মায়ানমার: বিদ্যুৎ সঙ্কটে সৃষ্ট বিক্ষোভ ক্রমশ মায়ানমারে ছড়িয়ে পড়ছে

গ্রীষ্মকালে মায়ানমারে বিদ্যুৎ সঙ্কট একটা সাধারণ বিষয়, কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি আর খারাপের দিকে গড়িয়েছে। মায়ানমারের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো দেশটির দুটি সর্ববৃহৎ শহরের বেশীর ভাগ এলাকায় প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার মত বিদ্যুৎ প্রদানে সক্ষম, যা পর্যায়ক্রম প্রদান করা হয়। ইয়াঙ্গানের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের প্রধান ব্যাখ্যা দিয়েছে যে শোয়ে লি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে যুক্ত ট্রান্সমিশন টাওয়ার (সরবরাহকারী টাওয়ার) বোমায় বিস্ফোরিত হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ প্রদানের ঘটনা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে কয়েকদিন আগে মান্দালয়ে এক বিরল কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। বিক্ষোভকারীরা মোমবাতি প্রজ্বলন করে এবং নিজদের বার্তা তুলে ধরার জন্য পোস্টার প্রদর্শন করে। সিজে মায়ানমার, ফেসবুকে এই বিক্ষোভের ছবি প্রদর্শন করেছে।

ইয়াঙ্গনের সিটি হলের সামনে বিদ্যুৎ সঙ্কটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি সিজে মায়ানমারের ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া।

থান্ট জিন ও কেসে, পরিষ্কার করছে যে [বার্মিজ ভাষায়] মান্দালয়ের পরিস্থিতি আসলে এর চেয়ে খারাপ।

এমনকি ছয় ঘণ্টার সরবরাহ নয় এবং ১২ ঘণ্টার সঙ্কট নয়, সপ্তাহে মাত্র দুইদিন, প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রদান করা হয়, যদি আপনি আমার কথা বিশ্বাস না করেন, তাহলে এখানে এসে নিজের চোখে তা দেখে যেতে পারেন। এমনকি যে সময় বিদ্যুৎ প্রদান করার কথা, সে সময়ও বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দেয়।

এই ঘটনায় নিয়ান্ত অং ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য পোস্ট করেছে,

আমরা এতটাই ধনী যে আমরা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতের খাবার খাই, প্রায় প্রতিদিন, ধন্যবাদ।

এই ঘটনার পরের দিনও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তা অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫০ জন অংশগ্রহণকারী, যাদের মধ্যে লেখক, শিল্পী, স্বেচ্ছাসেবক এবং বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির কয়েকজন সদস্যকে রয়েছে, মায়ানমারের পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখার বিষয়ে প্রশ্ন করার দায়ে তাদের আটক করা হয়। তবে হমূ জাউ, যে নিজেকে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলে পরিচয় প্রদান করেছে এবং ধারনা করা হচ্ছে যে উক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি দপ্তরের একজন কর্মকর্তা, সে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশের কথা অস্বীকার করে । .

মান্দালয়ে ক্যান্ডেল নাইট (মোমবাতি প্রজ্বলন রাতি)।
এই রকম পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোন আদেশ, নির্দেশ বা কাউকে গ্রেফতার করার কথা বলা হয়নি।
সম্ভবত, হানাহানির আশঙ্কায়, এই বিষয়ে কেবল বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে
মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, এবং জনগণকে ব্ল্যাকমেল করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

যারা প্রশ্ন করছিল, কোন ধরনের অভিযোগ গঠন ছাড়াই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে [বার্মিজ ভাষায়], ২২ মে ২০১২ তারিখে বিগত দুইদিন যেখানে বিক্ষোভকারীরা জমা হয়েছিল, সেখানে ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনী গিয়ে হাজির হয়, যেমনটা সিজে মায়ানমার সংবাদ প্রদান করছে।

এই আন্দোলন ইয়াঙ্গনে গিয়ে পৌঁছে, যেখানে লোকজন শুলে প্যাগোডার সামনে একত্রিত হয় এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মায়ং কায়ং এই বিক্ষোভের একটি ভিডিও আপলোড করেছে

গ্রাহকেরা, এক নাম্বার বিদ্যুৎ মন্ত্রী, জাও মিনের পদত্যাগ দাবী করেছে, যিনি বলেছেন যে [বার্মিজ ভাষায়] মায়ানমার-এর উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কেবল স্থানীয় চাহিদায় ব্যবহার করে উচিত নয়, বরঞ্চ তা আশেপাশের দেশসমূহে বিক্রি করে দেওয়া উচিত। লেই মায়ং খুন, ইয়েভিন্ত-এর একটি নোটে [বার্মিজ ভাষায়] মন্ত্রীর ব্যাপারে তার মন্তব্য প্রকাশ করেছে [বার্মিজ ভাষায়]

প্রিয় ইউ (মায়ানমারে ইউ মানে হচ্ছে জনাব) জাও মিন, যদি আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে পদত্যাগ করেন। যদি আপনি দায়িত্বশীল না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার এই পদে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা আপনার দায়িত্ব।

কাবা ফায়ের মন্ত্রীর বিষয়ে একটা ফেসবুক একটি স্ট্যাটাস লিখেছে:

যদি আপনার কেবল উল্টাপাল্টা বকার অভ্যাস থাকে সেক্ষেত্রে মন খারাপ করবেন না। তাহলে আপনি অন্তত বিদ্যুৎ মন্ত্রী হতে পারবেন!

কিয়াক মিয় খিনেও যথারীতি মায়ানমারের নেটিজেন ফেসবুকের পাতায় মন্তব্য করেছে

জাও মিন নাগরিকদের উদ্বেগকে উপেক্ষা করছে এবং চীনের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। এই বিষয়টি সহ্য করা হবে না এবং তাকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

অনেকে চীনের প্রতি ক্ষুদ্ধ, কারণ কারণ মায়ানমারের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপন্ন হওয়া বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ চীনের কাছে বিক্রি করা হয়। সাই কায়াং সাট থার উল্লেখ করছেন যে সরবরাহ টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার যে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা যৌক্তিক নয়।

যে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় যে কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে অনেক বেশী বৈপরীত্য রয়েছে। ইয়াঙ্গনে সরবরাহ করা বিদ্যুতের ৭১০ শতাংশ আসে লাও পি টা এবং ইয়ে ইওয়ার জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। শায়ে লি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ চীনে সরবরাহ করা হয়। তাহলে ইয়াঙ্গনে কেন বিদ্যুত-এর ঘাটতি দেখা দেবে/ যাও এবং চীনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন কর।

সিজে মায়ানমার-এর পোস্ট করা ছবির এ্যালবাম-এর নীচে এক মন্তব্যে আং মইয়োও চীনের তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে

কোন কিছু করার দরকার নেই, যখন থেকে চীন সকল বিদ্যুৎ নিয়ে যাচ্ছে, তখন থেকে সব খালি হয়ে আছে।

ইয়াঙ্গন-এর বিক্ষোভ এখনো থেমে যায়নি। মনোইয়াও এব বাগোর মত মফস্বল শহরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যে সব এলাকাও পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পাওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত। মায়ানমারের কিছু নেট নাগরিক আছে যারা তাদের প্রোফাইল এবং টাইমলাইনের ছবি পরিবর্তন করে এই বিক্ষোভের সমর্থনে সেখানে এক অন্ধকার পটভূমিতে জ্বলা মোমবাতির ছবি প্রদান করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .