদের শাকিলা” এবং “শহীদ শাকিলার সমর্থক-এর দল” নিবিড়ভাবে এই ঘটনা অনুসরণ করছে।

আসাদ বুদা, আফগান এক লেখক, তিনি লিখেছেন [ফার্সী ভাষায়]:

تنها کسی زبانِ شکیلا را می‌فهمد که با زبانِ تاریخ آشناست: شکیلا بیان و یاد کسانی است که کشندگانِ آنان هرگز مجرم شناخته نمی‌شوند.

কেবলমাত্র তারা, যার ইতিহাসের ভাষা বুঝতে পারবে তারা শকিলা ভাষা বুঝতে পারবেঃ শাকিলা তাদের পরিচয় এক প্রতীক, যাদের খুন হয়ে যাওয়াকে কোন অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।

আলি আমিরি এর সাথে যুক্ত করেছে [ফার্সী ভাষায়]:

یک تفاوت اساسی میان مرگ شکیلا و صدها همانند او که پیش از این طعمه غارت و تارج و تجاوز شدند وجود دارد. مرگ او را همه فریاد کردند. خون سرخش را همه دیدند… اینک در رگ هر رسانه خود او رسیده و جاری شده است. هر شاعری اورا فریاد می کند. اینک این حجله سرخ شکیلا است که خواب سیاه همه را به کابوس بدل کرده است.

শাকিলার ধর্ষণ এবং এ রকম একই ধরনের ঘটনার শিকার শত শত নারীর দুর্দশার মাঝে একটা পার্থক্য আছে। সকলে তার মৃত্যুতে আর্তনাদ করছে। সকলে তার লাল রক্ত দেখেছে। এখন তার কাহিনী প্রচার মাধ্যমের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। সকল কবি তাকে নিয়ে কবিতা লিখছে। এখন শাকিলার লাল রক্তে রঞ্জিত তার বধূর কামরা, আমাদের অন্ধকার স্বপ্নকে এক দুঃস্বপ্ন- এ পরিণত করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .