- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

থাইল্যান্ড: জাতীয় পুনর্মিত্রতার জন্য ডোনাট

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট থাকসিন সিনাওয়াত্রার ৬৪তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে তার সমর্থকরা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ৬৪ হাজার ডোনাট বিতরণ [1] করে। এই উপহার বিতরণ কার্যক্রম ৩রা আগস্ট পর্যন্ত চলবে। ২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে থাকসিন সরকারের পতন ঘটে। দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে তিনি বিদেশে নির্বাসনে আছেন। থাকসিন অভিযোগ করে আসছেন, থাইল্যান্ডে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন না।

থাকসিনের অনেক সমর্থকই রেড শার্ট আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলেন, যারা অভিজিত ভিজ্জাভিজা প্রশাসনের তুমুল বিরোধীতা করেছিল। ২০১০ সালে রেড শার্ট কর্মীরা রাজপথে ব্যাপক আন্দোলনে [2] নামলে পুলিশের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। অভিজিতের দল গত নির্বাচনে হেরে যায়। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন থাকসিনের ছোটবোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা [3]

[4]

থাকসিনের ‘একতা’ বার্তা সম্বলিত এক বাক্স ডোনাট। ছবি নেয়া হয়েছে টিকডোর থেকে। 

দীর্ঘ এক বছরের রাজনৈতিক সংঘর্ষের পর থাইল্যান্ডের একতার জন্য সংসদের কয়েকটি ‘পুনর্মিত্রতা বিল’ প্রস্তাব করা হয়। যদিও কিছু সমালোচক ‘পুনর্মিত্রতা বিল [5]’কে ‘সাধারণ ক্ষমা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার এও অভিযোগ করেছেন, এর মাধ্যমে যেসব সরকারি কর্মকর্তা আগে অপরাধ করেছেন তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

এই ‘ফ্রি ডোনাট’ প্রচারণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে রেড শার্ট নেতৃত্ব যারা এটিকে ‘জাতীয় পুনর্মিত্রতা এবং একতা’ বলে অভিহিত করেছেন। ফ্রি ডোনাট বাক্সে থাকসিন একটি বার্তা [1] দিয়েছেন:

আমার জন্মদিন উপলক্ষে আপনারা ভালোবাসা, আনন্দ এবং ঐক্যের বন্ধনে থাকুন। পুলিশ লেফটেন্যান্ট কর্নেল থাকসিন, জুলাই ২৬, ২০১২।

প্রচারণা কার্যক্রমটি কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে মনে করেন দ্য লস্ট বয় [6]:

সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও লোকদের মাঝে ডোনাট বিতরণ আমাকে অবাক করেছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মাঝে। ডোনাট মিষ্টি জাতীয় একটি খাদ্য। দরিদ্র-সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দাঁতের স্বাস্থ্য খুবই খারাপ। এটা নিশ্চিত যে, দরিদ্র শিশুরা এই মিষ্টি উপহারটি লুফে নিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র শিশুদের এক বক্স ডোনাট দেয়া উপহাস স্বরূপ। এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অর্থহীন।

আপনি সুবিধাবঞ্চিত লোকদের উপকার করতে চান, তাদের টুথপেস্ট বা চালের মতো দরকারি কিছু দিন।

নিচে টুইটারে কিছু প্রতিক্রিয়া:

@ফ্যাট্টিক্কিয়োলি [7] : #থাইল্যান্ড উপহার সংস্কৃতি আরটি @টুলসাথি: থাকসিন গভর্নমেন্ট হাউস রিপোর্টারসহ থাইল্যান্ডবাসীর জন্য ৬৪ হাজার বার্থডে ডোনাট পাঠিয়েছেন।

@টুলসাথি [8]: থাকসিনের ডোনাট বাক্স এসেছে থাকসিনের মুখচ্ছবিসহ ভালোবাসা দিবসের মতো উপহার বক্সে। এটা বার্তা দেয়া হয়েছে- “আপনারা ভালোবাসা, আনন্দ এবং ঐক্যের বন্ধনে থাকুন।”

‏@ লুকেন্থ: [9]তাদের কেক খেতে দাও অথবা ডোনাট। #ক্যানন্টমেকদিসশিটআপ #টিআইটি।

@জেমিমক [10]: আমি একটি থাকসিন ডোনাট চাই।

অনলাই ফোরামে নিচের মন্তব্যগুলো এসেছে। দ্য পাকনাম ওয়েব ফোরামে খনরাই [11] ডায়াবেটিকের মতো বড়ো সমস্যার জায়গায় ডোনাট বিতরণ নিয়ে বলেছেন:

দেশে ডায়াবেটিক একটা বড় স্বাস্থ্যগত সমস্যা। সেখানে তারা ডোনাট দিচ্ছে।

ওরিয়েন্ট এক্সপ্যাট ফোরামে স্কাইড্রাইভার৭৭৭ [12] ডোনাট বক্সে অন্য বার্তা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন:

ডোনাট গোলাপি [লাল না?] বক্সে থাকবে, তার উপরে লেখা হবে;

এই একতাবদ্ধ ডোনাটগুলো হৃদয় থেকে উত্সারিত।

তাড়াতাড়ি এটা খেয়ে ফেলুন।

এছাড়াও এর নিচে সম্ভবত এটাও মুদ্রিত থাকতে পারে;

বাক্স ছুড়ে ফেলবেন না।

এতে আমার ছবি আছে।

পাতায়া-লাইভ ফোরামে ব্রুস ম্যাঙ্গোস্টিন [13] ডোনাট কিভাবে গরীবদের সাহায্য করতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করেছেন:

অবশ্যই ডোনাটগুলি বেশ ভালো সাহায্য করবে। মনে করুন বক্সের ভেতরে ১ হাজার টাকার নোট সিদ্ধ করা আছে। 🙂

এই প্রচারণা সম্পর্কে নেটিজেনদের মন্তব্য [1] নিচে দেয়া হলো:

জ্যাকস্প্রাট: বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেট দু:স্থদের সাহায্যে বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করে। থাকসিন ডোনাট দিয়েছেন।

ব্লুবিকেকে: আপনি যদি দেশ থেকে কোটি কোটি মেরে নিয়ে লাল শিবিরকে শান্ত করতে মাত্র কয়েক বক্স হাস্যকর ডোনাট দেন, তাহলে আপনার কী পরিমাণ বুদ্ধি আছে, তা সবাই বুঝবে।

ওয়াটার্স: আমি আমার বাচ্চাদের এই ডোনাট খেতে দেব না। আমার ভয় করছে যে, এই ডোনাট খেলে তাদের চেহারায় হাস্যকর ভাব চলে আসবে। এমনকি তারা লাল পোশাক পরতে শুরু করবে, তাদের আগের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা চাইবে। আমি এর পরিবর্তে তাদের স্বাস্থ্যকর কিছু খেতে দেব।

নোসারপ্রাইজ: ৬৪ হাজার ডোনাটের দাম ২ মিলিয়ন বাথ (টাকা)। একবার ভাবুন এই টাকাগুলো জনপ্রিয়তার মোহে পড়ে অহেতুক খরচ না করে এর পরিবর্তে সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্য করা যেত।

ডাউ: থাকসিন একতার জন্য ডোনাট বিলি না করে আদালতে যেতে পারতেন। হায় আল্লাহ!