- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাংলাদেশ: মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলে, ক্ষুদে বার্তা পাঠায় না

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, উন্নয়ন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, প্রযুক্তি, সরকার

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৩৮ লাখ [1] এদের বেশিরভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করেন শুধুমাত্র কথা বলার জন্য। ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস তারা খুব একটা ব্যবহার করেন না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে ২০১১ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩ কোটি ক্ষুদে বার্তা [2] আদান-প্রদান হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি তিনটি মোবাইল ফোন থেকে প্রতি মাসে মাত্র একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ নাগরিক লিখতে পড়তে জানেন। তাই ক্ষুদে বার্তার ব্যবহার কম হওয়ায় অনেকে অবাক হয়েছেন। আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ বেশিরভাগ বাংলাদেশী শুধুমাত্র বাংলায় পড়তে ও লিখতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে আমদানি হয় এমন হ্যান্ডসেটগুলোর খুব কম সেটেই বাংলা স্ক্রিপ্ট আছে। ইংরেজি না জানায় তারা ক্ষুদে বার্তা লিখতে পড়তে জানেন না।

বাংলাদেশ মোবাইল হ্যান্ডসেট ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আলীমের মতে, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বছরে ৬০ লাখ সেট আমদানি [3] হয়ে থাকে। আর এ ফোনসেটগুলোর প্রায় সবগুলোতেই বাংলা কি প্যাড থাকে না। এই প্রেক্ষিতে এ বছর সরকার মোবাইল ফোনে বাংলা চালু করার জন্য হ্যান্ডসেটে বাংলা কি প্যাড থাকা বাধ্যতামূলক করে [4]। এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করে বিটিআরসি। সেখানে বলা হয় ফেব্রুয়ারি ২০১২ এর পর থেকে আমদানিকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটে (বেসিক) বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা কি প্যাড থাকতে হবে। আর ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনে বাংলা এসএমএস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

[5]

নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা এবং মূল্য নির্ধারণে ব্যবসায়ী ও এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ কৃষক বর্তমান মোবাইল ব্যবহার করছেন। ছবি বায়েজিদ আক্তার। সর্বস্বত্ব ডেমোটিক্স।

মোবাইল ফোনে বাংলা কি প্যাড চালু প্রসঙ্গে টেকজুম২৪ডটকমে [6] মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন লিখেছেন:

খবরের কাগজে দেখলাম, আমদানি করা সব মোবাইল ফোন সেটেই বাংলা কি-প্যাড থাকতে হবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকেই মোবাইল ফোন সেট আমদানির ক্ষেত্রে বাংলা কি-প্যাড থাকা বাধ্যতামূলক। এটা হলে সাধারণ মানুষ আরও সহজে হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে পারবে এবং মোবাইল ফোনে বাংলা প্রচলন হবে।… এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিটিআরসিকে ধন্যবাদ।

বর্তমানে শুধু বেসিক হ্যান্ডসেটে বাংলা কি প্যাড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরবর্তীতে টাচস্ক্রিন এবং স্মার্ট ফোনগুলোকেও এই আইনের আওতায় আনা হবে।

কথা বলা কিংবা ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদানের বাইরে বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ক্রমশ: বাড়ছে। [7] ২০০৮ সাল থেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বিল দেয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেনের সময়সূচি, ভাড়া ও আসনপ্রাপ্যতার খবর এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে [8]। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল জানা যাচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আবেদন করা যাচ্ছে এখন। সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজারে মোবাইল সম্প্রচারের মাধ্যমে দুর্যোগের আগাম খবর প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে যা ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ফলে, বাজার মূল্যে মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবা [9] পাওয়া যাচ্ছে। আখ চাষীদের জন্যে পুর্জি পাওয়া যাচ্ছে এসএমএস এর মাধ্যমে [10]। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এখন ব্যাংকিং সেবাও পাওয়া যাচ্ছে। চালু হয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস- বিকাশ। এর মাধ্যমে সারাদেশে টাকা-পয়সাও আদানপ্রদান সম্ভব হয়েছে।

[10]

চিনিকলে আখ বিক্রয়ের অনুমতিপত্র ‘পুর্জি’ এখন এসএমএস এর মাধ্যমে দ্রুত পৌছাচ্ছে চাষীদের কাছে যা দুর্ভোগ কমিয়েছে। ছবি ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্লগের সৌজন্যে।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস্ ফর ডেভেলপমেন্ট ২০১২: ম্যাক্সিমাইজ মোবাইল’ [11] শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা এবং মূল্য নির্ধারণে ব্যবসায়ী ও এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ কৃষক বর্তমান মোবাইল ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ কৃষক ফোনের মাধ্যমে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে।

বিটিআরসি মতে, বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ [2] মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। তাই দেশের বৃহত্তর মানুষের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতেই মোবাইল ফোনে বাংলার ব্যবহার প্রয়োজন।