এই প্রবন্ধটি লন্ডন অলিম্পিক-২০১২ এবং বাহরাইন বিক্ষোভ ২০১১/১২ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
বাহরাইনের ক্রীড়া বিষয়ক যে কোন কাজের সম্মুখ সারিতে আছেন যুবরাজ নাসের বিন হামাদ আল খালিফা, যিনি বাহরাইনের বাদশার পুত্র। সে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত নয়,তার পরিবারের আর সবার মত সে নিয়োগপ্রাপ্ত, যে পরিবারটি এখন দেশটির ক্ষমতায়।
গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি নামক গণজাগরণের পর থেকে এই তরুণ সুনাম অর্জন করেন, যখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, দেশটির রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে আয়োজিত ব্যাপক বিক্ষোভের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সমস্ত বাহরাইনি খেলোয়াড় অংশ গ্রহণ করে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনেকের উপর অত্যাচার করেছেন।
গণজাগরণের সময়টায় নাসের টুইটার ব্যবহার করে, যা সে তার প্রকৃত নামে করেছিল। সে সময় শাসক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নেবার সে হুমকি প্রদান করে। যখন লন্ডন অলিম্পিক থেকে তাকে বহিষ্কার করার প্রচারণা শুরু হয়, তখন সে তার সব টুইট মুছে ফেলে।

টুইটারে তার অনুসারীর সংখ্যা ৬৬,২৫৪ জন এবং তার টুইটের সংখ্যা শূন্য। গত মাসে যখন খেলোয়াড়দের উপর করা অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লন্ডন অলিম্পিক থেকে নিষিদ্ধ হয়ে যাবার ভয়ে যুবরাজ তার সকল টুইট মুছে ফেলে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে, ইএসপিএন নামক টিভি চ্যানেল বাহরাইনের গ্রেপ্তারকৃত এবং অত্যাচারিত খেলোয়াড়দের সাথে পুনরায় দেখা করে বিশাল এক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। তাদের এই ভিডিওতে ক্রীড়াবিদেরা জাতীয় দলে তাদের আসন হারানো, গ্রেফতার হওয়া, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে নানান ভাবে অপমানিত হওয়া, শিয়া মত বিশ্বাসী হওয়ার কারণে অপমানিত হওয়া, এবং ব্যক্তিগতভাবে যুবরাজের দ্বারা অত্যাচারিত হওয়ার মত ঘটনা নিয়ে কথা বলে।
অত্যাচারকারীকে গ্রেফতার কর
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন একটিভিস্ট [নোট: নিরাপত্তার কারণে ছদ্মনামে টুইট করেছে] বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে নাসের বিন হামাদ-এর ছবি টুইট করে:

ছদ্মনামধারী: সম্মুখ সারিতে ডানের লাল টাই পড়া ব্যক্তি, সে #অলিম্পিকে একজন ভিআইপি। সে ক্রীড়াবিদদের উপর অত্যাচারকারী একজন। সে হচ্ছে #বাহরাইনের যুবরাজ নাসের।
বাহরাইনু সিটিজেন মন্তব্য করেছে:
@বাহরাইনুসিটিজেন:নাসের বিন হামাদ ব্যক্তিগত ভাবে আটককৃতদের উপর অত্যাচার করার সাথে যুক্ত এবং আজ তাকে #অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
টুইটারকারী কেনেথ লিপ উল্লেখ করেছেন:
@কেনেথলিপ:আমি শুনতে পেয়েছি যে বাহরাইনের রাজ পরিবার অলিম্পিকে অংশ গ্রহণ করছে। যে কোন সভ্য জাতি হলে তাদের সাথে সাথে গ্রেফতার করত।
ইরাকি একটিভিস্ট খালিদ ইব্রাহিম টুইট করেছে:
@খালিদইব্রাহিম১২:কোন সন্দেহ নেই #বাহরাইনের এক অত্যাচারীকে #যুক্তরাজ্যের সরকারের দাওয়াত করা #অলিম্পিক যে সমস্ত নৈতিকতা এবং নীতি স্থাপন করেছে তার বিরুদ্ধাচরণ।
এর প্রতিবাদে, বাহরাইনের মানবাধিকার একটিভিস্ট মরিয়াম আলখোওয়াজা (কারাগারে আটক বিরোধী নেতা আব্দুলহাদি আলখোওয়াজার কন্যা) অলিম্পিক বয়কট করার আহবান জানান:
@মারিয়ামআলখোওয়াজা:আরটি যদি আপনারা একমত হন: আমি #অলিম্পিক২০১২ বয়কট করছি কারণ প্রমাণ প্রদান করা সত্ত্বেও #যুক্তরাজ্য এবং #অলিম্পিক কমিটি #বাহরাইনের এক অভিযুক্ত অত্যাচারকারীকে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রদান করল।
যে সমস্ত ক্রীড়াবিদ আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না

অলিম্পিকে অংশ নেওয়া বাহরাইনি ক্রীড়াবিদের মধ্যে মাত্র তিনজনের পিতামাতা বাহরাইনি। ছবি টুইটারের @ আলি_মিলানেল্লোর।
অলিম্পিক বয়কটের আহবান জানানোর আরেকটি কারণ হচ্ছে দলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যা বিদেশী ক্রীড়াবিদের নেওয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় অনেক বাহরাইনি নাগরিক টুইট করেছে যে, ওই সমস্ত ক্রীড়াবিদদের দলে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে এবং বাহরাইনের সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই, যদিও তারা খেলায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এই দেশের জাতীয়তা গ্রহণ করেছে এবং এর জন্য টাকা পেয়েছে।
এই বিষয়টি বাহরাইনে একটি বিতর্কিত বিষয়, বিশেষ করে যখন এই বিষয়টি বিবেচনা করলে যে কি ভাবে ওই সমস্ত খেলোয়াড়রা বাহরাইনের “ অনাকাঙ্ক্ষিত” খেলোয়াড়দের সরিয়ে তার স্থান দখল করে এবং রাজনৈতিক আত্মীকরণ” [অন্য দেশের নাগরিকদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা] -এর কারণে, যা কিনা দীর্ঘ সময় ধরে সরকার অনুশীলন করে আসছে তার সমর্থকদের ভিত্তিকে আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এবং এই কারণে তাদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীতে চাকুরী প্রদান করা হচ্ছে।
তার এক মন্তব্যে বাহরাইনি আলা’আ আল সিহাবী টুইট করেছে:
@আলাআসিহাবী:যখন আমরা #বাহরাইনের অলিম্পিক দলের সদস্যদের দেখলাম হৃদয়ে কোন আনন্দ অনুভব করলাম না, এদের মধ্যে বাহরাইনের নিদর্শন হিসেবে একজন বাহরাইনি নাগরিককে রেখে দেওয়া হয়েছে [বাকীদের নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে দলে নেওয়া হয়েছে]। কারাবন্দী ২০ জন ক্রীড়াবিদদের জন্য আমাদের হৃদয় কেঁদে উঠছে।
ব্যাঙ্গের সাথে বাহরাইনি ব্লগার আমিরা আল হুসাইনী লিখেছে:
@জাস্টআমিরা: #অলিম্পিকে অংশ নেওয়া আমাদের #বাহরাইনি ক্রীড়াবিদদের প্রায় সকলের জন্ম হয় হয় কেনিয়া না হয় ইথিওপিয়ায়। উপলব্ধি করতে পারিনি যে সে সব জায়গায় বিশাল এক বাহরাইনি সম্প্রদায় বাস করে!
তিনি এর সাথে আরো যুক্ত করেছেন:
@জাস্টআমিরা:এটা হত বাহরাইনের জন্য দারুণ একটি ব্যাপার যদি#অলিম্পিকে #টিয়ারগ্যাস ছোঁড়ার মত অনুরূপ কোন প্রতিযোগিতা থাকত।
একই ভাবে, শাসক-পন্থী টুইটার ব্যবহারকারী @এটেকস্টের [আরবী ভাষায়] শাসক বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করে লিখেছে:
তালা এর জবাবে বলছেন :
@তালতোল১১: যখন আমি আপনাকে গুলি করব তখন যদি আপনি মারা যান সেই দৃশ্য দেখার জন্য তাজা বুলেট ব্যবহার করার মত খেলার বিষয়ে আপনি কি বলবেন।
এই প্রবন্ধটি লন্ডন অলিম্পিক-২০১২ এবং বাহরাইন বিক্ষোভ ২০১১/১২ নিয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।