মোহামেদ মোর্সিকে মিশরের নতুন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে সেটা উদযাপনের জন্যে জনতা তাহরির স্কোয়ারে ভীড় জমিয়েছে। মিশরীয় বিপ্লবের উপকেন্দ্র এই তাহরির স্কোয়ার উল্লাস আর জয়গানে ভরে যায়। আকাশে আতশবাজী জ্বলে উঠলেও, উদযাপনের সেই সময় কলঙ্কজনক কিছু ঘটছে।
সাংবাদিক নাতাশা স্মিথ উদযাপনের জন্যে তাহরির স্কোয়ারে দিকে যাওয়ার সময় তিনি যে গণ যৌন লাঞ্ছনা সহ্য করেন তার সেই অগ্নিপরীক্ষার বর্ণনা দেন “দয়া করে খোদা, দয়া করে এটা বন্ধ কর।” শিরোনামের একটি পোস্টে:
শত শত আমার পুরুষ আমার অঙ্গগুলো আলাদা করে ফেলে আমাকে আশেপাশে ছুড়ে দেয়। তারা আমার স্তন আঁচড়ে আর চেপে ধরে এবং তাদের আঙ্গুল আমার (শরীরের) সম্ভাব্য প্রত্যেক স্থানে জোর করে প্রবেশ করিয়েছে। এতো এতো পুরুষ। যা আমি দেখতে পেয়েছি সেটা হলো লোলুপ সব মুখভঙ্গি, ক্ষুধার্ত সিংহের মুখে তাজা মাংসের মতো আমাকে এদিক ওদিক ছুড়ে দেয়ার সময় টিটকারী আর বিদ্রূপ করছে।
মহিলারা কেঁদে কঁদে আমাকে বলেছেন “এটা মিশর না! এটা ইসলাম না! দয়া করে, দয়া করে এটাকে মিশর ভাববেন না!” আমি তাকে আশ্বস্ত করে বলেছি আমি জানি এটা সেরকম কিছু নয় – যে মিশর ও তার সংস্কৃতি ও জনগণ, এবং যে সহজাত শান্তির সহনশীল ইসলাম কে আমি ভালবাসি। তবে আসলেই আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ লোক নই এবং আমি পরিস্থিতির ভিতরটা দেখতে পারি। আমি যে জায়গাটিকে জানি এবং ভালবাসি এই নোংরা আচরণ তার প্রতিনিধিত্ব করে না।
এই পোস্টটিতে নাতাশার আতংককে জয় করার সাহসের গভীর প্রশংসা থেকে শুরু করে তার বর্ণনাকে অস্বীকার করাসহ এক হাজারের বেশি মন্তব্য এসেছে। এই ঘটনাটি সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক নেমে যাওয়ার অব্যবহিত পরে ১১ই ফেব্রুয়ারী তারিখে প্রতিবেদক লারা লোগা্নের উপর গণ হামলাকে মনে করিয়ে দেয়। লোগানের কী হয়েছিল সেটাও অনুরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল ব্লগমণ্ডলে এবং মূলধারার মিডিয়াতে।
সম্প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে একটি মিছিল গণ যৌন হয়রানির মাধ্যমে শেষ হয়েছে। অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিওরা সতর্ক করেছে যে যৌন সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি সরকারী বাহিনীগুলোর একটি প্রচেষ্টা নারীদের দমিয়ে রাখার এবং বাহ্যিক জীবনে তাদের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ রাখার। হয়রানি-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া রীমা লাবিব “তারা কাপুরুষ আর আমি অবিচল।” শিরোনামের একটি পোস্টে তার গল্পটি ভাগাভাগি করেছেন:
আমরা স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং সমতার দাবিতে রাস্তায় নামি যৌন সহিংসতাসহ বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়েই। একটি সুস্থ এবং অনেকটা আশ্রিতের মতো লালনপালন ও পরিবেশ লাভ, এর ঝুঁকি সংক্রান্ত জ্ঞান এবং এটা মেনে নেয়া – কোন কিছুই আপনাকে এর জন্যে প্রস্তুত করে না; আমার সমস্ত অভিজ্ঞতায় এই হামলাটি নিকৃষ্টতম লঙ্ঘন এবং আমি জানি যে এটা সারতে আমার যথেষ্ট সময় লাগবে।
শারীরিকভাবে আমাকে পরাজিত, ভীত বা চিৎকার করাতে হয়ত এক শত বা ততোধিক শক্তিশালী কামুক উচ্ছৃঙ্খল জনতার প্রয়োজন হয়েছিল, সেটা কোন ন্যায্য লড়াই ছিল না; আমার শরীর অত্যাচারিত এবং কলুষিত হয়েছিল – তারা কেবল আমার খোলসকে আঁচড় দিতে পেরেছে, আমাকে ভিতর থেকে ভাঙ্গতে পারেনি, আমি শিকারে পরিণত হইনি, এবং আমি ভেঙ্গে পড়িনি।
ইতোমধ্যে এক্টিভিস্টরা সবার জন্যে নিরাপদ রাস্তায় দাবি করে ৪ঠা জুলাই হয়রানি্র বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভের অয়োজন করছেন।
1 টি মন্তব্য