মৌরিতানিয়া: খেলাধূলা, নৃত্য ও সঙ্গীতের একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি

মৌরিতানিয়ার অবস্থান যেখানে আরব এবং আফ্রিকার সংস্কৃতি মিলেছে; এটা উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলির সংযোগস্থল। এটা একে এর অনন্য সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত বিস্ময়কর জাতিগত বৈচিত্রের মাধ্যমে একটি বিশেষ চরিত্র দান করেছে। এটা আরব ও আফ্রিকার সাংস্কৃতিক মিলনকে একত্রিত করা মৌরিতানিয়ার খেলাধুলা, নৃত্য ও সঙ্গীতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান। এই পোস্টে আমরা আপনাদের কিছু কিছু উদাহরণ দেখাবো।

“আনিগুর” খেলা

সবচেয়ে বেশি পরিচিত ঐতিহ্যবাহী মৌরিতানীয় খেলার একটি হলো “আনিগুর” বা “পিন খেলা” যাতে লাঠি ব্যবহার করে একটি তরবারির দ্বন্দ্বযুদ্ধ করা হয়। এতে কোন শিকার থাকে না; কোন বিজয়ী অথবা বিজিত ছাড়াই খেলাটি শেষ হয় যেহেতু বিনোদনই এর একমাত্র লক্ষ্য।  “প্রতিদ্বন্দ্বী”রা দ্বন্দ্বযুদ্ধ করার সময় তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্যে মহিলারা ঢাক বাজায় আর উলুধ্বনি দেয়

খেলাটিতে সাধারণতঃ দুইজন প্রতিযোগী লাঠি দিয়ে খেলে, তবে কেউ তার অভিজ্ঞতা এবং শক্তি অনুসারে দুই বা তিনজনের বিরুদ্ধেও দ্বন্দ্বযুদ্ধ করতে পারেন। “আনিগুর” খেলোয়াড় এটা থেকে অর্থ উপার্জন না করলেও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিবেচিত হন যাকে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ জানাতে লোকজনের ভীড় লেগে যায়।

এই খেলাটি মৌরিতানীয় বিয়ের অনুষ্ঠান এবং সরকারী উদযাপন অনুষ্ঠানেরও অংশ; এটা মানুষের মনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় মৌরিতানীয় খেলাগুলোর একটি।

নিচের ভিডিওটিতে দু’জন পুরুষ “আনিগুর” খেলার সময় চারপাশের মহিলারাদেরকে হাততালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দিতে দেখা যাচ্ছে:

“নিফারা”র সঙ্গে নৃত্য

মৌরিতানীয় বাঁশি “নিফারা” মানুষের অন্তরের কাছাকাছি একটি বাদ্যযন্ত্র; এর সঙ্গে নাচা অল্পবয়স্ক মৌরিতানীয়দের কাছে জনপ্রিয়। নাচুনেরা এর সুরের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্যে তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে একটি নাটুকে প্রকাশ ভঙ্গিমায়। দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা উলুধ্বনি এবং হাততালি দেয়।

আপনি এই ভিডিওটিতে কিছু অল্পবয়সী মৌরিতানীয়দের নিফারার সুরের সঙ্গে নাচতে দেখতে পাবেন:

দিমি মিন্ট আবা

অবশেষে আমরা মৌরিতানীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তী দিমি মিন্ট আবার কাছে এসেছি; নিচের ভিডিওটিতে সুন্দর একটি যন্ত্র “আর্ডিন” [“কোরা”র মতো] সহযোগে তিনি একটি ঐতিহ্যবাহী গান গাইতে দেখা যাচ্ছে।

দিমি একজন ঐতিহ্যবাহী মৌরিতানীয় গায়িকা ছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল তাগান্ত অঞ্চলে এবং খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ১৯৭০এর দশকে। তার কণ্ঠ তার দেশের সীমানা পেরিয়ে আফ্রিকার বাকি অংশ এবং কিছু কিছু আরব দেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। বহু দশক ধরে এটা ছিল লক্ষ লক্ষ মৌরিতানীয়দের আনন্দ-বিনোদনের উৎস।

তিনি ১৯৭০এর দশকের প্রারম্ভে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এবং ১৯৭৬ সালে তিউনিসিয়াতে একটি আরব সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

দিমি মিন্ট আবা ৪ঠা জুন, ২০১১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন  এবং মৌরিতানীয়দের কাছে খবরটি ছিল একটা বজ্রপাতের মতো। সারা দেশের উপর দিয়ে বিষাদের একটা বন্যা বয়ে গিয়েছিল।

বৃদ্ধাঙ্গুলীয় এবং বর্ণিত ছবিটিতে দিমি মিন্ট আবা’কে মালি’র এসাকানেতে মরুভূমির উৎসব ২০০৪-এ দেখা যাচ্ছে। ছবি, ফ্লিকারে কালচারভালচার

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .