ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলায় বর্তমানে কুদানকুলাম পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্রের (কেকেএনপিপি) নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্রের মতো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশংকা করছেন সেখানকার মানুষরা। প্রতিবাদকারীরা আশংকা করছেন, ভূমিকম্পের ফলে ভারত মহাসাগরে সুনামির সৃষ্টি হলে গত বছরে জাপানে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়ায় যে ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেছিল, এখানেও তেমন ঘটনা ঘটতে পারে।
পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয় এক দশক আগে। আশা করা হচ্ছে কেকেএনপিপি খুব শিগগিরই উত্পাদনে যাবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিপল’স মুভমেন্ট এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার এনার্জি’র (পিএমএএনই) এস পি উদয়কুমার আন্দোলনকারী এবং স্থানীয় জনগণ কেন চায় না বিদ্যুত্ কেন্দ্র চালু হোক, তার তেরটি কারণ লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন:
কেকেএনপিপি’র ৩০ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ১০ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করে যা এইআরবি’র (অ্যাটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ড) আরোপিত শর্তের চেয়ে অনেক বেশি। তাই কুদানকুলামে কোনো পরমাণু দূর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে মানুষজনকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সরানো সম্ভব হবে না।

বর্তমানে কুদানকুলাম পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র বিরোধী পোস্টার। ক্রাক্টিভিস্টের সৌজন্যে অনুমতি নিয়ে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবাদ এবং গ্রেফতার
আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারি নির্যাতন আলোকপাত করে ক্রাক্টিভিস্ট-এর সমালোচনা:
১০.০৯.২০১১ থেকে ১৩.১২.২০১১ তারিখের মধ্যে পুলিশ ৫৫ হাজার ৭ শত ৯৫ জন লোকের বিরুদ্ধে ১০৭টি এফআইআর (তদন্ত প্রতিবেদন) দাখিল করে এবং ‘অন্যদের’ যার মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ জন আছেন, যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
দুই গিগাওয়াট (১ গিগাওয়াট= ১০০০ মেগাওয়াট) রিঅ্যাক্টরের একটির কাজ পুনরায় শুরুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গেলে ২০১২ সালের মার্চ মাসে পুলিশ আনুমানিক ২০০ প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় সরকার প্রজেক্টটির কাজ পুনরায় শুরু করার একদিন পরে এ ঘটনা ঘটে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে কেকেএনপিপি-এর বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের আটক করায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল হতাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। যদিও পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রতিবাদে সেখানে র্যালি এবং প্রতিবাদ হচ্ছে।
এই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কুদানকুলাম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পিপল’স মুভমেন্ট এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার এনার্জি (পিএমএএনই) সম্প্রতি তিনটি প্রচারণা (ক্যাম্পেইন) শুরু করেছে। ক্রাক্টিভিস্ট জানায়:
গ্রামের লোক যারা পরমাণু কেন্দ্রে বিরুদ্ধে তাদের স্বাক্ষর সংগ্রহ, দেশব্যাপী ‘রেসপেক্ট ইন্ডিয়া’ প্রচারণা চলার সময়ে প্রতিবেশি তিনটি জেলার ৬০টি গ্রামে ভোটার আইডি কার্ড সমর্পণ করা।
কেকেএনপিপি’র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিকে মূল্যায়ন না করায় ইস্যু নিয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণে মে মাসের ৯ তারিখে তামিলনাডুর ৯টি গ্রামের ২৩ হাজার মানুষ তাদের ভোটার আইডি কার্ড সমর্পণ করেন। সরকার এটাকে সহজভাবে নেয় নি। ক্রাক্টিভিস্ট জানায়, ১ হাজার পুলিশ আইদিনথাকারাই গ্রামের কাছে অভিযান চালায়।
জেলা কর্তৃপক্ষ কুদানকুলাম এলাকা এবং তার আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি করায়, পিপল’স মুভমেন্ট এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার এনার্জি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত ১০ মে ২০১২ তারিখে আইদিনথাকারাই গ্রামের প্রোগ্রাম বন্ধ ঘোষণা করে।
যাই হোক ৯ হাজারের মতো মানুষ অংশ নিলেও এদের মধ্যে শ’খানেক অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন করছেন। অনশন ধর্মঘট গত মাস থেকে চলছে। কুদানকুলামে নারী অনশন ধর্মঘট করছে, গ্রামের মানুষরা আতংক নিয়ে বসবাস করছে এমন কিছু ছবি ডায়ানিউক/আম জনতা পোস্ট করেছে।
তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী মিস জয়ললিতা কথা দিয়েছেন যে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি খুব দ্রুত চালু হবে। ভারতের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কুদানকুলামের রিঅ্যাক্টরটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ’। সত্যিকারভাবেই এটা নিরাপদ কি না সেটা নিয়ে ডায়ানিউক-এ অনুজ ওয়াংখেডে ভারতের আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান ড. এম আর শ্রীনিবাসনকে বিতর্কের আহবান জানিয়েছেন।
সরকার তাদের দাবি মেনে নিলে কুদানকুলাম বিরোধীরা তাদের আন্দোলন তুলে নেবে বলে জানিয়েছে।