- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

পাকিস্তান: ছেলেদের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান উদযাপনের কারণে সন্দেহভাজন পাঁচ মেয়েকে সম্মান রক্ষায় হত্যা

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, আইন, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী

সর্বশেষ খবর (১৭ জুলাই, ২০১২):

২০ জুন, ২০১২ তারিখে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট অনার কিলিং মামলা খারিজ করে দিয়েছে [1]। আদালতের কাছে তথ্য আছে, মেয়েরা বেঁচে আছে। আর হত্যা সংবাদটি ছিল মিথ্যা। সুপরিচিত অধিকার রক্ষা কর্মী ড. ফৌজিয়া সাঈদ এবং ফারজানা বারী’র সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বাধীন কমিশন জিরগা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যে গ্রামে মেয়েদের হত্যার অভিযোগ উঠেছিল সেখানে ঘুরে আসার ঘটনার সঠিক বিবরণী জানা গেছে [2]। ফারজানা বারী জানিয়েছেন, তিনি দুজন মেয়ের সাথে কথা বলেছেন, যাদের কথিত ভিডিওতে দেখা গেছে। পুরো ঘটনার একটা ব্যাখ্যা [3] পাওয়া গেছে পারভীনের এই মন্তব্যে:

কোহিস্তান ইস্যুতে আদালত এবং মিডিয়ার দ্রুত পদক্ষেপকে আমি সাধুবাদ জানাই। একটি অর্থবহ সুশীল সমাজ হিসেবে পরিচিত হতে জিরগা ব্যবস্থা এবং মেয়েদের প্রতি এসিড নিক্ষেপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।

মূল সংবাদ:

একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানের খাইবার-পাকতুনখায়ার কোহিস্তান জেলার একটি জিরগা [4] (উপজাতিদের সর্বোচ্চ পরিষদ, অনেকটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো) পাঁচজন মেয়েকে হত্যার আদেশ দিয়েছে। গ্রামের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছেলেদের সাথে নাচার অপরাধে তাদেরকে হত্যা করা হয়। যেসব ছেলে নেচেছিল তাদের একজনের ভাই আফজাল খান দাবি করেছেন, মেয়েরা ইতোমধ্যে মারা গেছে [5]

ইউসি পেশ বেলার [6] প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের পরিবার তাদের হত্যার নির্দেশ কার্যকর করে। সংকীর্ণ ধর্মীয় ব্যাখ্যা দ্বারা সমর্থিত উপজাতি কোড এই অঞ্চলের বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। একই অপরাধে ৪ মাস আগে স্থানীয় জিরগা চারজন মেয়ে এবং দুইজনকে ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। [7] একটি মোবাইল ফোন ভিডিওতে পার্বত্য জেলা কোহিস্তানের গাদা গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে তাদের নাচতে এবং গাইতে দেখে এ সাজা দেয়া হয়।

ফতোয়া [8] জারি করার মাধ্যমে এ ধরনের ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী আইন করা হয়েছিল। জিরগার সদস্যরা গান গাওয়া এবং নাচা তাদের উপজাতি জীবনযাপন বিষয়ক কোডের একটি বড় অবমাননা বলে মনে করে। এটা অবমাননার কারণেই ওই পাঁচজন মেয়েকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

তাজীন [9]দ্য রিল্যাক্টেন মাইন্ড এ কোহিস্তানের আইন পরিষদের সাবেক সদস্য কর্তৃক ইস্যুকৃত ভয়ংকর সব ফতোয়ার কথা তুলে ধরেছেন:

জমিয়াত উলামা-ই-ইসলাম-ফজলুর রেহমানের মাওলানা আবদুল হালিম নারী বিদ্বেষী সিরিজ ফতোয়া দিয়েছেন [10]। এ বিষয়ে তিনি তার ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক অনুসারীদের পরিষ্কারভাবে বিস্তারিত বলেছেন কারা অগ্রাধিকার পাবে। ফতোয়ার শুরুতেই বলা হয়েছে, মেয়েদের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ইসলামবিরোধী। এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া এবং শিক্ষা লাভ শুধু অধার্মিক কাজই নয়, কোহিস্তানের যেসব বাবা-মা তাদের মেয়ে সন্তানকে স্কুলে পাঠান, তাদেরকে তিনি তিরস্কার করেছেন। একই সঙ্গে আহবান জানিয়েছেন, তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে। […]

ফতোয়া এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। যেসব এনজিও এই অঞ্চলে কাজ করছে তাদেরকে তিনি ‘অশালীন কর্মকাণ্ডের কারখানা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কেপিকে সরকারের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে পরস্পরবিরোধী সংবাদ এসেছে। কেপিকে প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী মিয়া ইফতেখার হুসাইন বলেছেন, পাঁচজন মেয়ের হত্যার যে খবর বেরিয়েছে, সেটা ডাহা মিথ্যা [11]। যদিও, মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণপত্র নেই।

তবে ধোঁয়াশা কাটাতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট কোহিস্তান হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি সুয়ো মোটো [12] রুল জারি করেছেন। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট কেপিকে সরকারকে ওই পাঁচ মেয়েকে হাজির করতে আদেশ দিয়েছে। সরকার তাদের হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কোহিস্তানের একটি দৃশ্য। [13]

কোহিস্তানের একটি দৃশ্য। ছবি ইউমিভরিওয়ান। ফ্লিকার থেকে নেয়া। সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি

পাকিস্তানের সুশীল সমাজ অনেকদিন ধরেই জিরগা প্রথা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কথা বলে আসছেন। আওরাত ফাউন্ডেশনের (উইমেন ফাউন্ডেশন) শিরীন কামাল জোরালো [14] ভাবে এই নৃশংসতার নিন্দা জানিয়েছেন:

ইদরিস কামাল নামের একজন বয়স্ক উপজাতি বলেছেন, ইসলাম বা উপজাতি মূল্যবোধ এ ধরনের বর্বরতাকে অনুমতি দেয় না।

নাসির আহমেদ যথার্থই টুইট করেছেন:

@নাসির_এমটিএ [15]:

কোহিস্তান, বেলুচিস্তান, সিন্ধ বা অন্য যেসব স্থানে অনার কিলিং হয়, সেইসব স্থানগুলোই পাকিস্তানের জল্লাদখানা।

সোনিয়া ওয়াহাব লিখেছেন [16]:

অনার কিলিং চরম বিরক্তিকর একটা বিষয়।

মালিক হামজা মন্তব্য [17] করেছেন:

চরম বিরক্তিকর (অসুস্থ) বদ্ধ উন্মাদ মানুষেরা আমাদের ধর্মকে লজ্জায় ফেলছে।

টুইটারে আরো প্রতিক্রিয়া এবং ঘটনার আপডেট এসেছে:

@শাহবাজজাহিদ [18]: কোহিস্তানের একজন অধিবাসী এটা জানিয়েছেন: এখন, আমি ভাবছি মেয়েগুলো এখন বেঁচে নেই।

@শাহবাজজাহিদ [19]: মুহম্মদ আফজাল খান বলেছেন, কোহিস্তানের কিছু জিরগার প্রধান মাওলানা জাভেদ হত্যার আদেশ দিয়েছেন।

@বীনাসারওয়ার [20]: আরটি@আলীমমকবুল: পাক সরকারি প্রতিনিধিদল কোহিস্তানের পাট্টানে এসেছেন। যে পাঁচজন মেয়ে ছেলেদের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান উদযাপনের কারণে খুন হয়েছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করবেন।