২০১২ অলিম্পিক শুরু হতে আর মাত্র ১৭ দিন বাকি এবং লন্ডনে আয়োজিত এই ক্রীড়া আসরের জন্য বিশ্ব চঞ্চল হয়ে উঠেছে- আর আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত লন্ডনে অলিম্পিকের আসর বসতে যাচ্ছে। আফ্রিকার জন্য এই প্রতিযোগিতা অনেক সম্ভাবনার এবং এখনকার কিছু রাষ্ট্র এর জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং একই সাথে আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরস্পরের সাথে পরস্পরের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এই আসর সেটির পুনর্জাগরনের ক্ষেত্র।
আফ্রিটোরিয়াল, আফ্রিকার অলিম্পিকে অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে বর্ণনা প্রদান করেছে, ১৯০৮ সালে প্রথম অংশগ্রহণের পর থেকে কি ভাবে আফ্রিকার দেশগুলো এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ধাপে ধাপে উন্নতি করেছে:
দীর্ঘ সময় ধরে আফ্রিকার দেশগুলো অলিম্পিক পরিবারে সদস্য, আর ১৯০৮ সাল থেকে এই মহাদেশের জাতিসমূহ আধুনিক অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে আসছে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত সেই অলিম্পিকে, সাব সাহারা অঞ্চল থেকে কেবল দক্ষিণ আফ্রিকাই অংশ গ্রহণ করেছিল।
আফ্রিকা থেকে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মিশর ১৯২৮ সালে আমস্টার্ডাম অলিম্পিকে অংশ নেয়। ১৯৬০ সালে আফ্রিকা থেকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে পরিবর্তিত হয়। সে সময় আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দেশ উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। এর আগের সময় পর্যন্ত আফ্রিকার দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে বটে, তবে সাধারণত নিজ নিজ উপনিবেশিক শাসক রাষ্ট্রের দলের একজন হয়ে। বর্তমানে আফ্রিকার দেশসমূহ সফলভাবে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে আসছে।
২০১২ অলিম্পিক গেমসে আফ্রিকার দেশসমুহের ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া এবং ঘানার স্বর্ণ জয়ের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের ক্রীড়াবিদরা অসাধারণ, তাদের অলিম্পিক কর্মসূচি অনেক জোরালো এবং দূর পাল্লার ও মাধ্যম দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতায় তাদের দৌড়বিদেরা সেরা। তবে অন্যদিকে টোগোর মত রাষ্ট্র কেবল দুজন প্রতিযোগীকে লন্ডন অলিম্পিকে পাঠাচ্ছে, কারণ এমনকি যদিও তাদের নাগরিকরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়, তারপরেও দেশটির তাদেরকে সেখানে পাঠানোর মত আর্থিক সঙ্গতি নেই।
ইসিএডি ফোরাম আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মাধ্যম এবং দূরপাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতায় ইথিওপিয়া বনাম কেনিয়ার খেলোয়াড়দের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা, যা পুরোনো এক শত্রুতা:
কেনিয়া এবং ইথিওপিয়া, অলিম্পিকে পদক পাওয়ার দৌড়ে সবসময় নিজেদের ঐতিহ্যবাহী শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখেছে।
বিজয় মঞ্চে পূর্ব আফ্রিকা থেকে আসা পুরুষ এবং মহিলা ক্রীড়াবিদদের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়াবিদের তুলনীয় নয়। চার বছর আগে বেইজিং অলিম্পিকে দক্ষিণ আফ্রিকা অত্যন্ত বাজে ফলাফল প্রদর্শন করেছে, সে সময় দেশটির ২৫৩ জন ক্রীড়াবিদের কাছ থেকে মাত্র একটি পদক আসে।
নাইজেরিয়া হচ্ছে এরকম আরেকটি রাষ্ট্র, যে দেশটিকে ২০০৮ সালের অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অর্জিত মাত্র একটি রৌপ্য ও তিনটি তাম্র পদকের থেকে বেশী কিছু পাওয়া জন্য নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং আফ্রিকার অজানা কারো কাছ বিস্ময়কর কিছু পাওয়া যাবে, যে ক্রীড়াবিদ সবার অগোচরে অনুশীলন করছে।
জুলাই ২৭ থেকে আগস্ট ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এই প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে স্থান করে নেওয়ার জন্য সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, এই ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ এবং মহিলা হকি দল এবং এ্যাঙ্গোলার বাস্কেটবল দল দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে।
অংশগ্রহণকারী কিছু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বর্ণ, লিঙ্গ এবং সংস্কারের বিষয়টি উল্লেখনীয়, যেমন অবশেষে সৌদি আরব এই প্রথম অলিম্পিক দলে মহিলা ক্রীড়াবিদদের অর্ন্তভুক্ত করেছে:
ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তা, যিনি আধুনিক অলিম্পিকের প্রবর্তক, তিনি ৯০ বছর আগে এই কথাগুলো লিখেছিলেন। তারপরেও মাত্র এই সপ্তাহে সৌদি আরব এই প্রথম নারীদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল (যদিও আশা করবেন না যে কোন ক্রীড়াবিদ স্নানের পোষাক বা লিওটার্ড [আটোসাঁটো পোষাক] পড়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে।) ২০২০ সালের অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় আয়োজক হবার দৌড় থেকে বিদায় নেওয়া কাতার, আবার ২০২৪ সালের অলিম্পিকের আয়োজক রাষ্ট্র হবার তালিকায় নিজেদের নাম ঘোষণা করল। তবে ২০১২ সাল হচ্ছে এমন এক বছর যে বছর তাদের অলিম্পিক দলে মহিলা ক্রীড়াবিদদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
বিএ হলার, একটি কাহিনীর লিঙ্ক যুক্ত করেছে, যা দুই পা হারানো ক্রীড়াবিদ এবং একই সাথে প্যারা-অলিম্পিক এবং অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী কোন প্রথম প্রতিযোগীর কাহিনী। আর ধারণা করুন তিনি মহাদেশের নাগরিক, তিনি একজন আফ্রিকান:
অস্কার পিস্টোরিয়াস, দুই পা হারানো প্রথম এক প্রতিযোগী, লন্ডন ২০১২ অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য যাকে দক্ষিণ আফ্রিকা তার অলিম্পিক দলে অর্ন্তভুক্ত করেছে। ২৫ বছর বয়স্ক এই দৌড়বিদ একই সাথে ৪x৪০০মিটার রিলে দৌড়ে অংশ গ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। পিস্টোরিয়াস, যিনি একই সাথে প্যারা-অলিম্পিকে অংশ গ্রহণ করেছেন তিনি বলেন, “আজকের দিনটা সত্যিকার অর্থে আমার জন্য সবচেয়ে গর্বের দিন। এটা আমার জন্য প্রকৃত এক সম্মান এবং আমি একই সাথে আনন্দিত যে বছরের পর বছর ধরে করা কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং ত্যাগ এক সাথে সব কাজে এল”।
সবশেষে স্পোর্টসকেনিয়ার কাছ থেকে পাওয়া অলিম্পিকে কেনিয়ার ইতিহাসের খানিকটা উপভোগ করুন।