মিশর: গ্রান্ড মুফতির কি জেরুজালেম যাওয়া ঠিক হয়েছে?

গত ১৮ই এপ্রিল মিশরীয় গ্র্যান্ড মুফতি ও ইসলামী বিশ্বের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের একজন আলী গম্মা প্রথমবারের মত জেরুজালেম পরিদর্শনে যান। এই ভ্রমণ ছিল বিতর্কিত, কারণ অনেকে এই ভ্রমণকে ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। ১৯৪৮ সালে আরব- ইজরায়েল যুদ্ধের সময় ইজরায়েল,জেরুজালেম শহরের পশ্চিম অংশ দখল করে নেয়, এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ছয়-দিনের যুদ্ধে দেশটি এর পূর্ব অংশ দখল করে নেয়া। আহারাম অনলাইন-এর সংবাদ অনুসারে মুসলিম ব্রাদারহুড নামক রাজনৈতিক দলের সহকারী মহাসচিব ওসামা ইয়াসিন এ পরিদর্শনকে ‘একটি পরিপূর্ণ বিপর্যয় ও ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে চলা জাতীয় যুদ্ধের প্রতি এক আঘাত” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মিশরের অনেকেই এই সফরের জন্যে গ্র্যান্ড মুফতির সমালোচনা করেছে। জেনোবিয়া এই বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, মিশরের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পটভূমির মানুষগুলো অবশেষে কোন একটি বিষয়ে একমত হয়েছে:

এই সফর সম্বন্ধে জানার কয়েক ঘন্টা পর মিশরীয় রাজনৈতিক মহলে যে শোরগোল শুরু হয়, আপনি তা আন্দাজ করতে পারেন। অবশেষে, জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও ইসলামপন্থীরা হঠাৎ করেই এমন একটি বিষয় খুঁজে পেয়েছে, যে বিষয়ে তারা একমত:

একই সাথে জেনোবিয়া রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যেমন, আবদেল মনেইম আবুল-ফতোহ [আরবী ভাষায়] এবং হামদিন সাবাহি [আরবী ভাষায়], সাথে আল-ওয়াসাত দলের সাংসদ এসসাম সুলতান-এর [আরবী ভাষায়] উদ্ধৃতি প্রদান করেন¸যারা সকলে আলী গম্মার সমালোচনা করেছে।

জেরুজালেম-এর আল-আকসা মসজিদে গ্রান্ড মুফতি। ছবি টুইটার ব্যবহারকারী @আলহাবিবআলির।

বেশ কিছু সমালোচক এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয় যে, ইজরায়েল থেকে ভিসা নেওয়াকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তা ইজরায়েলকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু গম্মা বলেন, আমি ইজরায়েলী ভিসায় সেখানে যাইনি। জর্ডানি কর্তৃপক্ষ এই যাত্রার সবকিছুর আয়োজন করেছিল।

জেইনোবিয়া বিশদ বর্ণনা করেন:

পূর্ব জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলো পরিদর্শনের জন্যে শেখ আলী গম্মা জর্ডানের রাজপরিবার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, যে পরিবার এখনো জেরুজালেমের ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত। (এখানে একটু তথ্য যোগ করা দরকার, যা ওই দিনের আগে আমার জানা ছিল না।) বাদশাহ আব্দুল্লাহ-এর চাচাতো ভাই এবং তার প্রধান ধর্মীয় উপদেষ্টা যুবরাজ গাজী বিন মুহাম্মাদ, এই যাত্রায় গ্রান্ড মুফতির সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। তারা মুঘরাবি সেতুর সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন, যা আল-আকসা মসজিদ চত্বরের পাশাপাশি গাজ্জালি সিটকে সংযুক্ত করে।

খালেদ এল-বারামাউই টুইট করছেন:

@EgyPress: حتى الان لم استطع ان افهم اسباب زيارة المفتى للقدس.. صحيح لم تكن بتاشيرة اسرائيلية.. بس لازم يكون لها منطق اهداف.. لم اكون راي حتى الان !!
@ইজিপ্রেস: এখন পর্যন্ত আমি মুফতির জেরুজালেম সফরের কারণ বুঝতে পারছি না…এটা সত্য যে তিনি ইজরায়েলী ভিসা না নিয়ে সেখানে গিয়েছেন, কিন্তু তারপরেও এই ধরণের পরিদর্শনের লক্ষ নির্ধারিত হওয়া উচিত…আমি এখনো পর্যন্ত এর কোন যুক্তি দাঁড় করাতে পারিনি।!!

মুফতির ইজরায়েলী ভিসা গ্রহণ করতে অস্বীকার করার ঘটনাকে তিউনিশীয় টুইটার ব্যবহারকারী তোউনশিয়াহোউরা পরিহাস করেছেন:

@tounsiahourra: وهنا يقولك مفتي مصر زار القدس دون تأشيرة إسرائيلية لكن تحت اشراف السلطات الأردنية . يعني اسرائيل تنحت وسلمت الأمور للأردن ,إنه لفتح عظيم
@তোউনশিয়াহোউরা : এবং এমন একদল লোক রয়েছে যার বলছে যে মিশরীয় মুফতি ইজরায়েলী ভিসা ছাড়াই জেরুজালেম পরিদর্শনে গেছে, আর এই পরিদর্শনের দায়িত্বে ছিল জর্ডান। তার মানে ইজরায়েলকে একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে এবং জর্ডানকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে; কি এক দারুণ অর্জন!

আবুল মাআলি ফায়েক এখনো এই পরিদর্শনকে ইসরাইল-এর প্রতি স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করছেন:

فحينما تعترف إحدى مؤسسات الدولة الرسمية بما يسمى بدولة إسرائيل فهذا يعنى أن مؤسسة الإفتاء فى مصر قد أعطت شيكا على بياض للصهاينة بأن دولة إسرائيل لها الحق فى اغتصاب واحتلال دولة فلسطين،هذا الموضوع لا يحب أن يترك دون محاسبة سياسية.
যখন রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তথাকথিত ইজরাইয়েল নামক রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদান করে, তখন তার অর্থ হল মিশরীয় ফতোয়া প্রদানকারীরা ইহুদিবাদকে একটি সাদা চেক প্রদান করল, যে ইজরায়েল-এর ফিলিস্তিনকে দখলে রাখার অধিকার রয়েছে। এটি এমন একটি বিষয় যা রাজনৈতিক জবাবদিহিতা ব্যতিরেকে ছেড়ে দেয়া যায় না।

অন্যদিকে স্বীকৃতির বিষয়ে আহমাদ এসসেইলির একটি যুক্তি রয়েছে:

@ahmadesseily: إعتراف إيه! همّ مستنيين إعترافنا؟ ماهم قاعدين في الأرض بقالهم 64 سنة! حيطلعوا يعني لمّا المفتي مايزورش القدس والمسيحيين مايحجّوش؟
@আহমাদএসসেইলি: কোন ধরনের স্বীকৃতির ব্যাপারে আপনি কথা বলছেন! তারা কি আমাদের স্বীকৃতির জন্যে অপেক্ষা করছে? তারা ইতোমধ্যেই ৬৪ বছর যাবত সেই ভূখণ্ডের উপর বসে আছে! যদি মুফতি জেরুজালেম পরিদর্শনে না যায় এবং মিসরীয় কপ্ট খ্রিস্টান-রা সেখানে না যায়, তাহলে কি তারা সেই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে?

এই ঘটনাটি পোপ ও আলেকজান্দ্রিয়ার চার্চের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পোপ তৃতীয় শেনুডার বিষয় সামনে তুলে আনে, যিনি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। যতদিন না এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, ততদিন পোপ মিসরীয় খ্রিস্টানদের জেরুজালেম পরিদর্শন না করার অনুরোধ জানান। আলী এলশাফেই, জনগণকে এই দুজনের অবস্থানের তুলনার আহ্বান জানান:

@Ali2awi: علل ما يلي و فيما لا يزيد عن حدود الادب: البابا شنودة رفض يروح القدس، و جه المفتي هو اللي راح
@আলি২আওয়ি: একটি মন্তব্য, একটি ভদ্র আচরণের মধ্যে দিয়েঃ পোপ শেনুডা জেরুজালেম-এ যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, অন্যদিকে মুফতি হচ্ছে তাদের একজন যিনি সেখানে গিয়েছেন।

নাওয়ারা নেজাম নামক ভদ্রমহিলা তার একটি টুইট-এ রসিকতা করেছেন [আরবি ভাষায়], মুফতি জেরুজালেমে যাবার জন্য পোপের মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলেন। রীম আল আসরির মতে, পোপ এর মৃত্যুর পর মিশরীয় কপ্ট খ্রিস্টানদের কিছু বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে:

@MeeMMaa: بمناسبة زيارة المفتي للقدس.. أصدقاء مسيحيين لأول مرة سافروا القدس السنة دي بعد وفاة البابا.. وبيقولوا العدد اللي سافر معاهم كبير
@@মিমমা: মুফতির জেরুজালেম পরিদর্শনের ব্যাপারে………আমার খ্রিস্টান বন্ধুদের অনেকে পোপের মৃত্যুর পর এই বছরই প্রথমবারের মত জেরুজালেম পরিদর্শনে গেল, এবং তারা বলেন যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক তাদের সাথে ভ্রমণ করেছে।

মাহমুদ হুসাইন টুইট করেছেন [আরবি ভাষা] যে মুসলিম ব্রাদারহুড এবং সালাফিগণ এইরকম একটা কিছুর অপেক্ষায় ছিল, যেহেতু তারা তাদের মধ্যে থেকে একজনকে মুফতির জায়গায় বসাতে চায়। ইসসান্দর এল আমারানিও ধারণা করছে যে তারা মুফতিকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানাবে:

তিনি হয়ত জানতেন যে ইসলামপন্থীদের দ্বারা-প্রভাবিত সংসদ, তার এই পরিদর্শনে সন্তুষ্ট হবে না, এবং এখন সালাফি এবং মুসলিম ব্রাদারহুড সাংসদরা সত্যিই সেখানে একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে এবং সম্ভবত পদচ্যুত করা হবে (প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতির এই বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে,অথবা এখন যা এসসিএএফ-এর হাতে)।

ইমাদ আরব [আরবী ভাষায়] এবং সামার আলী [আরবী ভাষায়] উভয়েই মুফতির বরখাস্তের আহ্বান জানিয়েছেন। মিশরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি কবি এবং লেখক মউরিদ এল-বারঘাউতি টুইট করেছেন:

@MouridBarghouti: بهدوء شديد: لو كان المفتي مؤمناً أن زيارة القدس أمر جيد فلماذا امتنع عن زيارتها منذ احتلالها؟ ولو كان جاهلاً بعواقبها فهولا يستحق منصبه
@@মউরিদবারঘাউতি: ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা যাক, যদি মুফতি বিশ্বাস করেন যে তার জেরুজালেম সফর একটি ভাল বিষয়, তাহলে কেন তিনি এটি দখল করার পর সেখানে সফরে যেতে অস্বীকার করেছিলেন? যদি তিনি তার এই সফরের পরিণতি সম্পর্কে অবগত না থাকেন, তাহলে তিনি তার পদ দাবি করার যোগ্য নন।

আল-হাবিব আলী আলগাফরি, একজন সুফি পণ্ডিত যিনি সম্প্রতি জেরুজালেমে পরিদর্শন করেন, এবং তিনি এই সফর ও আল-আকসা মসজিদে প্রার্থনা করার জন্য মুফতিকে অভিনন্দন জানান [আরবী ভাষায়]। সৌদি ইসলামী পণ্ডিত আব্দুলরাহমান আল-হারফি তাদের উভয়কেই আক্রমণ করেছেন :

@aalharfi: زيارة الجفري ثم علي جمعة لإسرائيل هل هو تنسيق جديد بين “الصوفية الامريكية” و “الصهيونية”؟
@আলহারফি: আলী গম্মার সফরের পর আল গাফরির ইজরায়েল সফর; এটি কি ‘আমেরিকান সুফিবাদ’ এবং ‘ইহুদিবাদের’ মধ্যে নতুন কোন সংযোজন?

মনমন সালাহ মন্তব্য করেছেন [আরবী ভাষায়] যে, একজন আসামিকে দেখতে যাওয়া সবসময়ই তার জন্য সহায়ক, কিন্তু জেলারের জন্যে তা নয়। ফিলিস্তানি ব্লগার হানাদি নামক ভদ্রমহিলা কয়েক মাস আগে এই সফর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করে লিখেছিলেন:

أدعو كل العرب والمسلمين الذين يحملون جوازات أميركية وبريطانية وأوروبية وغيرها من الجوازات التي لا تواجه مشاكل في دخول “إسرائيل”، أن يضعوا جوازاتهم في جيوبهم ويحزموا حقائبهم ويزورونا، أدعو المصريين والأردنيين إلى زيارتنا، أرجوكم لا تسموه تطبيعاً، أرجوكم، أنا وأنتم نكره اتفاقيات “السلام”، نعرف كلنا كذبة ووهم اتفاقية وادي عربة واتفاقية كامب ديفيد، لكن يا إخوان .. نحن نشتاق إليكم .. قاطعوا المنتجات الإسرائيلية.. قاطعوا الجامعات الإسرائيلية .. ولكن لا تقاطعونا.. نحن عرب مثلكم
আমি সকল মুসলমান, যারা মার্কিন, ব্রিটিশ,ইউরোপিয়ান অথবা অন্যান্য পাসপোর্ট ধারণ করে, যাদের পকেটে পাসপোর্ট নিয়ে “ইজরায়েলে” প্রবেশ করতে কোন সমস্যা নেই, তাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, যেন তারা তাদের ব্যাগ প্রস্তুত করে এবং আমাদের দেখতে আসে। আমি মিশর ও জর্ডানের নাগরিকদের আহবান জানাচ্ছি, আমাদের দেখতে আসার জন্যে। দয়া করে একে স্বাভাবিকীকরণ বলবেন না। অনুগ্রহপূর্বক! আপনি এবং আমি উভয়েই ‘শান্তি’ চুক্তি ঘৃণা করি এবং আমরা জানি তা একেবারে মিথ্যা এবং ওয়াদি আরাবা এবং ক্যাম্প ডেভিড শান্তিচুক্তির মত এক বিভ্রম, কিন্তু ভাই ও বোনেরা, আমরা আপনাদের অভাব অনুভব করি। ইজরায়েলি পণ্য বর্জন করুন, ইজরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় বর্জন করুন, কিন্তু আমাদের বর্জন করবেন না; আমরা আপনাদের মতই একজন আরব।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .