- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাংলাদেশঃ একজন প্রবাদ পুরুষের মৃত্যুতে শোক

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, চলচ্চিত্র, তাজা খবর, নাগরিক মাধ্যম, শিল্প ও সংস্কৃতি, সাহিত্য

বাংলাদেশের সম্পদ এবং বাংলার সবচেয়ে পরিচিত লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ, তাঁর লক্ষ লক্ষ ভক্তকে শোকে নিমজ্জিত করে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে [1] কয়েক ঘন্টা আগে মৃত্যু বরণ করেছেন। হুমায়ুন আহমেদ [2] (৬৪) ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এক লেখক, নাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা, যিনি বিগত তিন দশক ধরে বাংলা সাহিত্যে, টিভি এবং চলচ্চিত্রে তাঁর বিখ্যাত চরিত্র হিমু, মিসির আলি এবং বাকের ভাইয়ের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়ালেখা সমাপ্ত করে,উক্ত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পলিমার রসায়ন-এর উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। নব্বই-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ত্যাগ করেন, যাতে তিনি লেখা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজেকে আরো নিবেদিত করতে পারেন।

[3]

হুমায়ূন আহমেদ। ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে। পাবলিক ডোমেইন থেকে নেওয়া।

সত্তর-এর দশকে যখন তাঁর প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে [4] প্রকাশিত হয় হয়, তখন থেকে তিনি আলোচনায় উঠে আসেন। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস “শঙ্খনীল কারাগারকে” স্বদেশীরা বিশ্বের অন্যতম সেরা এক উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত করে। তাঁর প্রায় ২০০-টির মত উপন্যাস এবং নাটক প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশীদের মধ্যে অত্যন্ত পাঠক প্রিয়তা লাভ করে।

আশির দশকে তিনি ড্রামা বা নাটক লেখা শুরু করেন [ উল্লেখ্য: ধারাবাহিক টিভি নাটক এশিয়ায় ড্রামা হিসেবে পরিচিত] যেমন, “এইসব দিনরাত্রি”, বহুব্রীহি, “কোথাও কেউ নেই”, যে সব নাটক দেশে প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

নব্বই- এর দশকে, একই সাথে চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক হিসেবে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে যুক্ত হন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আগুনের পরশমণি, যা কিনা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রতিযোগিতা আটটি বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে সেরা ছবি এবং সেরা পরিচালকের পুরস্কারও অর্ন্তভুক্ত ছিল।

শোকার্ত ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা শুরু করে। টুইটারে আসা কিছু প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হল:

@ভালোমানুষ [5]: এইমাত্র শুনলাম হুমায়ূন আহমেদ, যিনি #বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান লেখক…তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। আজ আমরা সকলে হিমুতে পরিণত হয়েছি। pic.twitter.com/gbty0UfL

@ আইভি১লিই [6] (আইয়াদ চৌধুরী):শান্তিতে ঘুমান হুমায়ূন আহমেদ। আমরা আপনার অভাব অনুভব করতে থাকব। বাংলাদেশ তাঁর অন্যতম এক সেরা সন্তানকে হারাল। #হুমায়ূন আহমেদ#বাংলাদেশ#বাংলা# লিটারেচার।

@এইচসামি [7](হাসান সামি আদনান) শান্তিতে ঘুমান ডঃ হুমায়ূন আহমেদ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন সত্যিকারের প্রবাদ পুরুষ। আমাদের জন্য এক বিশাল ক্ষতি যা আর পুরণ হবার নয়।

@শিরিনআখতার [8]:হুমায়ূন আহমেদের মত মানুষেরা কখনোই মারা যান না। যতদিন বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকবে, ততদিন তিনি বেঁচে থাকবেন। সকল বইপ্রেমীদের হৃদয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। শান্তিতে ঘুমান।

আমিনুল ইসলাম সজিব [9], যিনি হুমায়ূন আহমেদের এক প্রচণ্ড ভক্ত তিনি একটি বাক্যে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। “এই ঘটনা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পপ গায়ক মাইকেল জ্যাকসন মারা যাবার সময়কার অনুভূতি তৈরী করেছে”। তিনি তার ব্লগে বিষয়টি সম্বন্ধে বর্ণনা করেন:

তিনি অনেক গল্প, ছোট গল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন, যা আমাদের হৃদয় ছুয়ে গেছে। তিনি অনেক চরিত্র তৈরী করেছেন। এমন সব চরিত্র- তাদের আমরা বাঙ্গালীরা এমন ভাবে জানি, বিশ্ব যাদের সুপারহিরো হিসেবে জানে। তিনি কোন একক মাত্রায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ভৌতিক গল্প লিখেছেন, তিনি রোমাঞ্চকর গল্প লিখেছেন, তিনি রহস্যময় গল্প লিখেছেন, তিনি প্রেমের গল্প লিখেছেন। তিনি একটি মাত্র কাহিনীতে নানান উপাদানের সমন্বয় ঘটাতেন। তাঁর সেই ক্ষমতা ছিল। পাঠকের মনের ভেতর প্রবেশ করার মত এক অসাধারণ ক্ষমতা তিনি লাভ করেছিলেন এবং সমাপ্তি না ঘটা পর্যন্ত সেই গল্পে পাঠ করে যেতে তিনি পাঠকদের বাধ্য করতেন।

তিনি কেবল এক লেখক ছিলেন না, একই সাথে তিনি ছিলেন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। হ্যাঁ, অনেক লেখক এমনভাবে লিখতে পারে যাতে পাঠকরা তাদের মনে একটা ছবি একে নিতে সক্ষম হয়, কিন্তু পাঠকের মনের ছবিটি ধরা এবং ঠিক সেই ভাবে সেটি উপস্থাপন করার ক্ষমতা অনেক লেখকের নেই। ঘটনাক্রমে হুমায়ূন আহমেদ জানতেন কি ভাবে তা করতে হয়।

[10]

ছবি রেডিও ফুর্তির সৌজন্যে। ফয়সাল মাসুমের ছবির একটি কোলাজ।

অনেকে এই বিষয়টি তুলে ধরেছে যে কি ভাবে তাঁর সৃষ্টি একটি আগ্রহী পাঠক প্রজন্মের সৃষ্টি করেছে। সজিব আরেকটি পোস্টে লিখেছে:

তিনি তাঁর শব্দের যাদুতে অনেক মানুষকে বইয়ের পোকায় রূপান্তরিত করেছেন।

যদিও হুমায়ূন আহমেদ-এর বিশাল এক নিবেদিত প্রাণ ভক্ত ছিল, কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। অনেকে দাবি করেন যে স্বদেশী লেখকদের তুলনায় তাঁর লেখা জনপ্রিয় ছিল বটে, কিন্তু তাদের লেখার তুলনায় তাতে তেমন সাহিত্যমূল্য ছিল না [11]

তবে নজরুল ইসলাম [12] ফেসবুকে লিখেছেন [বাংলা ভাষায়]:

যে লেখকের মধ্যে কোটি মানুষ নিজের কণ্ঠ খুঁজে পান… তাঁর মৃত্যু বেদনা ছাড়া আর কিছু দেয় না!

প্রলয় হাসান [13] ফেসবুকে স্বীকার করে নিয়েছেন [বাংলা ভাষায়]:

একটা পুরো জাতিকে, বিপুল সংখ্যক মানুষকে, একটা তরুন প্রজন্মকে বইমুখী করা, পরিবারের লোকদের হলমুখী করা, এসব বিরল ও অসম্ভব কঠিন কাজগুলো তিনি করে গেছেন। সবাই এটা পারেন না।

এখানে তাঁর কিছু লেখা রয়েছে, যা ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে:

* ১৯৭১ [14]

* গৌরীপুর জংশন [15]