ইথিওপিয়াঃ ইথিওপিয়ার উপর জি৮ সম্মেলনের পাদপ্রদীপ

নেট নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে জি৮ সম্মেলনের ব্যাপারে ইথিওপিয়ার স্বাধীন মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেলেস জেনাওই এবং আফ্রিকার অন্য তিন রাষ্ট্রপ্রধানের অংশগ্রহণের ব্যাপারে আশা করা হচ্ছে।

যাহোক, ইথিওপিয়ার দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মিডিয়ার ক্রমবর্ধনশীল সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। যখন রাষ্ট্রীয় মাধ্যম ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নেটনাগরিকদের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কথা বলাকে তুলে ধরছে। জি৮ সম্মেলনে আফ্রিকার খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কর্মশালা ২০১২ এর ১৮-১৯ মে মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে হবে।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) মত অনেক মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সাথে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছে

৩৮তম জি৮ সম্মেলনকে সুযোগের একটি জানালা বলে উলেখ করে, সিপিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোয়েল সিমন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন:

প্রিয় প্রেসিডেন্ট ওবামাঃ
যেহেতু আপনি জি-৮ সম্মেলনের সঞ্চালক এবং আফ্রিকার নেতৃবৃন্দের সাথে খাদ্য উৎপাদনে নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন, সেহেতু আমরা কৃষি চ্যালেঞ্জ এবং দুর্ভিক্ষকে সনাক্ত ও আর্থিক সহায়তার জন্য এবং খাদ্য সংকটের সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুবিধা প্রদানের জন্য একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার কথা বিবেচনার জন্য আমরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছি।

জনাব প্রেসিডেন্ট, আমরা গভীরভাবে চিন্তিত যে অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতার উপর ইথিওপিয়ার দমননীতি দেশটির আপেক্ষিক স্থিতির প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার জন্য ঝুঁকি পূর্ণ। ২০১১ সাল থেকে, ইথিওপিয়ার সরকার সহিংসতামূলক সন্ত্রাসবাদের আবরণে, ১১ স্বাধীন সাংবাদিক যার মধ্যে গণতন্ত্রের সংগ্রাম বিষয়ে লেখার জন্য সম্ভাব্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগী ইস্কিন্দার নেগা রয়েছেন, তাদের উপর সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনে। এই নিয়ম-নীতিগুলো খাদ্য নিরাপত্তাসহ অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়ের উপর প্রতিবেদনে বাঁধা দিচ্ছে।

শারলেইন হান্টার-গোল্ট আশা করেন যে ইথিওপিয়ায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি এই সম্মেলন চলাকালীন সময়ে আসবেঃ

আমার জন্য এখন ইথিওপিয়ায় ফিরে যাওয়ার সময় এবং প্রধানমন্ত্রীকে এখনো সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে বোঝাতে হবে। এবং হতে পারে, এর মধ্যে, যখন প্রধানমন্ত্রী জেনাওই ১৯ মে, ক্যাম্প ডেভিডে জি-৮ সম্মেলন খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে যোগদান করবেন, হয়তো আমেরিকান কর্তৃপক্ষও একটি গণতন্ত্রে শুধু কূটনীতিক সম্পর্ক নয়, বাকস্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তাও অনুধাবন করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কর্মী আলেমায়েহু জি. মারিয়াম প্রশ্ন করেন, “একনায়কদের যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খাদ্য সাহায্য ব্যবহার করে, তাদেরকে সাহায্য করাটা কি আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যাভাব পূরণ করতে পারবে?”:

১৯ মে, প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং জি-৮ নেতৃবৃন্দকে কিছু কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবেঃ ক্ষমতাশালী দেশগুলো থেকে সীমাহীন খাদ্য ত্রাণ দেয়ার মূল অর্থ কি? যে দেশের লাখ লাখ হেক্টর উর্বর ভূমি আছে এবং ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্য সংকটের সময় যে দেশ থেকে ত্রাণ দেয়া হয়, সে দেশকে কেন ক্রমাগত সাহায্য দেয়া উচিত? এই বিশ্বের কেন সে দেশকে খাদ্য ত্রাণ সাহায্য দেয়া উচিত যে দেশের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী বিরোধী দলকে শেষ করতে, জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ভেঙে ফেলতে ত্রাণকে অস্ত্রে পরিণত করে। একনায়কদের যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খাদ্য সাহায্য ব্যবহার করে, তাদেরকে সাহায্য করাটা কি আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যাভাব পূরণ করতে পারবে?

এন্ডালক ইথিওপিয়ায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে অনলাইন মন্তব্যগুলোর সারমর্ম তুলে ধরেছেন:

এই কয়েক সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই প্রসঙ্গে বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও পাঠকদের মধ্যে যারা ইথিওপিয়ায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অংশ নিচ্ছেন, তাদের মন্তব্য সংগৃহীত। আপনিও আমার ব্লগে আপনার নিজস্ব মতামত লিখতে পারেন অথবা এ ব্যাপারে অন্য কোথাও থেকে আপনার মনোভাব ব্যক্ত করতে পারেন।

ডায়াজপোরাতে কিছু ইথিওপিয়ান প্রধানমন্ত্রী মেলেস জানাওইর আমন্ত্রণ বাতিল করার জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে তর্কাতর্কি পর্যন্ত চলে গেছে। নিজেদেরকে ইথিওপিয়ান ন্যাশনাল ট্রানজিশন কাউন্সিল হিসেবে পরিচয়দানকারী একদল ইথিওপিয়ান তাদের ফেসবুক পেইজে ক্যাম্প ডেভিডে প্রধানমন্ত্রী মেলেস জানাওইকে আটক করার আহ্বান জানিয়ে অনুচ্ছেদ পাঠিয়েছেঃ

যেসব ইথিওপিয়ান তাদের দেশকে ভালোবাসেন এবং এসে তার মুখোমুখি হতে চান, তারা ক্রোধ ও ঘৃণা প্রদর্শন করুন, এবং উচ্চস্বরে ও পরিষ্কারভাবে শুনুন যে তাকে আমন্ত্রণ জানানোটা অনৈতিক এবং অগ্রহণযোগ্য এবং তাকে কখনোই দেশে ও বিদেশে তার দ্বারা নিপীড়িত ও ভুক্তভোগী লাখ লাখ মানুষের শ্রদ্ধাভাজন হয়ে আমেরিকান মাটি স্পর্শ করতে দেয়া উচিত নয়। এটি প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতি অনেক ইথিওপিয়ানদের পাশে দাঁড়ানোর একটি আহ্বান যারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ওবামা আপনার নির্বাচনে আমরা আপনার অনুগামী হয়েছি আর এখন আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আপনি কি করেন সেটাই আপনার দেখানোর পালা।

যাহোক, ড্যানিয়েল বারহেন মনে করেন যে জেনাওইর অংশ নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেখান যে, জেনাওই ২০০৫ সাল থেকে জি-৮ বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

*বি.দ্রঃ ইওয়াইওইউটিএইচএম ফেসবুক গ্রুপের সৌজন্যে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .