- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাংলাদেশঃ নাগরিক কণ্ঠ, সরকারি সেবার নজরদারীতে নিয়োজিত এক নাগরিক পর্যবেক্ষক

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, উন্নয়ন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, সরকার, ৭০০ কোটি কার্যক্রম

উন্নয়নশীল জাতির মাঝে যখন ইন্টারনেট সংযোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, এই বাস্তবতায় সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং সচেতনতা তৈরীতে প্রযুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের মত একটি রাষ্ট্রে নাগরিকদের ইন্টারনেটে প্রবেশের সুযোগ সামান্য, তবে তথ্যপ্রযুক্তি [1] ব্যবহার করে কোন সামাজিক সমস্যা সমাধানের মত এক প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ বেশ প্রতিশ্রুতিশীল।

নাগরিক কণ্ঠ [2] (নাগরিককন্ঠ.অর্গ) এ রকমই এক প্রকল্প, যা কিনা পপুলেশন সার্ভিস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার [3]-এর (পিএসটিসি) মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছে, বাংলাদেশী নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য। এই প্লাটফর্ম বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভাষায় কাজ করে, এই প্লাটফর্মে যাতে সকল প্রকার ব্যবহারকারী এবং সকল প্রকার প্রযুক্তি কাজ করে তার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে (সকল প্রকার মোবাইল বাংলা ফন্ট এখনো সহজলভ্য নয়)।

বাংলাদেশ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি তাদের নাগরিক সনদে, সেবা প্রদানের বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে কাজের মানের মূল্যায়নের জন্য নথিভুক্ত [4] ফিডব্যাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Citizens Voice [5]

নাগরিকদের কণ্ঠ – www.nagorikkontho.org/

নাগরিক কণ্ঠ বিশ্বাস করে যে এই বিষয়টি এই সমস্ত কাজের মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং সাধারণ নাগরিক ও সরকারি কর্তৃপক্ষের মাঝে এক যোগসূত্র স্থাপন করবে:

“রাষ্ট্রীয় নাগরিক সনদে যে অধিকার লেখা, যদি একজন সাধারণ নাগরিক সে বিষয়ে সচেতন হয়, তাহলে তারা চাহিদা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মদক্ষতার মানের বিষয়ে উপলব্ধি করতে পারবে। আর এর মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে এবং সুশীল সমাজ এবং সুনিদিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারবে। এই পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, নাগরিক সুবিধাদি এবং তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে আরো সাহায্য করবে। ”

A stack of bricks that shouldn't be there [2]

গাড়ি পার্কিং-এর জায়গায় একটি ইটের স্তুপ, যা সেখানে হবার কথা নয়, নাগরিক কণ্ঠ থেকে নেওয়া।

উশাহিদি প্লাটফর্মের উপর ভিত্তি করে এই পোর্টাল নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ এখানে রাখা আছে যা সরকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ অনিয়মসমূহের কথা উল্লেখ করছে এবং প্রচার মাধ্যমগুলো এই সমস্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য এখানকার সংবাদের উদ্ধৃতি প্রদান করতে পারে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে পঞ্চগড় মহিলা কলেজ বিষয়ক সংবাদ [6]। সংবাদ পাওয়া গিয়েছিল যে এই কলেজটি ছাত্রী ভর্তির জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ফি নিচ্ছিল।

যখন নাগরিক কণ্ঠ এই ঘটনার উপর একটি সংবাদ প্রদান করে, তখন বিষয়টি প্রচার মাধ্যমের নজরে আসে এবং শিক্ষা বোর্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভর্তি ফি নির্ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করে। কি ভাবে ডিজিটাল সংবাদ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যার মধ্যে দিয়ে কোন এলাকার বিশেষ ঘটনার উপর প্রভাব তৈরী করা সম্ভব, এটি তার এক অন্যতম উদাহরণ। সাধারণ মানুষ যাতে এই সমস্ত সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, সেই জন্য এসএমএস, ইমেইল অথবা ওয়েবের মাধ্যমে এখানে সংবাদ প্রদান করা সম্ভব।

এই সাইটের উপরের দিকে একগাদা প্রশ্নের একটি তালিকা রয়েছে, যেগুলো সাধারণ সেবা পাওয়ার বিষয়ে- যেমন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, অবৈতনিক শিক্ষা, এবং এ রকম। নাগরিক কণ্ঠ বলে “ যদি এই সেবাসমূহ না পাওয়া যায়, তাহলে দয়া করে সংবাদ পাঠান। এখানে ভিডিও, ছবি অথবা ব্লগ পোস্ট–এর আকারেও সংবাদ পাঠানো যাবে। ওয়েব সাইটে রাখা ইউটিউবের মা'দিয়ান-এর একটি ভিডিওতে রয়েছে, যেটিতে ঢাকা-বান্দরবানের ব্যস্ত মহাসড়কে বাসচলাচল এবং কিভাবে আগে পৌঁছানোর জন্য বাসের চালকরা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে, সেই দৃশ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

বান্দরবান থেকে ঢাকায় ফিরে যাবার জন্য আমরা একটা বাসে উঠলাম। যতদুর মনে পড়ে তারিখটা ছিল ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১। গাড়িতে উঠার সময় আমি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, বাংলাদেশের মহাসড়কে চালকদের গাড়ি চালনায় কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা, বিশেষ করে যখন নিরাপদ সড়ক নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম, এই সমস্ত চালকেরা আসলে উন্মাদ। রাস্তায় যথেষ্ট ট্রাফ্রিক সাইন ছিল, তবে আমার সন্দেহ যে এই সমস্ত বাস চালকরা মনে করে যে এগুলো কেবল রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রাখা।

এই ভাবে নাগরিক কণ্ঠ প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর মধ্যে এক গণতান্ত্রিক স্থান তৈরীর চেষ্টা করছে।