২০শে মে রবিবার দুপুর ১টা থেকে পাকিস্তানের টুইটার ব্যবহারকারীরা পাকিস্তানের সকল আইএসপি’কে (ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী) ব্যপ্ত করে একটি সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়। কিছু কিছু আইএসপি দুপুরের দিকে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের (পিটিএ) উপ-পরিচালক (প্রয়োগ) মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে টুইটার.কম অবরোধের এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যাশ (নগদ স্মৃতি-ভাণ্ডার) খালি করে ফেলার আদেশ সম্বলিত একটি ইমেইল পেয়েছে।
রবিবার দুপুর ১টার দিকে পাকিস্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অবরোধের সম্মুখীন হতে শুরু করে এবং হার্ডিক্ট (নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা জানার জন্যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্কম্যান সেন্টারের প্রকল্প) ওয়েবে সকল আইএসপি জুড়ে অবরোধের অভিযোগের বন্যা বয়ে যায়:
traceroute twitter.com
traceroute: unknown host twitter.com
ধর্মদ্রোহী কার্টুন প্রতিযোগিতার কারণে এই অবরোধ হয়েছে বলে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন তার সূত্রের মাধ্যমে দাবি করে:
এক্সপ্রেস নিউজ সংবাদদাতা সুহাইল চৌধরী রিপোর্ট করেছিলেন যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ব্যাঙ্গচিত্র নিয়ে চলমান একটি “প্রতিযোগিতা”র কারণে টুইটারে প্রবেশাধিকার রোধ করা হয়েছে। “জনসাধারণের আবেগ”-এর কথা স্মরণ করে এই পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছে বলে চৌধরী রিপোর্ট করেছেন।
এছাড়াও প্রো-পাকিস্তানী’র আমীর আত্তা তার সূত্র থেকে নিশ্চিত করেছেন:
আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে গতকাল কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফের সভাপতিত্বে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে মুহাম্মদ দিবসে অংকনের (প্রতিযোগিতার) কারণে টুইটার অবরোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সদস্য, পিটিএ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীদাররা অংশগ্রহণ করেছিল। সভাটি সম্পর্কে সরাসরি সচেতন একটি সূত্র প্রো-পাকিস্তানী’কে জানান যে যে কোন ধর্মদ্রোহী বিষয়বস্তুতে পাকিস্তানী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্য প্রবেশাধিকার ঠেকাতে ২০শে মে, ২০১২ তারিখে টুইটার অবরোধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে আমি আমার ব্যক্তিগত ব্লগে মত দিয়েছি যে পিটিএ কেবল তাদের ইউআরএল পরিশোধন পরিষেবা পরীক্ষা করে দেখছিল:
সত্যি সত্যি আমার মনে হয়েছে যে পিটিএ তাদের ইউআরএল পরিশোধন ব্যবস্থাটি পরীক্ষা করে দেখছিল মাত্র। আমাদের কাছে গত সপ্তাহে ফেইসবুকের উপর তাদের কিছু ছবির সার্ভার পরীক্ষণের রিপোর্ট আছে, যেগুলো সন্ধ্যার মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। যে কোন ধরনের আইনগত প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে পিটিএ আদালত বন্ধের দিন রবিবারকে বেছে নিয়েছিল।
ইনগ্রিড লূডেন টেকক্রান্চে লিখেছিলেন “নিশ্চয়ই, শুধু নবীকে ছাড়া যে কোন কিছু আঁকুন”:
নবী মোহাম্মদের ছবি সবসময়েই অত্যন্ত বিতর্কিত একটি সমস্যা – কোরআনে স্পষ্টভাবে এগুলো নিষিদ্ধ না হলেও অনেক সুন্নী মুসলমান এই ধারণাটিকে নিষেধ করেন। আবার অনেকে এটা নিয়ে তেমন কিছু মনে করেন না। শেষের দলটি এধরনের নিষেধাজ্ঞাকে প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন।
ফারিহা আজিজ বোলোভি তে মন্তব্য করেছেন:
দুনিয়া টিভি’র সঙ্গে কথা বলার সময় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী, রাজা পারভেজ আশরাফ বলেন ফেসবুক সরকারের অনুরোধে ধর্মদ্রোহী বিষযবস্তু মুছে ফেলার অনুরোধ মেনে নিলেও টুইটার সেটা প্রত্যাখ্যান করে। ইয়াসিনের তথ্য মতে পিটিএ শুধু আদেশটি আইএসপিগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেয়, তবে ওয়েবসাইটগুলো কতক্ষণ বন্ধ ছিল সেটা তাদের জানা নেই।
এছাড়াও বাইটসফরঅল কথা বলেছেন রাজা পারভেজ আশরাফের টুইটারে ধর্মদ্রোহী বিষযবস্তু অবরোধের আদেশ বিষয়ে:
গতরাতে নবনিযুক্ত তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ধর্মদ্রোহী বিষযবস্তু সম্পর্কে তার উদ্বেগ প্রকাশ করে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় হুমকি দেন যে সরকারী আদেশ অমান্য করলে টুইটারকে শীঘ্রই নিষিদ্ধ করা হবে। এই বিবৃতিটি দেয়ার আধাঘন্টার মধ্যে মধ্যরাতের পর দেশের সব ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের প্রতি একটি সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয় এবং পাকিস্তানী সাইবার স্পেস থেকে আজ সকাল ১০টায় টুইটার উধাও হতে শুরু করে।
ডন.কম উদ্ধৃতি দিয়েছে যে পিটিএ-র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেছেন যে তারা বিষয়বস্তুটি মুছে ফেলার ব্যাপারে টুইটারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন:
আমরা গতরাত পর্যন্ত তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছি কিন্তু তারা উপাদানটি সরিয়ে নিতে সম্মত হয়নি। সেকারণেই আমাদের এটা অবরোধ করতে হয়েছে
রাত প্রায় ১০টার দিকে আনুমানিকভাবে নয় ঘন্টা পরে হঠাৎ করে মনে হতে শুরু করে যে অবরোধ উঠে গিয়েছে। টুইটার অবরোধ তুলে ফেলার দাবি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রেহমান মালিকের টুইট থেকে এটা বোঝা যায়:
@সিনরেহমানমালিক: প্রিয় সবাই হ্যাঁ আমিই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং জানিয়েছি জনগণ এটা নিয়ে কেমন বোধ করছে। প্রধানমন্ত্রী আবার টুইটার খুলে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। আমি এটা নিয়ে রাজা পারভেজের সঙ্গেও কথা বলেছি।
ইন্টারনেট অবরোধ শুরুর রিপোর্ট দিয়ে প্রো-পাকিস্তানী বলেছেন:
তবে আমাদের সূত্র অনুসারে ঘটনাটি পাকিস্তানের জন্যে বিশেষ করে বিদেশী মিডিয়াতে বদনাম কামানোর আগেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা জিলানীর কন্যা ফিজা বাতুল জিলানীও প্রধানমন্ত্রীর কাছে টুইটার সংযোগ পুনরুদ্ধারের দাবি করেন।
@ফিজাবাতুলজিলানী: প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীকে পাকিস্তানে টুইটার পরিষেবা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার আদেশ দিয়েছেন
@ফিজাবাতুলজিলানী: @আবিদবেলি- তিনি আদেশ দেওয়ার সময় আমি তার সাথে ছিলাম এবং আমি পাকিস্তানে বসে টুইট করেছি। তাই নিশ্চিত করার জন্যে সেটাই কী যথেষ্ট নয়:)
নেটনাগরিকরা আশংকা করছেন যে পিটিএ’র ইউআরএল-পরিশোধন পরিষেবার সফল পরীক্ষার এই ঘটনাটি ভবিষ্যতে বাক স্বাধীনতার জন্যে হুমকি পারে।