শ্রীলংকা: বৌদ্ধভিক্ষুরা একটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলতে চায়

শ্রীলংকা একটি বহু ধর্ম এবং বহু সংস্কৃতি ভিত্তিক সমাজ হলেও সাম্প্রতিক কয়েকটি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ঘটনার কারণে ব্লগমণ্ডল এই ব্যাপারটি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েছে। গত শুক্রবারে প্রায় ২,০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং স্থানীয় জনগণ দাম্বুলা শহরে বৌদ্ধদের পবিত্র হিসেবে চিহ্নিত একটি এলাকায় একটি হিন্দু মন্দিরসহ একটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার দাবিতে একটি সহিংস বিক্ষোভ করেছে।

পুলিশ মসজিদটি খালি করে দিলে এখানকার শুক্রবারের জুম্মার নামাজটি বাতিল হয়ে যায়। স্থানীয় মুসলমানদের দাবি মসজিদটি সেখানে ৫০ বছর ধরে রয়েছে।

রাশিদ রিজা’র বক্তব্য অনুসারে:

প্রতিবেদনটি থেকে জানা গিয়েছে যে আগের দিন রাতে ছূঁড়ে মারা পেট্রল বোমাতে মসজিদের সামান্যই ক্ষতি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। একদল জাতিবিদ্বেষী সিংহলী ব্যক্তি মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে উস্কানি দিয়েছিল, যাদের অধিকাংশই দুষ্কৃতিকারী শ্রেণীর। এধরনের কাজ চিহ্নিত কোন আদর্শের চেয়ে বেশি হৈচৈ এবং মনোযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা এই কাজে প্ররোচিত হয়েছিল।

শ্রীলংকার কলম্বোর একটি মসজিদ। ছবি, এঞ্জেলো সামারাবিক্রেমা। কপিস্বত্ত্ব ডেমোটিক্স

গ্রাউন্ডভিউজ মসজিদের চুক্তিটি  পোস্ট করে জিজ্ঞেস করে কিভাবে এই স্থাপনাটি বেআইনী হতে পারে। সরকার জনগণের দাবির কাছে নত হয়ে মসজিদটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিলে  বিতর্কটি আরো প্রসারিত হয়। গ্রাউন্ডভিউজআরো প্রকাশ করে:

তার মন্দিরের কাছাকাছি একটি মসজিদ এবং কোভিলের উপস্থিতি নিয়ে দাম্বালুতে চলমান উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের অন্যতম একজন হলেন রানগিরি দাম্বালু অধ্যায়ের মহানায়েকা ইনামালুয়ে সুমঙ্গলা থেরো। সম্ভবতঃ তার প্ররোচিত সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসাধারণের চেঁচামেচির কারণেই তিনি বিবিসিকে বলেছেন যে মসজিদের দিকে কাপড় খুলে নিজের দেহ প্রদর্শন করা একজন ভিক্ষুসহ সহিংসতায় জড়িত সন্ন্যাসীদেরকে দেখানো টিভি ফুটেজটি বানোয়াট।

তবে সাক্ষ্য প্রমাণ প্রদর্শন করছে অন্যকিছু। বেসরকারী রেডিও স্টেশন রানগিরি রেডিও’র মহাপরিচালক হলেন ইনামালুয়ে সুমঙ্গলা থেরো এবং এই রানগিরি রেডিও’র ওয়েবসাইটের হোমপেজ এবং ফেসবুক পৃষ্ঠায় নিচের ভিডিওটি রয়েছে যাতে উগ্র জনতার সবচেয়ে হিংস্র সময়টি প্রদর্শন করা হয়েছে:

শ্রীলংকার ডাক্তার মন্তব্য করেছেন:

দাম্বুলার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ২০.৪.২০১২ তারিখে নিজেরা যেভাবে আচরণ করেছে তা দিয়ে তারা সারাবিশ্বের বৌদ্ধদের বিব্রত করেছে

দাম্বুলা মসজিদ আক্রমণটিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম-বৌদ্ধ বন্ধনের সাক্ষী দেশটিতে বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে হবে যা শুধু এধরনের কয়েকটি ঘটনার কারণে ভেঙ্গে যাবে না। মুসলমান সম্প্রদায় থেকে এই টুইটটি সেই চিন্তাকেই সমর্থন করে:

@মুসলিমএলকে: আমাদের #শ্রীলংকার #মুসলমানদের দাম্বুলার এই ঘটনাটিকে সাংঘর্ষিক ভাবে না দেখে বরং একটি বিচক্ষণ, আইনের সীমার মধ্যে থেকে এবং দৃষ্টান্ত সৃষ্টির মতো করে দেখতে হবে, ইনশা’ল্লাহ।

একটি ব্লগপোস্টে সেরেন্ডিপিটি মনে করিয়ে দে্ন:

ধর্মীয় উগ্রবাদীরা প্রচার করলেও কিছু যায় আসে না – শ্রীলংকা একটি জাতি হিসেবে এককভাবেই থেরাভাদা বৌদ্ধ ধর্মটিকে রক্ষা করছে না অথবা একমাত্র বৌদ্ধ দেশ নয়। সংবিধান শুধু বলেছে যে “বৌদ্ধ ধর্মকে রক্ষা এবং পুষ্ট করতে হবে” এবং তার ব্যাখ্যা যদি ইচ্ছেমতো করা যায় তবে আমাদের সুপ্রিম কোর্টকে জিজ্ঞেস করতে হবে ঐ বক্তব্যের মানে কী।

সংবাদটিকে ব্যাপকভাবে কাভার করা ইন্ডি.কা মন্তব্য করেছে:

মুসলমানেরা শ্রীলংকান। তারা প্রতিবেশী এবং বন্ধু। অথচ আজ তারা একটি জাতিগত সংখ্যালঘু। অর্থনৈতিকভাবে উত্থানের এসময়ে অনেকেই তাদের সন্দেহের চোখে দেখছে।[..]

আসলে জনগণ, (আমাদের) এ্টা একটা ক্ষুদ্র দ্বীপ এবং আমাদের সবাইকে একসাথে বসবাস করতে হবে। সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব এবং ক্ষুদ্র বিরক্তি ভুলে যান। মুসলমানেরা (আমাদের) বন্ধু ও প্রতিবেশী এবং সেভাবেই তারা আচরণ প্রাপ্য..[..] ঘটনাটির ক্ষেত্রে যাই হোক না কেন এটার উপর জোর দেয়া খুবই গুরুত্বপুর্ণ যে শ্রীলংকার মুসলিম সম্প্রদায় শ্রীলংকারই একটি অংশ, শ্রীলংকার একটি সম্মানিত অংশ  এবং চূড়ান্তভাবে পরিবারেরই (অংশ)।

আমি দাম্বুলা-কাণ্ডের জন্যে দুঃখিত। আমি আশা করি আমরা এখনও মাথা ঠান্ডা রাখছি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .