আজ, [২২ জুলাই] ফিলিস্তিনী রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট নাজি আল আলি-এর হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পূর্তি। স্বৈরাচারী আরব সরকারগুলোর এবং ইজরায়েলের সমালোচনার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন।
১৯৩৬ অথবা ১৯৩৭ সালে আল- শাজারা গ্রামে আল আলি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের ফলে ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। হাজার হাজার বাসভূমি থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আল আলি ছিলেন অন্যতম, তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ লেবাননের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
১৯৮৭ সালের একই দিনে লন্ডনে আল আলির মুখে গুলি করা হয়, পাঁচ সপ্তাহ অজ্ঞান থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
২৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বের নেটিজেনরা আল আলির আঁকা ব্যঙ্গচিত্র ও উদ্ধৃতি শেয়ার করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
হান্দালা:
এটা অনস্বীকার্য যে হান্দালা হল নাজি আল আলির চিরন্তন নায়ক। হান্দালার মাধ্যমেই আল আলি আরব নেতৃবৃন্দ, সমাজ, ইসরাইল এবং আরব অঞ্চলে মার্কিন সম্পৃক্ততার বিষয় সমালোচনা ও ব্যঙ্গ করতেন।
টুইটার ব্যবহারকারী ইউসেফ এম. আলজামাল হান্দালাতে নাজি আল আলির উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। তাঁর টুইটগুলো নিম্নরূপ:
@ইউসোআললজামাল: “আমি তাকে এঁকেছি শিশু হিসেবে যে শিশুটি দেখতে সুন্দর নয়; তার চুলগুলো সজারুর কাঁটার মত- সজারু তার কাঁটাগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে”, #হান্দালা #নাজিআলআলি
@ইউসোআললজামাল: “তার হাতগুলো দেহের পেছনে অঙ্গুলিবদ্ধ, যা সমস্যা সমাধানের যে মার্কিনীয় পদ্ধতি তা বাতিলের ইঙ্গিতবাহী”। #হান্দালা
@ইউসোআললজামাল: “হান্দালা দশ বছর বয়সে জন্মেছে এবং সবসময় তার বয়স দশ বছরই থাকবে”।
@ইউসোআললজামাল: “এ বয়সে আমি আমার মাতৃভূমি ত্যাগ করেছি, হান্দালা যখন মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে তখনও তার বয়স থাকবে দশ বছর এবং এর পর থেকে তার বয়স বাড়বে”।
@ইউসোআললজামাল: “ প্রকৃতির আইন তার জন্য প্রযোজ্য নয়। সে অনবদ্য। মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার পর সব কিছুই স্বাভাবিক হবে”।
@ইউসোআললজামাল: “ দরিদ্রদের কাছে তিক্ততার প্রতীক হিসেবে আমি হান্দালাকে উপস্থাপন করেছি”।
@ইউসোআললজামাল: “ প্রথমতঃ সে ছিল একজন ফিলিস্তিনীয় শিশু, কিন্তু তার সচেতন বেড়ে উঠার মধ্য দিয়ে জাতীয় বৈশ্বিক ও মানবিক দিগন্তের বিকাশ ঘটেছে”।
কালজয়ী ব্যঙ্গচিত্র:

দর্শকদের দিকে হান্দালা পিছন ফিরে আছে। কবরে “এরপর মনে হয় আমি” লেখা রয়েছে। নাজি আল আলির আরেকটি অমর ব্যঙ্গচিত্র- টুইটার ব্যবহারকারী @ কালচারঅবফিয়ার কতৃক শেয়ারকৃত।
আল আলির মৃত্যু হতে পারে কিন্তু তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলো অমর ও কালজয়ী।
@অকুপাইথিয়রি: # হান্দালা প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে/ حنظلة لا يزال يقاوم/ #ওডব্লিউএস # গ্লোবালসলিডারিটি # সিরিয়া # মিশর # ফিলিস্তিন # বাহরাইন # ইয়েমেন # লিবিয়া # তিউনিসিয়া # গ্রীস
১০- বছর বয়সী এ বালক সাধারণ আরবদের পাশে দাড়িয়েছিল।
মিশর থেকে মোহামেদ দিয়া টুইট করেন:
স্বৈরাচারী শাসনামলে আরবের জনগনের দুর্দশা # হান্দালার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। শান্তিতে বিশ্রাম নাও #নাজিআলআলি
নাজি আল আলিকে কে হত্যা করল?
আল আলিকে কে হত্যা করল সে বিষয়টি আজও অজ্ঞাত, তবে ধারণা করা হয় এতে ইসরাইল জড়িত।
যারা কলম ধরে তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে# ইসরাইল মোটেও ভীত নয়। শান্তিতে বিশ্রাম নাও নাজি আল আলি। # ফিলিস্তিন
আল আলি কেবলমাত্র ইসলাইলের সমালোচনাই করেননি , স্বৈরাচারী আরব শাসক, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনও তাঁর কার্টুনের সাধারণ ভাবনা ছিল।
“ সে সবার সমালোচনা করত, আমি বলতে পারি, ইসরাইল, পিএলও [প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন], আরব শাসনকাল সবার। কেউ জানে না কে তাঁকে হত্যা করেছে। প্রত্যেকেরই কারন (হত্যা করার) আছে”। এ চাইল্ড ইন প্যালেস্টাইন গ্রন্থে নাজি আল আলি-এর ভূমিকায় কমিকস শিল্পী ও সাংবাদিক জো সাক্কো এই মত ব্যক্ত করেছেন।
নাজি আল আলিকে কে হত্যা করেছে তা বিশ্ব নাও জানতে পারে কিন্তু হান্দালা নামের অবিনশ্বর চরিত্রের মাধ্যমে দুনিয়া তাকে সবসময় মনে রাখবে।
নাজি আল আলি সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য আরব আমেরিকান শিল্পী ফায়েক অয়েইস কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পিডিএফ দেখতে পারেন।