বাংলাদেশ: আকাশ ঢেকে দিচ্ছে বিশালাকৃতির বিলবোর্ড

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ২৮ হাজার মানুষ। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, যানজট এই মানুষদের নিত্যদিনের সঙ্গী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ২০১২ অনুযায়ী বিশ্বের ১৩২টি দূষণ আক্রান্ত নগরীর তালিকায় অবস্থান ৩১তম। ঢাকার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে কম করেও ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ধুলিকণা ভেসে বেড়াচ্ছে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। এই ধুলিকণার সাথে ঢাকার আকাশ ছেয়ে আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে। আর এই বিলবোর্ডের কারণে মানুষ যে একটু খোলা চোখে আকাশ দেখবে, সে উপায় নেই। যেদিকে তাকানো যাক না কেন, চোখ আটকে দেয় নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে বাহারি বিশালাকৃতি বিলবোর্ড।

যত্রতত্র এই ধরনের বিলবোর্ড বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরের সৌন্দর্য হানি করছে। ছবি ফ্লিকার থেকে আসিফুল হক এর সৌজন্যে। সিসি বাই লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত।

ঢাকা শহরে শুধু বড় আকারের বিলবোর্ডের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫০০। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন আছে মাত্র ৩০০টি বিলবোর্ডের। রাস্তার ধারে, বিল্ডিংয়ের গায়ে ও ছাদে, খোলা জায়গায় অসংখ্য বিশালাকৃতির সব বিলবোর্ড রয়েছে। অথচ শহরের বিলবোর্ডের আকার ৬০০ বর্গফুটের বেশি না হওয়ার নিয়ম রয়েছে। এগুলো নগরের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট করছে, তেমনি বন্ধ করে দিচ্ছে বাতাস প্রবাহের পথটুকুও।

বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন-বিলাস কেবল নগর ও নাগরিকের মুখই ঢাকছে না, প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। কিছুদিন আগে ঝড়-বৃষ্টিতে ঢাকার গুলশানে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড ভেঙে দুইজন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন পথচারী। বিলবোর্ড-উপদ্রব নতুন নয়, নতুন নয় এ ধরনের করুণ প্রাণহানি। এক হিসেবে জানা গেছে বিলবোর্ড ভেঙ্গে পড়ে ঢাকায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে

এরকম ভাবে ঢাকা শহরের সবদিকেই ছড়িয়ে রয়েছে বড় বড় বিলবোর্ডগুলো। ছবি সানাউল আহমেদ। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

ঢাকার গুলশানে মৌসুমি বৃষ্টিপাতে বিলবোর্ড ভেঙ্গে পড়ার ঘটনাস্থলে ছিলেন সুজন। তিনি সামহোয়ারইনব্লগের একটি পোস্টে মন্তব্য করেন:

গুলশান-১ এ যে দিন বিলবোর্ড ভেঙ্গে পরে …..আমি তার ৫০ গজের মধ্যে ছিলাম……..বড় বাঁচা বেঁচে গেছি সেইদিন….

বিজ্ঞাপনী হত্যাকাণ্ড নিয়ে কৌশিক লিখেছেন:

ঢাকার রাস্তায় এখন সামরিক মহড়ার মত মরণঘাতী বিলবোর্ড তাক করা থাকে। টহল পুলিশ বা আর্মির ট্যাংক, বন্দুকের ট্রিগারের পেছনে একজন সুস্থ মস্তিস্কের মানব ক্রিয়াশীল থাকে, ফলে হুট করে গুলি বের হবার সম্ভাবনা নাই। কিন্তু প্রতিটি বড় বড় মোড়ে কয়েকশ টন ওজনের লোহালক্কর সমেত বিশাল ভারী বিলবোর্ডগুলো যেভাবে নড়বড়ে ভাবে দন্ডায়মান থাকে- সেগুলোর মানুষ মারতে কারো আদেশের অপেক্ষা করতে হয় না। সামান্য মৌসুমী বায়ুতেই আছড়ে পড়ে চলমান যানবাহন আর পথচারীর উপরে।

কৌশিক আশংকা প্রকাশ করেছেন, ঢাকা শহরের সমস্ত সড়ক থেকে বিলবোর্ড অপসারণ করা না হলে এমন বিজ্ঞাপনী হত্যাকাণ্ড শিগগিরই দেখতে হতে পারে।

ঢাকায় বিল্ডিং জুড়ে বিলবোর্ড একটি সাধারণ চিত্র। ছবি ফ্লিকার থেকে জেইন রাওশন এর। সিসি-বাই-এনসি-এনডি।

বিলবোর্ড ভেঙ্গে পড়ে মানুষ মারা যাওয়ায় হাইকোর্ট নগরের অবৈধ সব বিলবোর্ড অপসারণের আদেশ দেয়। যদিও অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান খুব বেশি কার্যকর করা সম্ভব হয় নি। এদিকে নগরীর ভবনের ছাদে বিলবোর্ড স্থাপনের কোনো নীতিমালা না থাকায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) সম্প্রতি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

1 টি মন্তব্য

এই জবাবটি দিতে চাই না

আলোচনায় যোগ দিন -> Lunatic

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .