এক বছর আগে আহমাদিনেজাদ-খামেনির দ্বন্দ্বে এক বছর আগে ইসলামপন্থী ব্লগাররা বিভক্ত হয়ে যায়। আজ আহমাদিনেজাদ-পন্থী বেশ কয়েকজন ব্লগার নিজেদেরকে সেই পরিস্থিতির মধ্যে আবিস্কার করে, বছর খানেক আগে সংস্কারপন্থী ব্লগাররা নিজেদের পরিস্থিতির মাঝে আবিস্কার করেছিল।
সীমান্তবিহীন সাংবাদিকের দল–এর (রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার) সূত্রানুসারে ইরানী নববর্ষ শুরুর সময় থেকে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনীর সহযোগীদের সমালোচনা করার দায়ে তেহরানের পুলিশ রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ-এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থককে গ্রেফতার করে।
আহমেদ শারিয়াত হচ্ছেন এ রকম একজন ব্লগার, যিনি নেদাই আজ দারোন ( অভ্যন্তরীণভাবে) নামের ব্লগের সুপারভাইজার। তেহরানের আইন নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের জারি করা সমনের প্রতিক্রিয়া এক সংবাদ প্রকাশের পর ২৫ জুলাই তারিখে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বন্দী অবস্থায় আটকে থাকতে হয়, কারণ সে জামিনের জন্য ১০০ মিলিয়ন তোমান (৭৫,০০০ ইউরো) জোগাড় করতে পারেনি।
ইসলাম-পন্থী বেশ কয়েকজন ব্লগার তার সমর্থনে লেখা প্রকাশ করেছে। এ সব লেখার বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ইমাদ মুঘানিয়েহ-এর ছবি আঁকা টি-শার্ট গায়ে দেওয়া শারিয়াতের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্লগাররা মূলত ইরানের বিচার বিভাগের সমালোচনা করেছে এবং ২০০৫ সালের আগে আহমাদিনেজাদের জয় পূর্ব সময়ের আগে ইরানের সমাজকে নিয়ে যাবার মত এক ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তারা লিখেছে।
আহমাদ শারিয়াত তার ব্লগে আহমাদিনেজাদকে সমর্থন অতি রক্ষণশীলদের (ওওসলগারাস) আক্রমণ করেন। তিনি তার এক পোস্টে লিখেছেন যে ওওসলগারাস-এর দল আহমাদিনেজাদকে মুছে ফেলতে এবং দেশটিকে সাত বছর আগের মত পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে চাইছে (আহমাদিনেজাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে জয়লাভ করার আগের সময়টাতে)… কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে, যেমনটা নাগরিকরা উপলব্ধি করতে পরেছে যে আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ-এর কোন মানে নেই… আহমাদিনেজাদ-এর সমর্থকরা প্রচার মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি হারিয়ে ফেলার পর রক্ষণশীলতার বিষয়ে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
সেয়াসাত নেহাসাত বলছে [ফার্সী ভাষায়]:
আমাদের ভ্রাতা আহমাদ শারিয়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা জানি না কেন? কিন্তু যেমনটা বাকেরি (ইরান-ইরাক যুদ্ধে শহীদ এক ইরানী নাগরিক) বলেছিলেন, ৩০০ ব্যাটলিয়ানের একজনও যদি জীবিত থাকে, তাহলেও সে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ২০০৫ সাল থেকে এই যুদ্ধ চলছে (আহমাদিনেজাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভের সময় থেকে) এবং আহমাদ যেন ইস্পাতের মত কঠিন এক যোদ্ধা।
উম্মত হেজবুল্লাহ লিখেছে [ফার্সী ভাষায়]:
কি এক সমাজ আর বিচার ব্যবস্থায় আমরা বাস করি, দেশের রাষ্ট্রপতিকে সমর্থন করা এবং তার পক্ষে লেখার দায়ে আহমাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার [ যারা শারিয়তকে গ্রেফতার করেছে] বলছে যে তোমরা কেন বোঝ না, তোমাদের এই সামান্য ব্লগ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি?…আমি তার পোস্টের লেখা কিংবা ব্যক্তি হিসেবে তাকে নয়, বরঞ্চ এক ব্লগারকে রক্ষার কথা বলছি।
জামিরখোদাগাহ লিখেছে [ফার্সী ভাষায়]:
জনাব. শারিয়াত, আমাদের হৃদয় এবং কলম আপনার সাথে আছে। ব্লগার বলছে কোন বিষয়টি শারিয়তের জন্য এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করল আর শারিয়ত এখন দমনের পক্ষ হয়ে কথা বলছে। তথাকথিত বিপ্লবী প্রচার মাধ্যম আহমাদিনেজাদ এবং মাশাহাই-এর উপর বছর জুড়ে নানান ধরনের মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে আক্রমণ চালাচ্ছে আর বিচার ব্যবস্থা নিশ্চুপ হয়ে আছে। এই ধরনের নিরবতার জন্য ভবিষ্যৎ কি ক্ষমা করবে?
মোহাম্মাদ ফাতেমিপোর একজন ইমাম, যিনি তার নিজস্ব সাইটে লিখেছেন [ফার্সী ভাষায়]:
আহমাদ শারিয়ত একজন চিন্তাবিদ এবং তিনি এক অসাধারণ বিশ্লেষক। তাকে গ্রেফতার করার মধ্যে দিয়ে একটি পরিষ্কার বার্তা প্রদান করা হল: আহমাদিনেজাদের সমর্থক এবং যারা বিশ্বাস করে আগামী নির্বাচনে মাশাহি [আহমাদিনেজাদের বিতর্কিত সেনা প্রধান] জয় লাভ করবে তাদের উপর চাপ বৃদ্ধি করা। কিন্তু পরম করুণাময়ের সহায়তায় এই বছরে বিপ্লবী তরুণরা পুরো পরিস্থিতি পাল্টে ফেলবে। জামানত -এর অর্থ ১০০ মিলিয়ন তোমান হওয়া মানে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোন ধরনের-বিবেচনা ছাড়াই কাউকে খুন করে ফেলা।
যখন বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্রী-পন্থী ব্লগাররা জেল এবং আদালতের মুখোমুখি হচ্ছিল তখন এই সমস্ত ব্লগাররা সর্বোচ্চ অবস্থান গ্রহণ করেছিল চুপ করে থেকে। আহমাদিনেজাদ-পন্থী ব্লগারদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য মার্টিন নেমোলেয়ার-এর এই উক্তির চেয়ে ভাল কিছু আর হতে পারে না:
প্রথমে তারা কমিউনিস্টদের ধরতে এলো
কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম, কারণ আমি কমিউনিস্ট ছিলাম নাএরপর তারা শ্রমিক নেতাদের ধরতে এল
কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম, কারণ আমি কোন শ্রমিক নেতা ছিলাম নাএরপর তারা ইহুদিদের ধরতে এল
কিন্তু এবারও আমি চুপ করে রইলাম, কারণ আমি ইহুদী নইএরপর তারা আমাকে ধরতে এল
কিন্তু তখন আমার জন্য বলার আর কেউ ছিল না।