সরাসরি হুমকির সম্মুখীন না হলেও অনেক মানুষের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিধ্বংসী ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের আশংকা বেড়েই চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্লাস্টিক-ভিত্তিক পণ্যের বৃহত্তম ভোক্তা এবং বোতলজাত পানির বৃহত্তম বাজার। প্রতি বছর মার্কিনীরা অন্ততঃ ২ কোটি ৮০লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে দেয়।
বাংলাদেশের দুজন ভ্রমনবিদ ও এক্টিভিস্ট মুনতাসির মামুন এবং মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ঊজ্জ্বল তাদের চলার পথে সংগৃহীত প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পরিমাপ করার জন্যে একটি ট্যান্ডেম সাইকেলে করে সিয়াটল থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত ৫,০০০ মাইল ভ্রমণ করছেন।
নির্মাণ ব্লগে রায়হান রশিদ তাদেরকে এবং তাদের প্রচেষ্টাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন:
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের দেশ বাংলাদেশের দুই তরুণ মুনতাসির মামুন এবং আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল। ওরা সুদূর আমেরিকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত সাইকেলে ছুটে চলেছে। পথের মধ্যে যেখানেই পাচ্ছে ওরা খুঁজে নিচ্ছে এবং মোবাইল ফোনে রেকর্ডভুক্ত করছে ফেলে দেয়া বোতল থেকে শুরু করে পানীয়ের ছুঁড়ে দেয়া ক্যান আর এ জাতীয় যাবতীয় আবর্জনা। প্রখর রোদে মরুভূমির বুক চিরে পথ অতিক্রমণের কষ্ট, যাত্রাপথের অর্থকষ্ট, আহারের কষ্ট, পানীয়ের কষ্ট, আশ্রয়ের কষ্ট – এই সব কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওদের এই পথ চলার উদ্দেশ্য হল বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এককালের এক সবুজ ব-দ্বীপের মানুষদের পক্ষ থেকে সহজ কিন্তু দৃঢ় একটি বার্তা বয়ে নিয়ে যাওয়া।
জলবায়ু অবনতির জন্য উন্নত বিশ্বের যে দেশগুলোর কনজিউমারিজম এবং অপচয় দায়ী তার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম, তাই সেই দেশের সাধারণ মানুষদেরই ওরা বেছে নিয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটির প্রাপক হিসেবে। যাতে তারা আরও সচেতন হতে পারেন নিজেদের জীবনযাপনে অপচয়গুলোর ব্যাপারে, এবং সেইসাথে অনুধাবন করতে পারেন পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের চিন্তাহীন অপচয়ী জীবনধারার মূল্য পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষদেরও কখনো কখনো দিতে হয় জলবায়ুর অমোঘ এবং অন্ধ বিচারে। অথচ পৃথিবীটা ছিল আমাদের সবারই, এর ওপর অধিকার কারো থেকে কারও কম ছিল না কোনো অংশে!
দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকা প্লাস্টিক-ভিত্তিক আবর্জনার সংখ্যা গণনা করার জন্যে একটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারিক প্রযুক্তি (অ্যাপ) উদ্ভাবন করেছেন মুনতাসির। এখানকার উপাত্তগুলো ট্র্যাশম্যানিয়াক(বর্জ্যপাগল).কম নামের একটি ওয়েবসাইটে অবিরত আপলোড হচ্ছে। মানুষ সেখানে তাদের অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে।
এছাড়াও মুনতাসির এবং উজ্জ্বল তাদের নিজস্ব ভ্রমণ ব্লগগুলো (বাংলায়) আপডেট করছেন। মুনতাসির মামুনের ব্লগ থেকে এখানে কয়েকটি উদ্ধৃত করা হলো:
ট্র্যাশম্যানিয়াক রাইড চলছে ভালোই, দ্রুততম ৮৭ মাইল ছিলো এটা এবং দুপুর ১২টার পর বেশ গরম পরেছিলো। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবারো এগিয়ে চলেছি যদিও আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ইন্ডিয়ানা আমার (নটরডেম) কলেজের ফাদার পিক্সিটো এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, তার জন্মভূমি এখানেই। রাস্তা বেশ সমতল, অপেক্ষায় আছি গরম কমার, যেনো একদিনে আরো বেশী পথ পাড়ি দিতে পারি ——- ক্রফোর্ডসভ্যালি, ইন্ডিয়ানা। (৬ই আগষ্ট, ২০১২)
ইলিনয়েস এর রাস্তাগুলো আমাকে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, রাস্তার ধারে দাড়িয়ে থাকা গরুগুলো, গাছের ছায়া এবং মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন সবই দেশকে মনে করানোর প্রচেষ্টায় রত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে যেতে চাই।—– নর্মাল, ইলিনইস (১লা আগষ্ট, ২০১২)
যখন একজন গোড়া খ্রিষ্টান মহিলা মাতৃসম স্নেহে আপনার নিরাপত্তার জন্য ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন তখন আমি আসলে জানিনা ইশ্বর আর কি চাইতে পারেন আমাদের যাত্রা শুভ করার জন্য। এছাড়াও আমাদের জন্য তিনি স্যান্ডউইচ এবং বড় প্যানকেক দিয়ে করা ব্রেকফাস্ট মনে থাকবে অনেকদিন। .. ক্লিনটন ইলিনয়েস (২৯ জুলাই, ২০১২)
বর্জ্যপাগল দল যা করছে সেটা মিনিট্যাব ব্লগের প্যাট্রিক রাংকেলকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে শুধু মুদি দ্রব্যের প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার এড়িয়ে ছোট ঠোঙার পণ্য ব্যবহার করলেই বিশাল পরিবর্তন ঘটতে পারে। প্যাট্রিক লিখেছেন:
আমাদের শুধু সবাইকে একসঙ্গে নেবার মত একটি সাইকেল দরকার – প্রায় ৯০০ কোটি মানুষের জন্যে একটি।
ফেসবুক, ইউটিউব এবং টুইটারে বর্জ্যপাগল দলটিকে অনুসরণ করুন।