- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারত-পাকিস্তান মিসাইল উৎক্ষেপণ: খেলার পরিবর্তন নাকি শুধু পাঁয়তারা?

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ভারত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি

ভারত ১৯শে এপ্রিল, ২০১২ তারিখে এর অগ্নি ভি [1] আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র [2] (আইসিবিএম) সফলভাবে পরীক্ষামূলক-নিক্ষেপ করেছে [3]। ৫,০০০ কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি ভি ভারতের মিসাইল সক্ষমতাকে ক্রমবর্ধমানভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চীনের কাছাকাছি জায়গায় নিয়ে আসছে। পরের সপ্তাহে পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম মিসাইল শাহীন ১-এ [4]-এর  সফল পরীক্ষামূলক-উৎক্ষেপন করেছে [5]

পিঠাপিঠি এসব ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সামাজিক ও মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার এবং মন্তব্য পেয়েছে। বিশেষ করে, ক্রমশঃ তুঙ্গে উঠা দক্ষিণ এশিয়ার অস্ত্র-প্রতিযোগিতা এবং অঞ্চলটির সামগ্রিক নিরাপত্তার উপর এর প্রভাব সম্পর্কে নেটনাগরিকরা অনলাইনে জীবন্ত আলোচনায় লিপ্ত হয়েছে।

ভারত এবং পাকিস্তান জুড়ে অনেক নেটনাগরিক জাতীয়তাবাদী জোশ নিয়ে নিজ দেশের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সম্পর্কে বাগাড়ম্বরে জড়িয়ে পড়লেও, পাকিস্তানী ব্লগমণ্ডলে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যের কিছু কিছু কঠোর সমালোচনা হয়েছে। এটিকে “দ্বৈতমান” আখ্যায়িত করে লাহোরভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াসমিন আলী পাকপটপুরি২ ব্লগে লিখেছেন [6]::

The Agni V missile being launched off the coast of Odhisa, India, on 19th April, 2022. Image courtesy Indian Defence Research and Development Organisation (DRDO) [7]

ভারতের উড়িষ্যা উপকূল থেকে ১৯শে এপ্রিল, ২০১২ তারিখে উৎক্ষিপ্ত অগ্নি ভি ক্ষেপণাস্ত্র। ছবির সৌজন্যে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)

এখানে অঞ্চলটির মধ্যে একটি দেশকে সমর্থনের অথবা চীনের একটি প্রতিবন্ধক হিসাবে আচরণ করার প্রয়োজন। নিশ্চিত পছন্দটি হলো: ভারত। আঞ্চলিক কর্তৃত্বের এই খেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানে যে বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছে সেটি হলো আপনি বোতল থেকে দৈত্যটিকে বের করার পর এটি কিন্তু বোতলে ফিরে যেতে অস্বীকার করবে। তার বের হওয়ার মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার পর, একদিন এটি তার প্রভুর উপর চড়াও হবে।

তবে নেটনাগরিকদের একটি অংশ মনে করে যে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো ভারত, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে না। জয়দীপ প্রভূ তার চতুরঙ্গ ব্লগে উল্লেখ করেছেন যে ভারতের নীতি ‘ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবন্ধকতা’ অর্জন এবং একটি অস্ত্র-প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা নয় – যা মিডিয়ার একটি অংশে ঢিলেঢালাভাবে আলোচিত হচ্ছে।

তিনি মন্তব্য করেছেন [8]:

চীন-নির্দিষ্ট অগ্নি ভি উৎক্ষেপণ চীন এবং ভারত তথা ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যেকার অস্ত্র-প্রতিযোগিতা সম্পর্কে অনেক কথাবার্তার সুত্রপাত ঘটিয়েছে। চীনা গণমাধ্যম (এবং সেই সঙ্গে সরকার) পরীক্ষাটিকে ব্যতিক্রমভাবে নিয়ে একে ভারতের মিসাইল মোহ [9] তকমা দিয়ে রুঢ় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে… তবে ভারত তার পুরোনো মাড [এমইউডি] (পারস্পরিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ক্ষতি) নীতি  পরিত্যাগ না করায় বিশ্লেষক বৃন্দ এবং বেইজিং আগেভাগেই শুরু করে ফেলেছে।

রোলান সান জুয়ান ব্লগে এস. রাজারত্নম আন্তর্জাতিক পাঠের স্কুলের (আরএসআইএস) দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচীর একজন সিনিয়র ফেলো এবং সমম্বয়কারী রাজেশ বাসরুর যুক্তি দেখিয়ে বলেন যে [10] অগ্নি ভি উৎক্ষেপণ হলো “নিষ্ফল” কারণ এটি ভারতের “চীনের মুখোমুখি ভয়-দেখানো খেলার পরিবর্তন ঘটাবে না।

খ্রিষ্টীয় বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণে [দি ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর] স্কট বল্ডাউফ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘রীতিমাফিক আগ্রাসন’ সংঘটন শৃংখলের উদাহরণ দিয়ে বলেন এটি প্রকৃত নিরাপত্তা উদ্বেগের চেয়ে বরং স্বভাবসিদ্ধ পাঁয়তারা মাত্র, বিশেষতঃ বর্তমানে যখন দেশ দু’টি আরো ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

তিনি লিখেছেন [11]:

এই পরীক্ষাগুলো এই মাসের প্রথমদিকে দিল্লিতে দুই দেশের বাণিজ্যিক বন্ধন এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে কতগুলো অসাধারণ বৈঠককে অনুসরণ করেছিল মাত্র। আগেকার কোন সময়ে হয়তো এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলোকে প্রতিবন্ধকতা মনে করা হলেও এখন তারা যেকোন ধরনের রাজনৈতিক আলোচনামুক্ত, সৌর্য্যের প্রদর্শনী হিসেবে প্রতিভাত।

শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের সামাজিক মিডিয়াতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা উদ্বেগ অভিব্যক্ত হয়নি।

ISN logo [12]বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিষয় সম্পর্কে নাগরিক কণ্ঠস্বর অন্বেষণের অংশ হিসাবে এই পোস্ট এবং এর স্প্যানিশ, আরবি এবং ফরাসি অনুবাদের দ্বায়িত্ব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (আইএসএন) এর। এ সম্পর্কিত আরো গল্পের জন্যে আইএসএন ব্লগ [12] দেখুন।